আরও অর্জনের অপেক্ষায়...

আজ ২০১৭ সালের শেষ দিন। ‘স্বপ্ন নিয়ে’ পাতায় গত এক বছরে ছাপা হওয়া খবরগুলোয় চোখ বোলাতে গিয়ে জার্মান তরুণ ইয়ানিস ম্যাকডেভিডের একটা কথা মনে পড়ছে। ‘হাত নেই, পা নেই, আক্ষেপ নেই’ শিরোনামে ইয়ানিসের খবর ছাপা হয়েছিল ১৬ জুলাই, স্বপ্ন নিয়ের প্রথম পাতায়। একটু মনে করিয়ে দিই। ইয়ানিস একজন অনুপ্রেরণাদায়ী বক্তা। তাঁর হাত নেই, পা নেই, একটা অত্যাধুনিক হুইলচেয়ারে বসে তিনি চলাফেরা করেন। পৃথিবীর নানা প্রান্তে ঘুরে মানুষকে অনুপ্রেরণা দেন ইউনিভার্সিটি অব উইটেন হার্ডেকের এই অর্থনীতির ছাত্র। এ বছর তিনি যখন বাংলাদেশে এলেন, আমরা তখন তাঁর সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলাম। আলাপ শেষে ইয়ানিসের হাতে শুভেচ্ছা স্মারক হিসেবে ‘স্বপ্ন নিয়ে’র একটা ব্যাজ তুলে দিলাম। খুব আগ্রহ নিয়ে জানতে চাইলেন, স্বপ্ন নিয়ে কথার অর্থ কী? ইংরেজিতে বুঝিয়ে বলার পর ইয়ানিস হেসে বললেন, ‘বাংলা ভাষাটা জানা থাকলে আমিও প্রতি রোববার আপনাদের কাছ থেকে অনুপ্রেরণা পেতাম।’

সত্যিই তো। গত এক বছরে বাংলাদেশের তরুণদের কত সাফল্যের খবর ছাপা হয়েছে স্বপ্ন নিয়েতে! আমাদের দেশের বিশ্ববিদ্যালয়ের ছেলেমেয়েরা ভিনেদেশের বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়েছে, পুরস্কার পেয়েছে। নানা দেশের মানুষের সামনে তাঁরা মঞ্চে উঠে দাঁড়িয়েছেন বাংলাদেশের পতাকা হাতে। গত এক বছরে নানা উদ্ভাবন কিংবা সমাজ বদলে দেওয়ার ভাবনা নিয়ে কাজ করেছেন এ দেশের তরুণেরা। উৎসব-প্রতিযোগিতা-আয়োজনে মাতিয়ে রেখেছেন ক্যাম্পাস।

২০১৭ সালে বিশ্বের নানা প্রান্তে বাংলাদেশের মুখ উজ্জ্বল করেছেন এ দেশের তরুণেরা। গ্লোবাল সিটিজেন উইক উপলক্ষে নিউইয়র্কের সেন্ট্রাল পার্কে আয়োজিত অনুষ্ঠানে ষাট হাজার দর্শকের সামনে নিজের সমাজসেবামূলক কার্যক্রমের গল্প বলেছেন বাংলাদেশের তরুণী শমী হাসান চৌধুরী। যুক্তরাষ্ট্রের স্লোন ফাউন্ডেশন থেকে ছবি বানানোর জন্য ৮৪ লাখ টাকার অনুদান পেয়েছেন আইবিএর প্রাক্তন ছাত্র, রেজওয়ান শাহরিয়ার সুমিত। সারা বিশ্বে কম্পিউটেশনাল বায়োলজি নিয়ে যাঁরা কাজ করেন, তাঁদের একটি আন্তর্জাতিক সংস্থা আছে—ইন্টারন্যাশনাল সোসাইটি ফর কম্পিউটেশনাল বায়োলজি বা আইএসসিবি। এই সংস্থার তরুণ শাখা ‘স্টুডেন্ট কাউন্সিল ফর কম্পিউটেশনাল বায়োলজি’র সভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন বাংলাদেশের ফারজানা রহমান। দ্য কুইন্স ইয়াং লিডারস অ্যাওয়ার্ডের জন্য নির্বাচিত হয়েছেন টেন মিনিট স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা আয়মান সাদিক ও ফেমের প্রতিষ্ঠাতা জায়বা তাহিয়া। এমন অনেক খবর নিশ্চয়ই আপনার মন ভালো করে দেবে।

আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতাগুলো থেকে এবার বেশ কিছু পুরস্কার এসেছে বাংলাদেশের ঘরে। অক্টোবরে থাইল্যান্ডে অনুষ্ঠিত এশিয়ান ব্রিটিশ পার্লামেন্টারি ডিবেটিং চ্যাম্পিয়নশিপে অংশ নিতে থাইল্যান্ডে গিয়েছিল বাংলাদেশ দল। এই প্রথমবারের মতো এই প্রতিযোগিতা থেকে সেরার পদক নিয়েই তারা ফিরেছে। পিয়ার টু পিয়ার: ফেসবুক গ্লোবাল ডিজিটাল চ্যালেঞ্জ ২০১৭ প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়েছিল ৭০টি দেশের ১৬০টি দল। চ্যাম্পিয়ন দলের নাম—বাংলাদেশ! বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির ক্ষেত্রেও ২০১৭ আমাদের হতাশ করেনি। আই ইইই ইমেজ ভিডিও অ্যান্ড ইমেজ প্রসেসিং কাপ, সংক্ষেপে যেটি ভিআইপি কাপ নামে পরিচিত, বিভিন্ন দেশের ২১৮টি দলের মধ্যে প্রতিযোগিতায় সেখানে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। স্থাপত্যের শিক্ষার্থীদের জন্য আয়োজিত প্রতিযোগিতা তামায়ুজ ইন্টারন্যাশনাল অ্যাওয়ার্ড ২০১৭-এর জন্য জমা পড়েছিল ৪২টি দেশের ১১৮টি বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪৬৮টি প্রকল্প। প্রথম পুরস্কার পেয়েছেন আমাদের নিশাত তাসনিম। ‘টেকনোলজি’ আর ‘সংস্কৃতি’র মিশেলে প্রতিবছর ভারতে আয়োজন করা হয় একটি প্রতিযোগিতা, নাম টেককৃতি। এ বছর ভারতের আইআইটি কানপুরে অনুষ্ঠিত প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশ থেকে গিয়েছিল বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের চারটি দল। প্রতিযোগিতার পাঁচটি ভিন্ন ভিন্ন পর্ব থেকে মোট ছয়টি পুরস্কার এসেছে আমাদের শিক্ষার্থীদের হাতে। পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়েছিল ২৬ মার্চ। স্বাধীনতা দিবসের দিনে বাংলাদেশের পতাকা হাতে মঞ্চে উঠেছিলেন শিক্ষার্থীরা। গণিত অলিম্পিয়াড, পদার্থবিজ্ঞান অলিম্পিয়াড, জুনিয়র সায়েন্স অলিম্পিয়াডের মতো আন্তর্জাতিক আয়োজনগুলোতেও একটু একটু করে এগিয়েছে বাংলাদেশ। প্রতিটা আয়োজন থেকেই কোনো না কোনো পদক এসেছে। স্বর্ণপদক অবশ্য এ বছর আমাদের অধরা থেকে গেল। ২০১৮ সালে এই আফসোস ঘুচবে কি না, সেটা সময়ই বলে দেবে।