তবুও পড়িয়ে যাচ্ছেন জেসমিন

এভাবে কষ্ট করে স্কুলে আসেন জেসমিন আক্তার l ছবি: প্রথম আলো
এভাবে কষ্ট করে স্কুলে আসেন জেসমিন আক্তার l ছবি: প্রথম আলো

জেসমিন আক্তার শারীরিক প্রতিবন্ধী। জন্ম থেকেই তাঁর দুই পা বিকলাঙ্গ। কিন্তু এই বাধা তাঁকে দমিয়ে রাখতে পারেনি। স্কুল ও কলেজের ডিগ্রি নিয়ে শিক্ষকতা পেশায় ঢুকেছেন। জেসমিন আক্তারের বাড়ি একই উপজেলার পচাবহলা গ্রামে। তাঁর বাবা মনজু মিয়া, পেশায় কৃষক।

ক্লাস শেষে কথা হয় জেসমিন আক্তারের সঙ্গে। বললেন, ‘জীবনের সঙ্গে অনেক যুদ্ধ করে এ পর্যন্ত এসেছি। তিন বছর ধরে পড়াচ্ছি। বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন ব্যক্তি হয়েও কোনো সুযোগ-সুবিধা পাইনি। আমাকে হামাগুড়ি দিয়ে সিঁড়ি বেয়ে উঠতে হয়। স্কুলে দুটি ভবন থাকায় একটি শ্রেণিকক্ষ থেকে অন্য আরেক শ্রেণিকক্ষে যেতেও সমস্যার মধ্যে পড়তে হয়। সবচেয়ে বেশি সমস্যার মধ্যে পড়তে হয় বর্ষাকালে। সেই স্কুলের মাঠে ও রাস্তায় কাদাপানি থাকে। স্কুলের ভবনগুলোতে র‍্যাম্প থাকলে কষ্টটা অনেক কমে যাবে।’

ক্লাসে পড়াচ্ছেন জেসমিন
ক্লাসে পড়াচ্ছেন জেসমিন

প্রতিবন্ধী শিশুশিক্ষা ও পরিচর্যা সমিতির সহযোগিতায় ইসলামপুর উচ্চবিদ্যালয় থেকে এসএসসি ও ইসলামপুর সামাদ পারভেজ মহিলা কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেন জেসমিন। এরপর সহকারী শিক্ষক পদে চাকরির জন্য আবেদন করেন। চাকরির জন্য নির্বাচিত হন। এখন তো স্কুলের ২৮৭ জন শিক্ষার্থীর প্রিয় শিক্ষক জেসমিন আক্তার।

জামালপুরের প্রতিবন্ধী শিশুশিক্ষা ও পরিচর্যা সমিতির (প্রশিপস) নির্বাহী প্রধান রফিকুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘প্রতিবন্ধীদের অধিকার সুরক্ষায় ২০১৩ সালে জাতীয় সংসদে আইন প্রণয়ন করা হয়। সেই আইনের ১৬ নম্বর ধারায় প্রতিবন্ধী ব্যক্তির প্রবেশগম্যতার অধিকার সম্পর্কে বলা হয়েছে। প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের সব ধরনের গণস্থাপনায় প্রবেশগম্যতা নিশ্চিত করার কথা। দীর্ঘদিন ধরে ওই বিদ্যালয়ের জেসমিন আক্তার শিক্ষকতা করলেও র‍্যাম্প নির্মাণ করা হয়নি। বিষয়টি নিয়ে উপজেলা প্রশাসন ও বিদ্যালয়-সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে কথাও বলেছিলাম। কিন্তু কোনো লাভ হয়নি।’

পাঁচবাড়িয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মজিবর রহমানের কাছেও জানা যায়, তাঁরা দীর্ঘদিন ধরে প্রশাসনকে জানিয়ে আসছেন। কিন্তু কাজ হয়নি। ইসলামপুরের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এ বি এম এহসানুল হক বলেন, ‘আমি সম্প্রতি এ উপজেলায় যোগদান করেছি। প্রথম বিষয়টি শুনলাম। বিদ্যালয়টিতে সরেজমিনে গিয়ে দ্রুত সময়ের মধ্যে র‍্যাম্পটি নির্মাণ করে দেওয়া হবে।’