পদ্মায় লঞ্চডুবি

পদ্মা নদীতে সর্বশেষ লঞ্চ দুর্ঘটনাটি আবারও চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছে: লঞ্চ দুর্ঘটনা এড়ানো এবং দুর্ঘটনা ঘটে গেলে ডুবে যাওয়া লঞ্চ ও তার যাত্রীদের উদ্ধার করার ক্ষেত্রে আমাদের প্রাতিষ্ঠানিক ও কারিগরি সামর্থ্যে যেমন বিরাট ঘাটতি রয়েছে, তেমনি রয়েছে দায়িত্ববোধের মারাত্মক অভাব।
ডুবে যাওয়া লঞ্চটির অবস্থান তিন-চার দিনেও শনাক্ত করতে না পারা তারই প্রমাণ। উদ্ধার করা হয়েছে মাত্র ২১ যাত্রীর মৃতদেহ। কিন্তু ৮৫ যাত্রী ধারণক্ষমতাসম্পন্ন ওই লঞ্চটিতে যাত্রী ছিল প্রায় ৩০০। অর্থাৎ, অধিকাংশ যাত্রীসহ পুরো লঞ্চটি পদ্মা নদীর কোন অতল গর্ভে হারিয়ে গেল, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ তার কোনোই কূলকিনারা করতে পারছে না। কিন্তু এটা কোনো ভোজবাজি নয় যে লঞ্চটি গায়েব হয়ে যাবে; অন্তত সেটির অবস্থান শনাক্ত করা কারিগরি বিবেচনায় অবশ্যই সম্ভব।
ঘন ঘন লঞ্চ দুর্ঘটনায় প্রচুর মানুষের প্রাণহানি ঘটে, কিন্তু কোনো ঘটনায় দায়ী ব্যক্তিদের কোনো শাস্তি হয় না। তাই ত্রুটিপূর্ণ লঞ্চে ধারণক্ষমতার অতিরিক্ত যাত্রী বহনের প্রবণতা লাগামহীন হয়ে উঠেছে। লঞ্চ ডুবলে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়, কিন্তু তা নিছকই লোক দেখানো। গত প্রায় চার দশকে ৭২৭টি লঞ্চ দুর্ঘটনায় প্রায় ১০ হাজার মানুষের প্রাণহানি ঘটেছে। তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে প্রায় ৫০০। কিন্তু কোনো তদন্ত কমিটির সুপারিশ বাস্তবায়ন করা হয়েছে—এমন দৃষ্টান্ত নেই।
এবারের পিনাক-৬ নামের লঞ্চ দুর্ঘটনায়ও যথারীতি দুটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। আর বিআইডব্লিউটিএর যে ট্রাফিক ইন্সপেক্টরের দায়িত্ব পালনে অবহেলার কারণে লঞ্চটি ডুবেছে, তিনিই এ ঘটনায় বাদী হয়ে মামলা করেছেন! তদন্ত কমিটির তদন্ত শেষে কী ফল ফলতে পারে, তা অতীতের অভিজ্ঞতা থেকে উপলব্ধি করা মোটেও কঠিন নয়।
জবাবদিহির ঊর্ধ্বে এমন অদক্ষতা ও অব্যবস্থাপনা চলতে থাকলে কিছুদিন পর পর লঞ্চ দুর্ঘটনায় মানুষের প্রাণহানি চলতেই থাকবে। কিন্তু এভাবে আর চলতে দেওয়া যায় না।