অসীমের পানে আসাদ

>বাংলাদেশের তরুণেরা মেলে ধরছেন নিজেদের। নানা ক্ষেত্রে তাঁদের প্রতিভা দেশের মধ্যে তো বটেই, দেশের বাইরেও দ্যুতি ছড়াচ্ছে। শোনা যাচ্ছে তারুণ্যের জয়ধ্বনি। প্রতিবছর বাংলা নববর্ষে তরুণ প্রতিভাবানদের নিয়ে বিশেষ সংখ্যা করে ‘ছুটির দিনে’। এবারও ১৪২৫ নতুন বঙ্গাব্দে ‘ছুটির দিনে’ তুলে ধরছে ক্রীড়া, সংগীত, চলচ্চিত্র, টিভি নাটক, আলোকচিত্র, সামাজিক ব্যবসা, স্থাপত্য-নানা ক্ষেত্রের উজ্জ্বল তরুণদের। অগ্রগামী এই তরুণদের জন্য আমাদের শুভকামনা। তাঁদেরই একজন আলোকচিত্রী কে এম আসাদ
কে এম আসাদ। ছবি: দিপু মালাকার
কে এম আসাদ। ছবি: দিপু মালাকার

আলোকচিত্রে আসার পেছনে বড় একটা কারণ আছে তাঁর। বলতে পারেন, এমন কারণ তো সবারই থাকে! নিশ্চয় থাকে; তবে কে এম আসাদের কারণটা ছিল ভিন্ন। তিনি ক্যামেরা কাঁধে নিয়েছেন নিজেকে আলাদা করে চেনাতে, অনেকের মধ্যে একজন হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে। আসাদের তোলা ছবিগুলো আর তাঁর বাসার তাকে থরে থরে সাজানো পুরস্কারগুলোর দিকে তাকালে আমরা এখন বুঝতে পারি, তিনি নিজের পথেই এগিয়ে চলেছেন। নিজেকে আলাদাভাবে চেনাতে পেরেছেন। গত বছর তিনি ইউনিসেফ ‘ফটো অব দ্য ইয়ার’ পুরস্কার ছাড়াও এরই মধ্যে বেশ কিছু আন্তর্জাতিক পুরস্কারও পেয়েছেন।

১৯৯৬ সালের কথা। একদিন আসাদের বাবা এমএফ-২ ইয়াশিকা ক্যামেরা হাতে ধরিয়ে দিলেন। সে-ই শুরু। তবে পেশাদার আলোকচিত্রীর জীবন বেছে নেবেন, সেটা উচ্চমাধ্যমিকের পরের সিদ্ধান্ত। ২০০২ সালে ঢাকার কবি নজরুল সরকারি কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেন আসাদ। ভাবলেন, স্নাতক পড়বেন নাকি আলোকচিত্রে পেশা গড়বেন। শেষে দুটোই শুরু করলেন। ব্যবস্থাপনায় স্নাতক করলেন সিদ্ধেশ্বরী কলেজ থেকে, বাংলাদেশে ফটোগ্রাফিক সোসাইটি (বিপিএস) থেকে করলেন আলোকচিত্রের মৌলিক কোর্স। এরপর ২০০৮ সালে আসেন পাঠশালায়। সেই সময় একটা ক্যামেরার প্রয়োজন অনুভব করছিলেন। কিন্তু অর্থ? বাসার সবার কাছ থেকে চাঁদা তুললেন। কিনলেন ভিভিটর ৩৮০০ ক্যামেরা।
ওটা দিয়েই শুরু হয়েছিল আসাদের ফটোগ্রাফির প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা।

ঘূর্ণিঝড় সিডর বাংলাদেশে আঘাত হানার সময় (২০০৭) আসাদের ফটোসাংবাদিকতার কাজ শুরু হয়। কাজ করেছেন ঢাকার সাভারে রানা প্লাজা ধসের সময়ও। রানা প্লাজায় কাজ করতে গিয়ে তিনি এক অসহায় মুহূর্তের সাক্ষী। খবর পেয়ে ধসে পড়া রানা প্লাজায় গিয়েছিলেন। পাশের ভবন দিয়ে বিধ্বস্ত ভবনের তৃতীয় তলায় ওঠেন। ছবি তুলতে গিয়ে দেখেন বিমের মধ্যে চাপা পড়ে আছে জীবিত মানুষ। ক্যামেরা ফেলে দৌড়ে যান তাঁকে উদ্ধার করতে। আগে তো মানুষ, তারপর ছবি। কিন্তু কিছুই করতে পারলেন না আসাদ। কারণ, সেখান থেকে উদ্ধার করা তখন অসম্ভব। এ ঘটনার পর মনে হয়, তিনি একজন আলোকচিত্র হলেও সবার আগে মানুষ।

আসাদ মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান। বাবা কে এম ইসহাক, মা সুলতানা রাজিয়া আর ছোট ভাই কে এম শহীদকে নিয়ে চারজনের ছোট পরিবার। পরিবারের সবাই বন্ধুর মতো। তাঁর ভালো লাগা কাজের প্রতি সবাই আস্থাশীল।

সামনের দিনগুলো ক্যামেরা কাঁধেই এগিয়ে যেতে চান আসাদ। ছবি তুলতে চলে যেতে চান পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে। এখন তিনি মূলত রোহিঙ্গা শরণার্থীদের সমসাময়িক অবস্থার চিত্র ধারণ করছেন। এটা তিনি করে যেতে চান। কেননা, ২০১২ সাল থেকেই তাদের ওপর কাজ করছেন আসাদ। তবে এ বছর একটা নতুন কাজ করার পরিকল্পনা আছে তাঁর। সেটা পরিবেশ নিয়ে, পরিবর্তনশীল পরিবেশের ওপর। আমরাও চাই প্রকৃতির মতোই সবুজ হোক আসাদের পথচলা।

লেখক: আলোকচিত্রী