শিক্ষার্থীদের নকশায় বধ্যভূমির ইতিহাস

শিক্ষার্থীদের সঙ্গে দুই শিক্ষক। ছবি: স্বপ্ন নিয়ে
শিক্ষার্থীদের সঙ্গে দুই শিক্ষক। ছবি: স্বপ্ন নিয়ে

একটা বদ্ধ ঘর। মেঝেটা কাচের। কাচের নিচে টলমল করছে স্বচ্ছ পানি। শান্ত পরিবেশ, যেন এই ঘরেই শান্তির একটা ঘুম দেওয়া যাবে।

১৯৭১ সালে এমনই নিস্তব্ধ পরিবেশে, ঘুমন্ত মানুষের ওপর অতর্কিত হামলা করেছিল পাকিস্তানি হানাদারেরা। সেই পরিবেশটা যেন দর্শনার্থীরা অনুভব করতে পারেন, সেভাবেই ঘরটির নকশা করেছেন ফিহাদ হাসান। এটি জিঞ্জিরা বধ্যভূমির জন্য তাঁর করা স্মৃতিসৌধের নকশার একটি ছোট্ট অংশ। ফিহাদ ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির স্থাপত্যকলার ছাত্র। তাঁর মতো আরও ১২ জন শিক্ষার্থী মোট ছয়টি বধ্যভূমি স্মরণে স্মৃতিসৌধের নকশা করেছেন। নকশায় উঠে এসেছে চুকনগর, গোলাহাট, বরইতলা, জিঞ্জিরা, মিরপুর জল্লাদখানা ও জগন্নাথ হল বধ্যভূমির চিত্র। এটি তাঁদের ‘ডিজাইন’ কোর্সের একটি প্রকল্প। শিরোনাম: মেমোরিজ আনফোল্ড।

শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে বোঝা গেল, তাঁদের কাছে এটি স্রেফ একটা প্রকল্পই নয়। মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে জানার, মুক্তির চেতনাকে জাগ্রত করার একটা সুযোগ। চার মাস ধরে তাঁরা প্রকল্পগুলো নিয়ে কাজ করেছেন। এই চার মাসে মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে তাঁদের ধ্যানধারণা বদলে গেছে অনেকখানি। সবার মুখে একই কথা, ‘এই প্রজেক্টে কাজ না করলে হয়তো গণহত্যার ভয়াবহতাটা কখনো বুঝতামই না। এখন একটু হলেও অনুভব করতে পারি।’

স্থাপত্য বিভাগের জ্যেষ্ঠ প্রভাষক ইশতিয়াক আহমেদের উদ্যোগে শিক্ষার্থীরা এসব প্রকল্পে কাজ করেছেন। ইশতিয়াক আহমেদ নিজেও বধ্যভূমি নিয়ে গবেষণা করছেন। তাই তিনি তাঁর শিক্ষার্থীদের উদ্বুদ্ধ করতে চেয়েছেন। সার্বিক সহযোগিতা করেছেন আরেক প্রভাষক এস এম রুম্মান মাশরুর চৌধুরী।

কাজ শুরুর আগে শিক্ষার্থীরা গণহত্যা সম্পর্কিত অনেক বই সংগ্রহ করেছেন, পড়েছেন, তথ্যচিত্র দেখেছেন, অযত্নে পড়ে থাকা বধ্যভূমিগুলো ঘুরে দেখেছেন, কথা বলেছেন শহীদদের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে। প্রভাষক এস এম রুম্মান মাশরুর চৌধুরী বলেন, ‘নকশা তৈরি করার আগে রিপোর্টিংয়ে যেতে হয়। সে জন্য তারা বই পড়ে, তথ্যচিত্র দেখে ও কথা বলে রিপোর্ট করেছে।’ আর এসবের মধ্য দিয়ে মুক্তিযুদ্ধকে নতুন করে জেনেছেন ১৩ তরুণ।