মায়ের কোনো ডে অফ-মুড অফ নেই

অলংকরণ : মাসুক হেলাল
অলংকরণ : মাসুক হেলাল

মা অত্যন্ত ভালো মানুষ। এঁরা অতি নরম স্বভাবের হন। সাধারণত উদয়াস্ত পরিশ্রম করেন। তবু শুনতে হয়, আমার মা কিছুই করেন না, পেশা-গৃহিণী। 

উদয়াস্ত পরিশ্রম করলে কী হবে, মায়েদের খাবার দিতে হয় খুউব কম। সাধারণত পরিবারের সবাই খাওয়ার পর যা উদ্বৃত্ত থাকে, তা-ই এঁরা খান; উদ্বৃত্ত না থাকলেও কারও কাছে তাঁদের কোনো অভিযোগ থাকে না।

মায়েদের কোনো ডে অফ নেই, মুড অফও নেই। আল্লাহর ত্রিশটা দিনই তাদের কাজ করতে হয়। যদিওবা কোনো দিন অসুখ-বিসুখ করে, সাধারণত তারা মুখ ফুটে বলেন না। একান্ত বিছানায় পড়ে গেলে পাড়ার ডিসপেনসারি থেকে ওষুধ কিনে এনে দিলেই হয়।

মায়েদের সাধারণত নতুন কোনো জামাকাপড় না দিলেও চলে। এঁরা একই কাপড় যত দিন ব্যবহার করা যায় পরতে থাকেন। এমনকি উৎসব-পার্বণেও তাঁদের নতুন কাপড় দরকার হয় না। বিয়ের সময় বা তার পরপর তাঁদের মায়েদের কাছ থেকে পাওয়া নতুন কাপড় তাঁরা পরম যত্নে রেখে দেন। বছরের পর বছর এসব কাপড় পরেই তাঁরা উৎসব পাড়ি দেন। একান্ত জোরাজুরি করলে পরিবারের সবাইকে দেওয়ার পর একখানি প্রিন্টের শাড়ি পাইলেই পছন্দ-অপছন্দের কথা বাদ দিয়ে এঁরা খুশিতে আটখানা হওয়ার ভাব নিয়ে কাজ করে যান।

অলংকারের ক্ষেত্রেও মায়েদের প্রায় একই চাহিদা। এঁরা বাপ বা স্বামীর কাছে যে অলংকার পেয়েছিল, তাই দিয়েই বাকি জীবন কাটিয়ে দেন। অধিকন্তু সেই অলংকার সারা জীবন যক্ষের ধনের মতো সংরক্ষণ করেন। সন্তানের বিপদের দিনে নিজের শেষ সম্বল হিসেবে রাখা হাতের বালা থেকে শুরু করে তোরঙ্গে রাখা বিয়ের অলংকার বের করে এনে দেন। বিপদে কাজে না লাগলে বিয়ের সময় মেয়েকে অথবা ছেলের বৌকে নিজের অলংকার পরিয়ে দিয়ে স্বস্তি পান।
মায়েরা পারতপক্ষে কোথাও বেড়াতে যেতে চান না। বেড়াতে গেলেই সন্তানের অযথা অর্থ নষ্ট-এই ভেবে যুগের পর যুগ তাঁরা চার দেয়ালের মধ্যেই কাটিয়ে দেন।

আমাদের অনেক মা-ই পড়াশোনা তেমন করেন নাই। কিন্তু নিজের ছেলেমেয়েদের সুশিক্ষায় শিক্ষিত করতে এঁদের চেষ্টার অন্ত নাই। পরীক্ষার সময় বিশেষ যত্ন নেওয়ার কমতি থাকে না। বর্তমান কালের মায়েরা এ ক্ষেত্রে অনেক এগিয়ে। সেই সাত সকালে সন্তানকে স্কুলে নিয়ে যাওয়া থেকে শুরু করে বিকেল-সন্ধ্যায় কোচিংয়ে দৌড়াদৌড়ি-সবই এঁরা হাসিমুখে করে থাকেন। এই দৌড়াদৌড়ির ফল যদি একটু ভালো হয়, মনে হয় এঁরাই বুঝি জিপিএ ফাইভ পেয়েছেন। ফল খারাপ হলে সব দোষ গিয়ে পড়ে তাঁদেরই ঘাড়ে-যেমন মাও, তেমন ছাও!

আমরা অনেকেই ‘সুশিক্ষিত’ হওয়ার পর ফ্ল্যাট বাসায় মাকে ‘গৃহকর্মীর’ চাকরি দিয়ে থাকি। বেশি ঘ্যানরঘ্যানর করলে অনেক সময় তাঁর জন্য আরও সুন্দর ব্যবস্থা করি। তখন তাঁকে ‘শেষবেলা’ টাইপের কোনো সুন্দর নাম দেখে ওল্ডহোমে পাঠিয়ে দিই। আর এর জন্য মাস মাস মূল্যবান অর্থ-খরচ জোগাই।
সবশেষে আজকাল নিজেদের আপ-টু-ডেট প্রমাণ করার জন্য বছরে একদিন ‘মাদার্স ডে’ পালন করি। এদিন তাঁদের সঙ্গে থাকা সুন্দর সুন্দর ছবি দিয়ে ফেসবুকের হোমপেজ ভরিয়ে ফেলি।

এত কিছুর পরও মায়েরা হাসিমুখে সেসব ছবিতে পোজ দিয়ে দেখানোর চেষ্টা করেন তিনি মহাসুখে আছেন। আসুন না বছরের এই একটি দিন ‘মা দিবসে’ অন্তত মায়ের এই ভূমিকার কথা ভাবি। আসুন মাকে সারা বছর ভালোবাসার কথা বলি।