করোনায় প্রার্থনা

করোনাভাইরাসের উত্তাল তরঙ্গে ভাসছে যুক্তরাষ্ট্রের প্রায় ৩৫ কোটি মানুষ। যুক্তরাষ্ট্রের ১৪ হাজার ৪৪৫টি শহরের মধ্যে ক্যানসাস রাজ্যের উচিটা একটি শহর। এ শহরকে বাইবেল শহর (শতাধিক গির্জা) বলা হয়ে থাকে। রোববার যুক্তরাষ্ট্রে প্রার্থনার দিন ছিল। প্রতি রোববার পারিবারিক ঐতিহ্যে দাদা-দাদি, মা–বাবার হাত ধরে শত শত মানুষ গির্জায় যায়। কিন্তু করোনার প্রভাবে উপাসনালয়ে এখন সুনসান নীরবতা। শহরের রক রোডের একটি গির্জার সামনে এক বাবা ছোট্ট মেয়েকে নিয়ে প্রার্থনার আহ্বান জানাচ্ছেন। এ যেন স্রষ্টার কাছে সৃষ্টির জয়গান।

শান্ত–শুভ্র শহরটিকে বলা হয় পৃথিবীর উড়োজাহাজের রাজধানী। ছোট-বড় মিলিয়ে উড়োজাহাজ তৈরির অর্ধশতাধিক কারখানায় উৎপাদন এখন বন্ধ। শ্রমিকেরা এখন বাসায় বন্দী। মানুষের মনে এখন ভয়-আতঙ্ক তাড়া করে ফিরছে। আজ থেকে ক্যানসাস রাজ্যে মানুষ ঘরবন্দী থাকবেন। ক্যানসাস গভর্নর লুরা ক্যালি বলেন, যখন মানুষ মনে করে, কই, কিছু হচ্ছে না, তখনই শ্রেষ্ঠ সময় ঘরে ঢুকে যাওয়ার। যখন এসে যাবে ভাইরাস, তখন আর সময় থাকে না। অতএব ঘরে থাকুন, নিরাপদে থাকুন।

সবুজে সাজানো–গোছানো সারা আমেরিকার জনগণ এখন চাপা আতঙ্কে ভুগছে। কখন কার রাজ্যে হানা দেয় এ সর্বনাশা ভাইরাস।

সকালে ঘুম থেকে উঠলে ইন্টারনেটের পর্দায় ভেসে আসে মানুষ মরার খবর। সারা বিশ্বের বিস্ময় করোনার আঘাতে নিউইয়র্ক, নিউজার্সি, ক্যালিফোর্নিয়া, মিশিগান, ওয়াশিংটন, ম্যাসাচুসেটস, মিসিসিপি, ম্যানিসোটাসহ সবখানে লাশ আর লাশ। অপ্রস্তুত আমেরিকাবাসী প্রকৃতির এ বিরূপ দৃশ্য আগে দেখেননি। ৯/১১–এর চেয়েও ভয়াবহ বলে অনেকে বলছেন। শুধু নিউইয়র্কে এখন পর্যন্ত মৃত্যু মানুষের সংখ্যা ৩ হাজার ছাড়িয়েছে। একদিকে মানুষের মৃত্যুর মিছিল, অন্যদিকে বাঁচার আকুতি। এ যেন অবাক বিস্ময়ে তাকিয়ে রয় পৃথিবী!

বিশ্ব মোড়লখ্যাত আমেরিকায় মৃত্যু কোনোভাবে ঠেকছে না। কী এক বিস্ময়কর ভাইরাস! এ মহাতাণ্ডবে বিশ্বের শক্তিধর রাষ্ট্রগুলো একে অপরকে দোষারোপ করছে। এটি মানবসৃষ্ট নয়; প্রাকৃতিক-জৈবিক হামলা। এ নিয়ে ব্যাপক আলোচনা-গবেষণাও থেমে নেই।

আমেরিকার সাধারণ মানুষের মধ্যে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে দুই ধরনের ব্যাখ্যা পাওয়া যায়—এক ধরনের মানুষ রাষ্ট্রযন্ত্রকে দোষারোপ করছে, অপর পক্ষ মিডিয়ানির্ভর জনগণ যা শুনবে, তা–ই বিশ্বাস করে তা পালন করবে। এ অবস্থায় যুক্তরাষ্ট্রে প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় করোনাভাইরাসের উৎস নিয়ে কনসপ্রেসি থিওরি এখন সামনে এসেছে।

সম্প্রতি বিজ্ঞানের জার্নাল নেচার মেডিসিনে প্রথম প্রকাশিত অনুসন্ধানে জানা যায়, এটি কোনো পরীক্ষাগারে তৈরি বা উদ্দেশ্যমূলকভাবে ম্যানিপুলেটেড ভাইরাস নয়। এখন আবার নতুনভাবে মাতামাতি শুরু হয়েছে, সার্স-সিওভি-২ করোনাভাইরাস নিয়ে। কোভিড-১৯ যেমন বিশ্বজুড়ে লকডাউন, নিউমোনিয়া এবং ভয়ের রাজত্ব সৃষ্টি করেছে, ঠিক তেমনিভাবে সার্স-সিওভি-২ করোনা ভাইরাস কোথা থেকে এসেছে, তা নির্ধারণে বিজ্ঞানীদের দৌড়ঝাঁপ শুরু হয়েছে। তাঁরা বলছেন, এটি কোনো প্রাণী বা জলাশয়ের কাছ থেকে এসেছে কি না বা এটি কোনো ল্যাব থেকে তৈরি কি না, এর কোনো জবাব এখনো তৈরি হয়নি।