বিশ্বজয়ী তারুণ্য

২০১৩ সাল ছিল শিক্ষার্থীদের অর্জনের বছর। বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরা বিশ্বসভায় নিজের আসন পাকা করতে শুরু করেছে। ফিরে দেখা যাক বিশ্বজয়ী ছয়টি ঘটনা।

মাকামে মাহমুদ ও নাসিফ আস-সাকিব
মাকামে মাহমুদ ও নাসিফ আস-সাকিব

গ্লোবাল সোশ্যাল এন্ট্রাপ্রেনিউরশিপ কম্পিটিশন (জিএসইসি), যুক্তরাষ্ট্র
সবার সেরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজির (এমআইটি) তিনটি দলকে হারিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইবিএ দলটি জিতে নেয় ১০ হাজার মার্কিন ডলার (প্রায় আট লাখ টাকা) মূল্যমানের গ্লোবাল হেলথ প্রাইজ। ২৮ ফেব্রুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের সিয়াটলে অনুষ্ঠিত গ্লোবাল সোশ্যাল এন্ট্রাপ্রেনিউরশিপ কম্পিটিশন (জিএসইসি) চ্যাম্পিয়ন হয়ে আইবিএ দল অর্জন করে এই গৌরব।

সিয়াটলে চূড়ান্ত প্রতিযোগিতায় উপস্থিত থেকে স্বপ্নের চেয়েও সুন্দর সেই সন্ধ্যায় দেশের জন্য অপরিসীম সম্মান বয়ে আনেন বিবিএর শিক্ষার্থী মাকামে মাহমুদ ও নাসিফ আস-সাকিব । ‘লাইফ চেয়ার’ দলের অন্য দুই সদস্য সৌভিক আস্ওয়াদ ও সাজিদ রহমান বিশেষ কারণে যুক্তরাষ্ট্র যেতে পারেননি। ‘লাইফ চেয়ার’ দলের প্রকল্পের বিষয় হচ্ছে: শারীরিক প্রতিবন্ধীদের জন্য পরিবেশবান্ধব ও সাশ্রয়ীমূল্যের হুইল চেয়ার নির্মাণ।

রাতিব মুর্তাজা আলী ও আকিব ফারহান হোসেন
রাতিব মুর্তাজা আলী ও আকিব ফারহান হোসেন

ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটিজ ডিবেটিং চ্যাম্পিয়নশিপ, জার্মানি
চ্যাম্পিয়ন ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়
গত বছরের শুরুতেই দেশের জন্য প্রথম আন্তর্জাতিক সম্মান বয়ে আনেন ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ে দুই শিক্ষার্থী রাতিব মুর্তাজা আলী ও আকিব ফারহান হোসেন। ৩ জানুয়ারি জার্মানিতে অনুষ্ঠিত ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটিজ ডিবেটিং চ্যাম্পিয়নশিপের ইএসএল বিভাগে চ্যাম্পিয়ন হয় রাতিব ও আকিবের দল। আন্তর্জাতিক বিতর্কে এটি বাংলাদেশের জন্য সর্বোচ্চ সম্মান। এ প্রতিযোগিতায় ৮২টি দেশের প্রায় ৪০০টি দল অংশ নেয়। বাংলাদেশের এই দুই বিতার্কিক ইংলিশ অ্যাজ সেকেন্ড ল্যাঙ্গুয়েজ (ইএসএল) ক্যাটাগরির মূল পর্বে অংশ নেওয়ার যোগ্যতা অর্জন করে এবং বিভিন্ন ধাপ পেরিয়ে শেষ পর্যন্ত চ্যাম্পিয়ন হন। ফাইনালে তাঁদের সঙ্গে চলে নেদারল্যান্ড ও ইসরায়েলের তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতা। দর্শকের ভোটে রাতিব মুর্তাজা শ্রেষ্ঠ বক্তা নির্বাচিত হন।

কাশফিয়া নেহরিন
কাশফিয়া নেহরিন

ইমাজিন সিটি অব টুমরো, ফ্রান্স
বিশ্ব মাতালো বুয়েট
ফ্রান্সের ‘ইমাজিন সিটি অব টুমরো’ প্রতিযোগিতায় বিশ্বের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৭০টি দলের সঙ্গে লড়াই করে পুরস্কার জিতে এনেছে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) ‘স্টারলেটস’ দলটি। ১৭ অক্টোবর ‘স্টারলেটস’ থেকে ফ্রান্সে প্রতিনিধিত্ব করেন কাশফিয়া নেহরীন। অনিবার্য কারণে দলের অন্য দুই সদস্য তাশনীম ফিরোজ ও তাসফিয়া তাসনীম ফ্রান্সে যেতে পারেননি। এ দলের সবাই বুয়েটের নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের শিক্ষার্থী।

‘স্টারলেটস’-এর প্রকল্পের বিষয় ছিল: বুয়েট ক্যাম্পাসকে ভবিষ্যতের জন্য আরও পরিবেশবান্ধব ও জ্বালানি-সাশ্রয়ী হিসেবে গড়ে তোলা। ফ্রান্সের ‘স্টুডিকা’ কর্তৃক আয়োজিত ‘ইমাজিন সিটি অব টুমরো: ইমপ্রুভিং অ্যা পাবলিক স্পেস’ নামের প্রতিযোগিতায় বুয়েটের দলটি জিতে নেয় ১৫০০ ইউরো মূল্যমানের দ্বিতীয় পুরস্কার। শুধু বাংলাদেশেরই নয়, পুরো এশিয়ার একমাত্র দল হিসেবে স্টারলেটস দেশের জন্য বয়ে এনেছে এই গৌরব।

সুমাইয়া তাবাসসুম, দেবজিৎ সাহা ও সাবরিনা আফরোজ
সুমাইয়া তাবাসসুম, দেবজিৎ সাহা ও সাবরিনা আফরোজ

পলি ইউ গ্লোবাল স্টুডেন্ট চ্যালেঞ্জ, হংকং
সোনাজয়ী আইবিএ
যুক্তরাষ্ট্রের হার্ভার্ড, জন হপকিন্স, ভার্জিনিয়া টেক বিশ্ববিদ্যালয়, ভারতের আইআইটিসহ পৃথিবীর নামকরা বিশ্ববিদ্যালয়ের ২২৮টি দলকে পেছনে ফেলে সোনা জিতে আনলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তিন শিক্ষার্থী। আর সেই সঙ্গে অর্জন করলেন ছয় হাজার ৫০০ মার্কিন ডলার (প্রায় পাঁচ লাখ টাকা) সমমূল্যের পুরস্কার।

২৭ জুন ২০১৩ হংকংয়ে অনুষ্ঠিত পলি ইউ গ্লোবাল স্টুডেন্ট চ্যালেঞ্জে আইবিএর শিক্ষার্থী সুমাইয়া তাবাসসুম, দেবজিৎ সাহা ও সাবরিনা আফরোজের দল ‘কাইজেন’ জিতে নেয় ২০১৩ সালের ‘গোল্ড মেডেল’।
‘কাইজেন’ দলের প্রকল্পের বিষয়: নারী পোশাকশ্রমিকদের জন্য স্বল্পমূল্যে স্যানিটারি ন্যাপকিন তৈরি ও বাজারজাতকরণ।

ফারিহা প্রিয়াঙ্কা
ফারিহা প্রিয়াঙ্কা

মে ব্যাংক গো অ্যাহেড চ্যালেঞ্জ, মালয়েশিয়া
শীর্ষে বাংলাদেশ
মালয়েশিয়ার ‘মে ব্যাংক গো অ্যাহেড, চ্যালেঞ্জ ২০১৩’-এর ফাইনালে সবার ওপরে শোভা পেল বাংলাদেশের লাল-সবুজ পতাকা। শুধু    তা-ই নয়, সব হিসাব পাল্টে দিয়ে বাংলাদেশি প্রতিযোগীই ছিনিয়ে আনলেন শ্রেষ্ঠত্ব, হলেন টুর্নামেন্টের সেরা। তিনি বাংলাদেশের মেয়ে ফারিহা প্রিয়াঙ্কা।

৩ আগস্ট ২০১৩ অনুষ্ঠিত প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশ ছাড়াও ভিয়েতনাম, চীন, মালয়েশিয়া, কম্বোডিয়া, ফিলিপাইন, হংকং, ইন্দোনেশিয়া ও সিঙ্গাপুরের শিক্ষার্থীরা অংশ নেন। চ্যাম্পিয়ন হয়ে ফারিহা প্রিয়াঙ্কা ও তাঁর দল পেয়েছে ৩০ হাজার ডলার পুরস্কার, বাংলাদেশি মুদ্রায় যা প্রায় ২৪ লাখ টাকা। প্রিয়াঙ্কা ও তাঁর দলের প্রকল্পের বিষয় ছিল, ‘হট ক্যান’ নামে নতুন ধরনের একটি কফির ব্র্যান্ডকে বাজারে নিয়ে আসার কৌশল উদ্ভাবন।

সাকিফ নাঈম খান, মির্জা জুনায়না সাবাহ ও তাসমিয়া নাহরিন
সাকিফ নাঈম খান, মির্জা জুনায়না সাবাহ ও তাসমিয়া নাহরিন

ডেল সোশ্যাল ইনোভেশন চ্যালেঞ্জ, যুক্তরাষ্ট্র
সেরাদের সঙ্গী এনএসইউ
১৪ মে ২০১৩ যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব টেক্সাস, অস্টিন আয়োজিত ‘ডেল সোশ্যাল ইনোভেশন চ্যালেঞ্জ ২০১৩’ প্রতিযোগিতার ফাইনালে নিজেদের সামাজিক ব্যবসা পরিকল্পনা উপস্থাপন করে ৪০ হাজার মার্কিন ডলার (প্রায় ৩২ লাখ টাকা) পুরস্কার জিতে এসেছেন নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির (এনএসইউ) ব্যবসায় প্রশাসন বিভাগের মির্জা জুনায়না সাবাহ, সাকিফ নাঈম খান ও অর্থনীতি বিভাগের তাসমিয়া নাহরিন এমনই কয়েকজন উৎসাহী তরুণ উদ্যোক্তা। দলের চতুর্থ সদস্য সৈয়দ আজিম হায়দার অনিবার্য কারণে যুক্তরাষ্ট্রে যেতে পারেননি।

এনএসইউর ‘ফুট সোলজার’ দলটি জার্মানি, মেক্সিকো, যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন দেশের দুই হাজার ৬০৫টি দলকে পেছনে ফেলে প্রতিযোগিতার ফাইনালে পৌঁছে যায়। গাড়ির বাতিল টায়ার ব্যবহার করে স্বল্প খরচে পরিবেশবান্ধব জুতা তৈরির প্রকল্প উপস্থাপন করে দলটি জিতে নেয় দ্বিতীয় সেরার পুরস্কার।