পড়াশোনা হয়েছে বিঘ্নিত

পড়াশোনা হয়েছে বিঘ্নিত
পড়াশোনা হয়েছে বিঘ্নিত

২০১৩ সালটি ভালো গেল না শিশু শিক্ষার্থীদের। রাজনৈতিক অস্থিরতায় সারা বছরই ভুগিয়েছে তাদের। এরই মধ্যে কোনোমতে টেনেটুনে ক্লাস শেষ করা হলেও বছরের শেষ মুহূর্তে পরীক্ষার মৌসুমে তাদের চরম বিপদের মুখে পড়তে হয়েছে।
প্রাথমিক ও ইবতেদায়ি শিক্ষা সমাপনী এবং জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট (জেএসসি) ও জুনিয়র দাখিল সার্টিফিকেট (জেডিসি) পরীক্ষাসহ স্কুলের বার্ষিক পরীক্ষা দিনকে দিন পিছিয়েছে। এ কারণে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের প্রায় তিন কোটি ৭০ লাখ শিক্ষার্থী খুবই সমস্যার মধ্যে পড়ে। শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি দুশ্চিন্তায় দিন কেটেছে তাদের অভিভাবকদেরও।
সাধারণত ডিসেম্বর মাসে বার্ষিক পরীক্ষা শেষে শিক্ষার্থীরা বেড়ানোসহ নানা ধরনের বিনোদন করে থাকে। কিন্তু রাজনৈতিক অস্থিরতায় এবার শিশুরা সেই সুযোগ থেকে বঞ্চিত হয়েছে। বারবার পরীক্ষার তারিখ পরিবর্তন ও বিনোদনের সুযোগ থেকে বঞ্চিত হওয়ায় তাদের মনের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে।
গত বছরের শুরু থেকেই রাজনৈতিক অস্থিরতা শুরু হয়। এর পর বছরজুড়েই চলে এই অস্থিরতা। এখন সেটি সহিংসতায় রূপ নিয়েছে। খুব তাড়াতাড়ি এই সমস্যা কাটবে বলেও মনে হচ্ছে না। বরং নির্বাচনকে ঘিরে এই সহিংসতা আরও বাড়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। ৫ জানুয়ারি নির্বাচন হয়ে গেলেও সংকট কাটার কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। কারণ নতুন বছর শুরুই হয়েছে রাজনৈতিক অস্থিরতার মধ্যে।
এ অবস্থায় ২ জানুয়ারি সারা দেশে বই উৎসব হলেও অবরোধের কারণে অনেক বিদ্যালয়ে সব শিশু যেতে পারেনি।
শিক্ষার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, নেতিবাচক রাজনীতির কুফল গিয়ে পড়েছে শিশুদের ওপর। শিশুদের পড়াশোনায় রাজনৈতিক অস্থিরতা বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে।

পরীক্ষা নিয়ে সমস্যা: দেশের সবচেয়ে বড় পাবলিক পরীক্ষা হলো পঞ্চম শ্রেণী স্তরের শিক্ষার্থীদের প্রাথমিক ও ইবতেদায়ি শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষা। গত বছরের ২০ নভেম্বর শুরু হয়েছিল এই পরীক্ষা; শেষ হওয়ার কথা ছিল ২৮ নভেম্বর। কিন্তু বিএনপির নেতৃত্বাধীন ১৮ দলের ডাকা অবরোধের কারণে তিন দফায় পিছিয়ে পরীক্ষা শেষ হয় ৬ ডিসেম্বর। ফলে চরম মানসিক যন্ত্রণা ভোগ করতে হয়েছে ছোটদের এসএসসি-খ্যাত এই পরীক্ষার প্রায় ২৯ লাখ পরীক্ষার্থীকে। তবে এত সমস্যার মধ্যেও পরীক্ষা দিয়ে বাংলাদেশের পাবলিক পরীক্ষার ইতিহাসে সবচেয়ে ভালো ফল করেছে এই শিশুরা। ৩০ ডিসেম্বর প্রকাশ হয় ফল। এতে প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষায় প্রায় শতভাগ (৯৮ দশমিক ৫৮ শতাংশ) শিশু পাস করেছে। আর জিপিএ-৫ পেয়েছে দুই লাখ ৪০ হাজার ৯৬১ জন। আর মাদ্রাসার পঞ্চম শ্রেণী স্তর ইবতেদায়ি শিক্ষা সমাপনীতে পাসের হার ৯৫ দশমিক ৮০ শতাংশ।

জেএসসি ও জেডিসি পরীক্ষার ফলও প্রকাশিত হয়েছে। সেখানেও ভালো করেছে শিক্ষার্থীরা।
এই দুটি পাবলিক পরীক্ষা ছাড়াও বছরের শেষ সময়ে বার্ষিক পরীক্ষা নিয়ে চরম অনিশ্চয়তা দেখা দেয়। সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে পঞ্চম শ্রেণী বাদে অন্যান্য শ্রেণীর বার্ষিক পরীক্ষা ২ ডিসেম্বর শুরু হয়ে ১৮ ডিসেম্বরের মধ্যে শেষ করা কথা ছিল। কিন্তু নির্বাচন কমিশন ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহে পরীক্ষা শেষ করার নির্দেশ দেয়। ফলে সমস্যায় পড়ে বিদ্যালয়গুলো। একই অবস্থার মুখোমুখি দেশের বেসরকারি বিদ্যালয়গুলোরও।
অবরোধের কারণে শিক্ষকেরা ভেবেছিলেন শুক্র ও শনিবার ছুটির দিনে পরীক্ষা নিয়ে শেষ করা হবে। কিন্তু শনিবারও অবরোধ দেওয়া হয়। এতে সমস্যা আরও বাড়ে। কোনো কোনো বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ কয়েকটি পরীক্ষার ভিত্তিতেই ওপরের শ্রেণীতে পদোন্নতির সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হয়।

প্রাক্-প্রাথমিকের শিশুদের জন্য নতুন বই: একটি ভালো খবর হলো সদ্য শুরু হওয়া নতুন শিক্ষাবর্ষে প্রাক্-প্রাথমিকের ছোট্ট মণিরাও নতুন বই হাতে পেতে শুরু করেছে। ২ জানুয়ারি বই উৎসবের মাধ্যমে শিশুদের হাতে তুলে দেওয়া হয়। এর মধ্যে আমার বই নামে একটি এবং লেখালেখি শেখার জন্য আরেকটি বই শিশুদের কাছে থাকবে। জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) দায়িত্বশীল একজন কর্মকর্তা জানান, এই দুই ধরনের বই মিলিয়ে মোট এক কোটি ৬০ লাখ বই ছাপা হয়েছে। এ ছাড়া বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের জন্য এক সেট করে বই দেওয়া হবে। তাঁরা এই বইয়ের আলোকে প্রাক্-প্রাথমিকের শিশুদের পড়াবেন। শিক্ষকদের জন্য দেওয়া বই বিদ্যালয়েই থাকবে।