যেন কাছের কেউ প্রীতিলতা

অনুষ্ঠানে কথা বলছেন পৌলমী সাহা। ছবি: অধুনা
অনুষ্ঠানে কথা বলছেন পৌলমী সাহা। ছবি: অধুনা

বাংলাদেশের মেয়ে। বাবার চাকরিসূত্রে যুক্তরাষ্ট্রে গেছেন সেই শৈশবে। সেখানেই লেখাপড়া, অতঃপর কর্মজীবন। যুক্তরাষ্ট্রের পেনসিলভেনিয়ার ডিকিনসন কলেজের ইংরেজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক। নাম পৌলমী সাহা। এ মাসের মাঝামাঝি ঢাকায় এসেছিলেন। ১৭ ডিসেম্বর ঢাকায় নারীপক্ষের নাসরীন হক সভাকক্ষে প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদারকে নিয়ে কথা বললেন পৌলমী।
পৌলমী সাহার পিএইচডির গবেষণার বিষয় ‘বঙ্গ’। তাঁরই একটি অংশ জুড়ে আছেন প্রীতিলতা। সে কারণেই প্রীতিলতা নিয়ে কথা। যিনি বলেছেন, ‘আমি জোর গলায় নিজেকে বিপ্লবী ঘোষণা করছি।’ তাই আলোচনার বিষয় ছিল ‘আমি জোর গলায় নিজেকে বিপ্লবী ঘোষণা করছি: নানান অবতারে প্রীতিলতা’। এই আলোচনা সভায় উপস্থিত ছিলেন নারীপক্ষের ফিরদৌস আজিম, নারীনেত্রী মালেকা বেগম, অর্থনীতিবিদ বিনায়ক সেনসহ আরও অনেকে।
১৯৩২ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর রাতে চট্টগ্রামে পাহাড়তলীর ইউরোপিয়ান ক্লাব আক্রমণের সিদ্ধান্ত হলে সূর্যসেন এই অভিযানের নেতৃত্বের দায়িত্ব দেন প্রীতিলতাকে। তৎকালীন ইউরোপিয়ান ক্লাব ছিল ব্রিটিশদের প্রমোদকেন্দ্র। পাহাড়ঘেরা এই ক্লাবের চতুর্দিকে ছিল কড়া নিরাপত্তা। প্রায় ৪০ জন মানুষ তখন ক্লাবঘরে অবস্থান করছিল। প্রীতিলতা হুইসেল বাজিয়ে আক্রমণ শুরুর নির্দেশ দেওয়ার পরই ঘন ঘন গুলি আর বোমার আঘাতে পুরো ইউরোপিয়ান ক্লাব কেঁপে উঠেছিল। ক্লাবঘরের সব বাতি নিভে যাওয়ার কারণে ক্লাবে উপস্থিত থাকা সবাই অন্ধকারে ছোটাছুটি করতে লাগল। ক্লাবে কয়েকজন ইংরেজ কর্মকর্তার কাছে রিভলবার থাকায় তাঁরা পাল্টা আক্রমণ করলেন। প্রীতিলতার নির্দেশে আক্রমণ শেষ হলে বিপ্লবী দলটির সঙ্গে তিনি কিছুদূর এগিয়ে আসেন।
পাহাড়তলীর ইউরোপিয়ান ক্লাব আক্রমণ শেষে পূর্ব সিদ্ধান্ত অনুযায়ী প্রীতিলতা পটাসিয়াম সায়ানাইড খান।
পরদিন পুলিশ ক্লাব থেকে ১০০ গজ দূরে মৃতদেহ দেখে পরবর্তী সময়ে প্রীতিলতাকে শনাক্ত করা হয়। সেই ইতিহাস আবারও উচ্চারিত নতুন প্রজন্মের গবেষকের মুখে।
গবেষণাকাজের জন্য প্রীতিলতাকে বেছে নিয়েছেন কেন? জানতে চাইলে তিনি বলেন, সেখানকার একটি লাইব্রেরিতে তিনি প্রীতিলতা সম্পর্কে পড়েন। তাঁর মনে হয়েছিল, প্রীতিলতাকে তিনি বহু বছর আগে থেকে চেনেন। যেন কাছের কেউ।
ভবিষ্যতে এই গবেষণাপত্র বই আকারে প্রকাশ করার কথাও জানালেন তিনি।