সাবিনার পথ ধরে কৃষ্ণা

জাতীয় নারী ফুটবল দলের দুই স্ট্রাইকার কৃষ্ণা রানী সরকার ও সাবিনা খাতুন।  ছবি: তানভীর আহমেদ
জাতীয় নারী ফুটবল দলের দুই স্ট্রাইকার কৃষ্ণা রানী সরকার ও সাবিনা খাতুন। ছবি: তানভীর আহমেদ

টাঙ্গাইলের এক গ্রাম উত্তর পাথালিয়া। যেখানে ভোরের আলো ফুটলে চায়ের কাপ হাতে দৈনিক পত্রিকা পড়ার বিলাসিতা দেখাতে পারে না কেউ। পারবে কী করে? কোনো জাতীয় পত্রিকাই তো পাওয়া যায় না সেখানে! শহরে এসে তবেই সংগ্রহ করতে হয় পত্রিকা। যেদিন কৃষ্ণা রানী সরকারের খবর আর ছবি ছাপা হয় পত্রিকার পাতায়, বাবা বাসুদেব সরকার পড়েন মহাসংকটে। শহরে গিয়েও অনেক সময় পত্রিকা পান না। গত সপ্তাহেই যেমন হতাশ হয়ে ফিরেছেন, কৃষ্ণার খবর থাকলে নাকি টাঙ্গাইল শহরের সব পত্রিকা বিক্রি হয়ে যায় আগেভাগেই!

জাতীয় নারী ফুটবল দলের স্ট্রাইকার কৃষ্ণাকে নিয়ে গর্বের শেষ নেই এলাকাবাসীর। এবার সেই গর্বে লেগেছে নতুন রং। ভারতের মহিলা ফুটবল লিগে খেলবেন টাঙ্গাইলের এই মেয়ে। শুধু কৃষ্ণা একা নন, তাঁর সঙ্গী হচ্ছেন আরেক স্ট্রাইকার সাতক্ষীরার সাবিনা খাতুনও।

মেয়েদের জাতীয় দলের আবাসিক ক্যাম্প চলে ঢাকায় বাফুফে ভবনের চারতলায়। সেখানে একসঙ্গে থাকেন সাবিনারা। দুজনের বয়সের বেশ পার্থক্য। কৃষ্ণার চেয়ে বছর দশেক আগে খেলা শুরু করেছেন সাবিনা। কিন্তু তারপরও সাবিনা আর কৃষ্ণার মধ্যে অন্য রকম বন্ধুত্ব। মাঠের খেলায় সাবিনাকেই আদর্শ মানেন কৃষ্ণা। মাঠের বাইরেও সাবিনাকে অনুকরণ করেন! তাই তো সাবিনার আদলেই ছেলেদের মতো চুলের ছাঁট দিয়েছেন কৃষ্ণা। সাবিনা এর আগে তিনবার মালদ্বীপে ফুটবল লিগ খেলেছেন। তবে বিদেশি ক্লাবের হয়ে খেলার অভিজ্ঞতা এবার কৃষ্ণারও হতে যাচ্ছে।

গত ফেব্রুয়ারিতে সাবিনা ও কৃষ্ণাকে খেলার প্রস্তাব দিয়েছিল ভারতের মহিলা লিগের ক্লাব সেতু এফসি। ভিসার আনুষ্ঠানিকতা শেষে তামিলনাড়ুর এই ক্লাবের হয়ে খেলতে দু-এক দিনের মধ্যে ভারত যাওয়ার কথা সাবিনা ও কৃষ্ণার। গ্রুপ পর্ব হবে রাউন্ড রবিন লিগ পদ্ধতিতে। এরপর সেরা চারটি দল নিয়ে হবে নকআউট পর্ব। সেই হিসেবে গ্রুপ পর্বে ছয়টি ম্যাচ খেলার সুযোগ থাকছে দুই ফুটবলারের। আর সাবিনাদের দল সেতু এফসি নকআউট পর্বে উঠলে ম্যাচের সংখ্যা নিশ্চিতভাবে আরও বাড়বে। দুই মাসের জন্য এই দুজনের সঙ্গে চুক্তি করেছে সেতু এফসি। ২৫ মার্চ শুরু হবে লিগের খেলা।

মুড়িমুড়কির মতো গোল করে ঘরোয়া ফুটবলে এরই মধ্যে ‘গোলমেশিন’ খ্যাতি পেয়েছেন সাবিনা। কৃষ্ণাও সাম্প্রতিক সময়ে আন্তর্জাতিক ফুটবলে নিজেকে ভালোভাবে মেলে ধরেছেন। পুরুষ ফুটবলে যেখানে দেশি স্ট্রাইকাররা গোলের জন্য হাপিত্যেশ করছেন, সেখানে মহিলা স্ট্রাইকাররা যাচ্ছেন দেশের বাইরে লিগ খেলতে।

সাবিনাদের কোচ গোলাম রব্বানী তো মহাখুশি, ‘দক্ষিণ এশিয়ায় মেয়েদের ফুটবলে ওরা একটা জায়গা করে নিয়েছে। ভারতের লিগে খেলে আবারও নিজেদের প্রমাণ করুক, এটাই আমি চাই। ওদের জন্য আমার গর্ব হয়। এই দুজন যদি সেখানে ভালো খেলতে পারে, তাহলে আমাদের আরও মেয়েরা বাইরে খেলার সুযোগ পাবে। আশা করি বাংলাদেশের ফুটবলকে ওরা অনেক দূর এগিয়ে নিয়ে যাবে।’

প্রথমবারের মতো দেশের বাইরে পেশাদার ফুটবল খেলতে যাচ্ছেন কৃষ্ণা। এ নিয়ে যেন গর্বের শেষ নেই বাসুদেব সরকারের, ‘কৃষ্ণার ভারতে খেলতে যাওয়ার খবরে তো এলাকায় তোলপাড় হয়ে গেছে। সবাই খুব খুশি। আমরা ওর ভারতে যাওয়ার অপেক্ষায় আছি।’ কৃষ্ণাদের পাশের গ্রাম দক্ষিণ চাচুটিয়ার বাসিন্দা আবদুর রাজ্জাকের আনন্দ যেন ধরে না, ‘যেদিন কৃষ্ণার খেলা থাকে, আমরা টিভি খুলে বসে থাকি। আমাদের সমাজ পুরুষশাসিত। কিন্তু কৃষ্ণার খেলা দেখে আমাদের কাছে আশ্চর্য লাগে। এতটুকু মেয়ে কী চমৎকার খেলে!’

প্রথমবার পেশাদার ফুটবল খেলতে যাবে বলে কৃষ্ণার চোখে-মুখেও রোমাঞ্চের ছোঁয়া, ‘প্রথমবারের মতো ভারতের লিগে খেলতে যাচ্ছি। সেখানে নিজের সেরাটা দেওয়ার চেষ্টা করব।’

কৃষ্ণা যেখানে একেবারে নবীন, সাবিনা সেখানে বেশ অভিজ্ঞ। এর আগে মালদ্বীপে দুটি ফুটসাল টুর্নামেন্ট ও একটি প্রিমিয়ার লিগে খেলেছেন সাবিনা। দুবার হয়েছেন টুর্নামেন্টের সেরা। সব মিলিয়ে করেছিলেন ৮৭ গোল! এবারও গোল করার চ্যালেঞ্জ নিয়ে ভারতে যাচ্ছেন সাবিনা, ‘যদিও ভারত আর মালদ্বীপের ফুটবলে আকাশ-পাতাল তফাত। তারপরও আমার চেষ্টা থাকবে মালদ্বীপের চেয়ে ভালো খেলা। যেহেতু আমি একজন স্ট্রাইকার, আমার কাজই থাকবে সুযোগ পেলেই গোল আদায় করা। দলকে চ্যাম্পিয়ন করা।’

নব্বইয়ের দশকে ভারতের ইস্ট বেঙ্গল মাতিয়ে এসেছিলেন মোনেম মুন্না, শেখ মোহাম্মদ আসলামেরা। তারও আগে ১৯৭৫-৭৬ মৌসুমে কাজী সালাউদ্দিন খেলেছেন হংকংয়ের কেরোলিন হিল ক্লাবে। দেশের বাইরে ফুটবলারদের পেশাদার লিগের এই জয়যাত্রা মুখ থুবড়ে পড়েছে দীর্ঘদিন। হোক না মেয়েদের ফুটবল, তাতে কী? সাবিনা, কৃষ্ণাদের খেলতে যাওয়াটা যেন সেই পুরোনো দিনগুলোই মনে করিয়ে দিচ্ছে! তাঁদের পথ ধরে এবার বিদেশের মাটিতে পেশাদার ফুটবল খেলার স্বপ্ন দেখছেন সানজিদা, মনিকারাও। 

উঁচু পদে পুরুষের চেয়ে নারীর বেতন কম কেন?
আমি বেশ কিছু কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদে বসে জানতে চেয়েছি, একই পদে থাকা নারী কর্মকর্তা কেন পুরুষ কর্মকর্তার সমান বেতন পাবেন না। এর কোনো যুক্তিযুক্ত কারণ নেই। ইয়াহুর সাবেক সিইও ক্যারল বার্টজ। সূত্র: মানিশ ডটকম