তাঁরা এ সময়ের লেখক

>
তানজিনা হোসেন
তানজিনা হোসেন

নতুন প্রজন্ম বিজ্ঞান কল্পকাহিনি পড়ছে

.
.

প্রচলিত একটা ধারণা আছে, মেয়েরা বিজ্ঞান কম বোঝে, কম পারে। তানজিনা হোসেন প্রচলিত সেই ধারণা ভেঙে দিয়েছেন। এমনিতে গল্প লেখেন, তবে বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনি পড়তে ও লিখতেও ভালো লাগে তাঁর। সেই ভালো লাগা এবার প্রকাশ পেয়েছে—এই বইমেলায় প্রথমা প্রকাশন থেকে বের হয়েছে তাঁর বিজ্ঞান কল্পকাহিনি নির্ভর উপন্যাস এলিনা
এই বিজ্ঞান কল্পকাহিনির পুরোটা ফাঁস করতে নারাজ তানজিনা। শুধু জানালেন, এই আখ্যানের চরিত্র এলিনা এক সুপারজিনিয়াস শিশু। তার মা একজন বিজ্ঞানী। বুদ্ধিমত্তায় এলিনা যে সাধারণ মানুষ থেকে আলাদা, এটি বুঝতে পেরে এক বিজ্ঞানীর পরীক্ষা–নিরীক্ষার হাত থেকে তাকে রক্ষা করার চেষ্টা করে ওর মা।
পেশায় চিকিৎসক তানজিনা স্কুল-কলেজে পড়ার সময় থেকে লেখালেখির সঙ্গে যুক্ত। এর আগে তাঁর তিনটি গল্পের বই বের হয়েছে। চিকিৎসাসেবা ও পরিবার—সব মিলিয়ে অনেক সময় দিতে হয় তাঁকে। কিন্তু তাই বলে লেখালেখির সঙ্গে আপস? একদম নয়। ব্যক্তিগত জীবনে তাঁর রয়েছে স্বামী-সন্তান। ‘আমাদের দেশে মেয়েদের লেখালেখির অভ্যাস আগে থেকেই ছিল। তাঁদের সৃজনশীলতাও কম নয়। যথাযথ প্রচার-প্রচারণা করতে পারেন না তাঁরা। আজকাল তো জনসংযোগেরও প্রয়োজন হয়। আমার মনে হয়, লেখালেখির প্রতি ভালোবাসা থাকলে ঠিকই সময় বের করে নেওয়া যায়।’ বললেন তানজিনা হোসেন।
তানজিনা হোসেন লাতিন আমেরিকার বিজ্ঞান কল্পকাহিনিগুলো পড়তে পছন্দ করেন। সত্যজিৎ রায়ের প্রফেসর শঙ্কু এখনো তাঁর কাছে সেরা মনে হয়। শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়, জাফর ইকবাল, আইজ্যাক আসিমভের লেখা তানজিনাকে অনুপ্রাণিত করে। আবার শাহীন আখতার, শাহাদুজ্জামানের লেখাও ভালোবাসেন।
‘বই পড়ার অভ্যাস খুব প্রয়োজন—ভালো লেখক হতে হলে। যা লিখতে চাইছি সে সম্পর্কে জ্ঞান থাকতে হবে, নিজের জন্য সময় দিতে হবে। এখনকার নতুন প্রজন্ম কিন্তু বিজ্ঞান কল্পকাহিনি পড়ছে। এটা আশার কথা।’ সবশেষে তানজিনার কণ্ঠে আশাবাদ। সময় পেলেই বই নিয়ে বসেন তানজিনা হোসেন। মাঝেমধ্যে ভাবেন, কোনো এক দ্বীপে চলে যাবেন। তখন তাঁর সঙ্গে কী থাকবে, জানেন? জীবনানন্দ দাশের কবিতাসমগ্র, রবিঠাকুরের গীতাঞ্জলি ও লোরকার কবিতার বই।

লেখক হিসেবে সামাজিক দায়কে অস্বীকার করি না

বদরুন নাহার
বদরুন নাহার
.
.

সমসাময়িক বিষয় সব সময় মুখ্য হয়ে ওঠে বদরুন নাহারের লেখায়। সে বিষয়-আশয় কেমন? সম্প্রতি ঘটে যাওয়া ঘটনার সূত্র ধরে রাজনীতি ও এর ইতিহাসকে তুলে আনার চেষ্টা করেন তিনি। তবে ‘ব্র্যাক ব্যাংক-সমকাল সাহিত্য পুরস্কার’জয়ী কথাসাহিত্যিক বদরুন নাহারের এবারের গল্পের বইটি খানিকটা ব্যতিক্রম। বিচ্ছিন্ন সংযোগ নামের এ বইয়ের কেন্দ্রে আছে মনস্তাত্ত্বিক নানা বিষয়। তাঁর এবারের বইটি প্রকাশ করেছে প্রকৃতি। এর আগে আরও সাতটি বই প্রকাশিত হয়েছে এ লেখকের, এর মধ্যে পাঁচটিই ছোটগল্প সংকলন।
‘মূলত আমি লেখক হিসেবে আমার সামাজিক দায়কে অস্বীকার না করে পাঠককে দিতে চেয়েছি ছোটগল্পের শিল্পিত আখ্যান।’ বদরুনের সাফ কথা। সাধারণ মানুষের জীবনকে খুব কাছে থেকে দেখে সেই দেখার অনুভবটুকু তিনি ধরে রাখতে চান নিজের লেখায়।
ছেলেবেলায় স্কুল ম্যাগাজিনে লিখে লেখায় হাতেখড়ি। পরে স্থানীয় ও জাতীয় দৈনিকে কবিতা লিখেছেন। একসময় কবিতা লিখলেও কথাসাহিত্যেই এখন বেশি মনোযোগী বর্তমানে প্রবাসী এই তরুণ লেখক। এখন লেখালেখিই তাঁর একমাত্র পেশা।
লেখাজোকাকে পেশা হিসেবে বেছে নিলেন কেন?
‘লিখতে লিখতে প্রেম জন্মাল, তাই পেশা হিসেবে নেওয়া। ভালো লাগার সঙ্গে ছিল লেখার প্রতি দায়িত্বশীলতা। দুটোকে রক্ষা করতেই পেশা হিসাবে নিয়েছি লেখালেখিকে। জানি না কতটা পেরেছি। যদিও লেখালেখিকে পেশা হিসেবে নিয়ে জীবনধারণ করা আমাদের দেশে এখনো বেশ অসম্ভব, তবু পেশার স্থলে “লেখক” লিখতেই স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করি আমি।’
সমসাময়িক যাঁরা লিখছেন, তাঁদের অনেকের লেখাই তাঁর ভালো লাগে। তবে যদি জিজ্ঞেস করা হয় তাঁর প্রিয় বইয়ের নাম, কোনো দ্বিধাদ্বন্দ্ব ছাড়াই এগিয়ে থাকবে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের গল্পগুচ্ছ।

 লেখকের মধ্যে নারী-পুরুষ ভেদাভেদ নেই

সাদিয়া মাহজাবীন ইমাম
সাদিয়া মাহজাবীন ইমাম
.
.

২০০৬ সালে সাংবাদিকতার শুরু। তখন খবর লিখতে গিয়ে মনে হতো আরও কিছু লিখতে চান। নিজের ভাবনা প্রকাশের জায়গা তো সংবাদ লেখা নয়। এরপর ২০১০ সাল থেকে পুরোদমে লিখতে শুরু করলেন। কী লিখতে চান, কী বলতে চান—সেটা নিয়ে ভেবেছেন বিস্তর। এভাবেই লেখার জগতে পা রাখা সাদিয়া মাহজাবীন ইমামের। এবারের বইমেলায় অন্যপ্রকাশ থেকে প্রকাশিত হয়েছে তাঁর দ্বিতীয় গল্পগ্রন্থ রক্তমূলে বিচ্ছেদ
বর্তমানে একটি বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলে সাংবাদিক হিসেবে কাজ করছেন সাদিয়া। লেখালেখির জন্য এরই মধ্যে পেয়েছেন ‘এক্সিম ব্যাংক-অন্যদিন হ‌ুমায়ূন আহমেদ সাহিত্য পুরস্কার’। তাঁর মতে, লেখকের মধ্যে কোনো নারী-পুরুষ ভেদাভেদ নেই। তবে অনলাইন ও ফেসবুকে মেয়েরা এখন অনেক লিখছে। কিন্তু লেখালেখিকে পেশা হিসেবে নেওয়ার বাস্তবতা এখনো গড়ে ওঠেনি। লেখালেখিকে কতজন পুরুষ পেশা হিসেবে নিতে পারে? লেখক হতে হলে দীর্ঘপথ হাঁটতে হয়, তাৎক্ষণিকভাবে স্বীকৃতি মেলে কম। সে কারণেও হয়তো নারী লেখকদের মধ্যে পেশাদারি মনোভাব গড়ে ওঠেনি।
কী আছে সাদিয়ার রক্তমূলে বিচ্ছেদ-এ? তাঁর ছোট্ট উত্তর: নগরজীবনের মানুষের বিস্তৃতি আর টানাপোড়েন—এ নিয়ে আছে চারটি গল্প। বাকি আটটি গল্পের বিষয়বস্তু প্রকৃতির সঙ্গে মানুষের সম্পর্ককে ঘিরে।
এই লেখক আশাবাদী, সামনে আরও নতুন নতুন নারী লেখক পাব আমরা।
সাদিয়ার বিশ্বাস, বিশ্বসাহিত্য পড়লে ভালো লেখার অনুপ্রেরণা পাওয়া যায়। ভালো লাগে নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়, তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়, বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা। আর অনুপ্রাণিত হন লিও তলস্তয় ও ফিওদর দস্তয়েভস্কির লেখা পড়ে।