যমজের জয়গান

দুই বোন, ফারহানা শীলা ও ফারজানা নীলা। ছবি: খালেদ সরকার
দুই বোন, ফারহানা শীলা ও ফারজানা নীলা। ছবি: খালেদ সরকার

আজিমপুরের গার্হস্থ্য অর্থনীতি কলেজে ভালো ফল করা শিক্ষার্থীদের পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠান। শিশু বিকাশ ও সামাজিক সম্পর্ক বিভাগে স্নাতকে (সম্মান) প্রথম হওয়া শিক্ষার্থী পুরস্কার নিয়ে মঞ্চ থেকে নামলেন। উপস্থাপক এবার ডাকলেন সম্পদ ব্যবস্থাপনা ও এন্ট্রাপ্রেনারশিপ বিভাগে প্রথম হওয়া শিক্ষার্থীকে। কিন্তু শিশু বিকাশে প্রথম হওয়া শিক্ষার্থীই আবার পুরস্কার নিতে এলেন।

উপস্থিত শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা অবাক। একই শিক্ষার্থী দুই বিভাগে প্রথম হলেন কী করে? আসলে তা নয়। একসঙ্গে দুই বোন মঞ্চে উঠতেই সবার ভ্রম ভাঙল। দুই বিভাগে সর্বোচ্চ নম্বর পেয়ে প্রথম শ্রেণিতে প্রথম হওয়া দুই শিক্ষার্থী আদতে যমজ বোন। ফারজানা নীলা ও ফারহানা শীলা। শিশু বিকাশে প্রথম ফারজানা নীলা এবং এন্ট্রাপ্রেনারশিপ বিভাগে ফারহানা শীলা।

নীলা ও শীলাকে নিয়ে এমন ভুল অনেকেই করেন। দেখতে প্রায় অবিকল দুই বোনকে নিয়ে পরিচিত-অপরিচিত সবারই আগ্রহ অনেক। এত দিন শুধু চেহারায় মিল ছিল, এখন দুই বোনের ফলেও মিল। নিজেদের এই সাফল্যকে উপভোগও করেন তাঁরা।

মেডিকেলে ভর্তি হতে না পেরে অনেক দিন মন খারাপ ছিল নীলার। গার্হস্থ্য অর্থনীতি কলেজে ভর্তির পর প্রথম দিকে পড়ালেখায় খুব একটা মনোযোগ ছিল না। তবে কখনোই কলেজের ক্লাস ফাঁকি দিতেন না। প্রথম বর্ষের চূড়ান্ত পরীক্ষার ফলে তৃতীয় হওয়ার পরই মূলত আগ্রহ বাড়ে। এরপর টানা চার বছরই ধারাবাহিকতা ধরে রেখে স্নাতকে প্রথম হন তিনি।

নীলা বলেন, ‘পরিবার, আত্মীয়স্বজনের মধ্যে আমাদের দুই বোনকে নিয়ে প্রত্যাশা অনেক। এই ফল করার পেছনে তা অনুপ্রেরণা হিসেবে কাজ করেছে। তা ছাড়া মেডিকেলে ভর্তি না হতে পারায় নিজেকে প্রমাণ করারও একটি তাগিদ ছিল। এ ক্ষেত্রে কলেজের শিক্ষকেরা যথেষ্ট সাহায্য করেছেন।’

শীলাও প্রথম বছরের ফলাফলে প্রথম ছিলেন না। কিন্তু পরের বছরগুলোতে ভালো ফল করে তিনিও স্নাতকে প্রথম শ্রেণিতে প্রথম স্থান অর্জন করেছেন।

এ বিষয়ে শীলার বক্তব্য, ‘পছন্দের বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ না পেয়ে একধরনের হতাশা ছিল। জেদ ছিল যেখানেই ভর্তি হব, সেরা হতে হবে। সেভাবেই প্রস্তুতি নিয়েছি। চার বছর ধারাবাহিকতা ধরে রাখাই কঠিন ছিল।’

দুই বোন ছোটবেলা থেকেই অন্তর্মুখী। তবে সেটা অপরিচিত লোকজনের কাছে। বন্ধুদের কাছে নীলা-শীলা মানেই অফুরন্ত প্রাণশক্তি। কলেজের অনুষ্ঠান কিংবা পারিবারিক আয়োজনের মধ্যমণি থাকেন দুই বোন। মধ্যবিত্ত পরিবারে বেড়ে ওঠা নীলা ও শীলা নিজেদের হাতখরচ চালান টিউশনি করে।

দুই বোনই আঁকাআঁকি করতে ভালোবাসেন। অনুষ্ঠানের মঞ্চ সাজানো, আনুষঙ্গিক কাজ করতে পছন্দ করেন। কাগজ, প্লাস্টিক, ব্যবহৃত বোতলের মুখ ব্যবহার করে তৈরি করতে পারেন নানা জিনিস। দুজনই বেসরকারি প্রতিষ্ঠান থেকে ইন্টেরিয়র ডিজাইনের ওপর ৩ মাসের একটি প্রশিক্ষণ কোর্স সম্পন্ন করেছেন।

নীলা ও শীলা শুধু ভালো ফল করে থেমে থাকতে চান না, কাজ করতে চান সমাজের বিভিন্ন সমস্যা সমাধানে, বিশেষ করে নারীদের সমস্যা নিয়ে। নীলা নিজের স্নাতকোত্তরের অভিসন্দর্ভের (থিসিসের) বিষয় নিয়েছেন ঢাকার গণপরিবহনে নারীদের হয়রানি এবং তা থেকে উত্তরণের উপায়কে।

তাঁদের ব্যাপারে গার্হস্থ্য অর্থনীতি কলেজের অধ্যক্ষ ফাতেমা সুরাইয়া বলেন, যমজ দুই বোনের মানসিক বিকাশ একসঙ্গে হয়েছে। নিজেদের মধ্যে খুব ভালো সম্পর্ক হওয়ার পরেও তাঁরা একে অপরকে নিজের প্রতিযোগী মনে করেছেন। দুই বোন দুই বোনকে ভালো ফল করে হারাতে চেয়েছেন। সমাজের এগিয়ে যেতে এমন সুস্থ প্রতিযোগিতাই প্রয়োজন।