ভীষণ নাড়া দিয়েছিল 'ইস্পাত'

ফজলুর রহমান বাবু
ফজলুর রহমান বাবু

আমি বড় হয়েছি মফস্বল শহরে। সেখানে সবকিছুতেই ছিল বারণ। ফলে বাসায় বসে পাঠ্যপুস্তকের বাইরে কিছু পড়ার সাহস পেতাম না। শুধু পাঠ্যবইয়ে মুখ গুঁজে থাকতাম। তারপর যখন কৈশোরে পা দিলাম; বিভিন্ন লেখকের বই পড়তে শুরু করলাম। সবই লুকিয়ে। নীহাররঞ্জন গুপ্ত, শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের বইসহ, মাসুদ রানা, দস্যু বনহুর সিরিজের বইগুলোও পড়েছিলাম এই সময়ে।

ইস্পাত-এর প্রচ্ছদ
ইস্পাত-এর প্রচ্ছদ

আরেকটু বড় হয়ে পড়তে শুরু করলাম তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়নের প্রগতি প্রকাশনীর বই। আর উদয়ন পত্রিকা তো ছিলই। ওই বয়সে একটা নতুন মাত্রা এনে দিয়েছিল সেই বইগুলো। এভাবেই রাশিয়ার সাহিত্যের সঙ্গে পরিচয় গড়ে ওঠে আমার। তখন নিকোলাই অস্ত্রোভস্কির ইস্পাত আমায় ভীষণভাবে নাড়া দিয়েছিল। জীবনের দর্শনটাই আমূল পাল্টে দিয়েছিল। তারপর পড়েছি আলেকজান্ডার পুশকিন, লিও টলস্টয়, দস্তয়ভস্কি। তাঁদের লেখা খুব ভালো লাগত। আমার প্রিয় উপন্যাস লিও টলস্টয়ের পুনরুজ্জীবন।
এরপর পড়েছি মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়, বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়। পড়েছি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বিভিন্ন রচনা।
অনেকের লেখাই তো পড়া হয়েছে। তবে দেশের মধ্যে আমার পছন্দের লেখকদের তালিকায় রয়েছেন আখতারুজ্জামান ইলিয়াস, শওকত আলী, মঞ্জু সরকার ও শহীদুল জহির। শহীদুল জহিরের সে রাতে পূর্ণিমা ছিল আমার খুব প্রিয় উপন্যাসের একটি। আর ভালো লাগে মঞ্জু সরকারের অবিনাশী আয়োজন।
বিশ্বসাহিত্যের মধ্যে লাতিন আমেরিকার সাহিত্য ভীষণভাবে প্রভাবিত করে আমাকে। সুযোগ পেলেই পড়ি লাতিন সাহিত্য। লাতিন আমেরিকায় আমার অন্যতম প্রিয় লেখক গ্যাব্রিয়েল গার্সিয়া মার্কেজ।
তবে এখন যা পাই, তা-ই পড়ি। আর পড়তে পছন্দ করি বিভিন্ন পুরস্কার পাওয়া বই। নোবেল পুরস্কার পাওয়া বইগুলো পড়তে ভুল হয় না কখনো। পেশাগত কারণেই বেশি পড়া হয় চিত্রনাট্য। সেটা না পড়লে তো উপায় নেই। তবে সেগুলো পড়ে প্রায়ই নিরাশ হতে হয়। যেমন খুব মনোযোগ দিয়ে চিত্রনাট্য পড়া শুরু করলাম, শেষ করে মনে হলো, দূর, কী যা-তা পড়লাম। তখন খুব বিরক্ত লাগে। শেষে বলি: আমার একটা আফসোস আছে—এখন আগের মতো বইপড়া হয়ে ওঠে না ব্যস্ততার কারণে। তবে, অন্য সবকিছুর চেয়ে বই-ই যে আমাকে সবচেয়ে বেশি আকৃষ্ট করে, এটা বলাই বাহুল্য।
 অনুলিখন: সুচিত্রা সরকার