সেরা চারের গল্প

লাখ টাকা করে পুরস্কার পেল আজওয়াদ আনজুম ইসলাম, মধুরিমা সাহা, আজমাঈল ইকতিদার ও আবদুল বাছিত মোল্লা
লাখ টাকা করে পুরস্কার পেল আজওয়াদ আনজুম ইসলাম, মধুরিমা সাহা, আজমাঈল ইকতিদার ও আবদুল বাছিত মোল্লা

বিজ্ঞানের খটমট দুনিয়ায় কি সাহিত্যের চর্চা হতে পারে? এই প্রশ্ন এত দিন যাঁদের মনে ছিল তাঁদের বলছি—সন্দেহটা একদম ঝেড়ে ফেলুন। কারণ, সাহিত্যের জগতেও যে বিজ্ঞানের পদচারণ হতে পারে, সেটা দেখিয়ে দিয়েছে মধুরিমা সাহা। কারণ, মধুরিমার কাছে বিজ্ঞান আর সাহিত্য নাকি অন্তরঙ্গ বন্ধুর মতো! সেটার প্রমাণও রেখেছে দ্বাদশ শ্রেণীর বিজ্ঞানে পড়ুয়া এই শিক্ষার্থী। প্রথমবারের মতো আয়োজিত জাতীয় পর্যায়ের সৃজনশীল মেধা অন্বেষণ প্রতিযোগিতায় সে ভাষা ও সাহিত্য বিভাগে হয়েছে দেশসেরা। জিতে নিয়েছে লাখ টাকা পুরস্কার। উচ্চমাধ্যমিক বিভাগে দেশসেরা খেতাব ও লাখ টাকা জিতেছে আরও তিন প্রতিযোগী। তারা হলো গণিত ও কম্পিউটার বিষয়ে আজওয়াদ আনজুম ইসলাম, দৈনন্দিন বিজ্ঞানে আজমাঈল ইকতিদার এবং বাংলাদেশ স্টাডিজে আবদুল বাছিত মোল্লা।দেশসেরা খেতাব জেতা তো আর চাট্টিখানি কথা নয়। এর জন্য তাদের অবশ্য লড়াই করতে হয়েছে সারা দেশের প্রতিযোগীদের সঙ্গে।প্রথমবারের মতো আয়োজিত এই প্রতিযোগিতায় সারা দেশ থেকে এক লাখের বেশি শিক্ষার্থী অংশ নেয়। ষষ্ঠ থেকে অষ্টম, নবম-দশম এবং একাদশ-দ্বাদশ এই তিনটি ক্যাটাগরিতে অনুষ্ঠিত হয় প্রতিযোগিতা। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের আয়োজনে প্রতিযোগিতার বিষয় হিসেবে ছিল ভাষা ও সাহিত্য, গণিত ও কম্পিউটার, দৈনন্দিন বিজ্ঞান এবং বাংলাদেশ স্টাডিজ। প্রতিটি বিষয় থেকে একজন করে সেরা নির্বাচন করা হয়। সৃজনশীল মেধা অন্বেষণ প্রতিযোগিতায় উপজেলা, জেলা ও বিভাগীয় ধাপ পেরিয়ে জাতীয় পর্যায়ে অংশ নেয় সাত বিভাগ ও ঢাকা মহানগরের ১২ জন করে মোট ৯৬ জন প্রতিযোগী। যেখানে জাতীয় পর্যায়ে তিনটি ক্যাটাগরিতে মোট বিজয়ী হয় ১২ জন শিক্ষার্থী। প্রতিযোগিতার প্রতিটি পর্যায়ে ৫০ নম্বরের লিখিত এবং মৌখিক বা ব্যবহারিক পরীক্ষা দিতে হয়েছে। ২৩ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিজয়ীদের হাতে বই, মেডেল এবং এক লাখ করে টাকা পুরস্কার হিসেবে তুলে দেন।উচ্চমাধ্যমিক অর্থাৎ একাদশ-দ্বাদশ ক্যাটাগরিতে বিজয়ী চার প্রতিযোগীকে নিয়েই আমাদের আজকের এই আয়োজন।সিলেট সরকারি এমসি কলেজের শিক্ষার্থী আজওয়াদ আনজুম ইসলাম। পড়ছে বিজ্ঞান বিভাগে দ্বাদশ শ্রেণীতে। গণিত তার প্রিয় বিষয়। বেশ কয়েকবার পুরস্কার পেয়েছে জাতীয় গণিত অলিম্পিয়াডে। অবসরটা কম্পিউটারেই কাটে। আজওয়াদ আনজুম বলে, ‘প্রতিযোগিতাটা যেহেতু প্রথমবার হলো, তাই অনেকটা ভয়ে ভয়ে অংশ নিই। প্রথমে তো ভাবিনি দেশসেরা হব। একটা করে রাউন্ড যায় আর বিশ্বাস বাড়তে থাকে। তবে সেরা হওয়ার পর থেকে সবার অভিনন্দন আর ভালোবাসা আমাকে মুগ্ধ করেছে। উচ্চশিক্ষার পর দেশের উন্নয়নে কাজ করতে চাই। বদলে দিতে চাই দেশটাকে।’

আনজুমের মতো একই স্বপ্ন চট্টগ্রামের সন্তান আজমাঈল ইকতিদারের। আজমাঈল চট্টগ্রাম কলেজে পড়ছে দ্বাদশ শ্রেণীতে, বিজ্ঞান বিভাগে। দৈনন্দিন বিজ্ঞান বিষয়ে একই ক্যাটাগরিতে সে হয়েছে দেশসেরা। আর তাই এখন নাকি তার স্বপ্নটাও বদলে গেছে। আজমাঈল বলেন, ‘আমাদের দেশ তো বিজ্ঞানে এখনো অনেক পিছিয়ে। এই গ্লানি আর বেশি দিন থাকবে না। আমরাই বদলে দেব দেশকে। বিজ্ঞানের শক্তি দিয়ে বিশ্বকে জয় করে আনব।’

বিজ্ঞানের শিক্ষার্থী হয়ে কীভাবে মধুরিমা হলো দেশসেরা ভাষা ও সাহিত্যে? উত্তরটা তার মুখেই শোনা যাক, ‘আমার মা অনেক বই পড়েন। ছোটবেলা থেকেই মাকে দেখে বাংলা ও ইংরেজি ভাষার বই পড়া শুরু। দ্বিতীয় শ্রেণী থেকে পড়ছি হ্যারি পটার। তবে আমার প্রিয় লেখক রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর—অনেক বই পড়েছি তাঁর। বিভূতিভূষণের পথের পাঁচালী পড়লে বারবার মুগ্ধ হই।’ সাহিত্য তার পড়তে ভালো লাগলেও পেশা হিসেবে বেছে নিতে চায় চিকিৎসাকে। পাশাপাশি চলবে লেখা বা পড়া। ‘এটা শখের বশেই।’

বরগুনার সন্তান আব্দুল বাছিত মোল্লা পড়ছে দ্বাদশ শ্রেণীতে। আমতলী ডিগ্রি কলেজের এই শিক্ষার্থী সেরার খেতাব জিতেছে বাংলাদেশ স্টাডিজ বিষয়ে। তাহলে কি বাংলাদেশ সম্পর্কে সব জানা আছে তার? উত্তরটা দিল অনেকটা বুদ্ধি খাটিয়েই, ‘আসলে সে রকম না। জানার তো আর শেষ নেই। তবে দেশ নিয়ে আমার আগ্রহ প্রবল। দেশের সবকিছু জানতে চাই, ঘুরে দেখতে চাই সারা দেশ। বাংলাদেশ নিয়ে আমার স্বপ্ন অনেক বেশি। সেটা না হয় মুখে নাই-বা বললাম।’

সেরা এই চার প্রতিযোগীর প্রত্যেকেই এসএসসিতে সব বিষয়ে পেয়েছে জিপিএ-৫। সবারই ইচ্ছা এইচএসসিতে ভালো ফল করে দেশের মুখ উজ্জ্বল করার।