মাছ খেতে ভালো লাগে না

মাংস, ডাল বা সবজিই নয়, সন্তানকে মাছ খাওয়ানোর অভ্যাসও করতে হবে। মডেল: বিদুষী। ছবি: অধুনা
মাংস, ডাল বা সবজিই নয়, সন্তানকে মাছ খাওয়ানোর অভ্যাসও করতে হবে। মডেল: বিদুষী। ছবি: অধুনা

হারিয়ে গেছে অনেক প্রজাতির মাছ। তবে মাছের পুষ্টিগুণ আছে আগের মতোই। মাছ শুধু পুষ্টিকরই নয়, সহজপাচ্যও বটে। অথচ এখনকার অনেক শিশুই মাছ খেতে চায় না।অনেক বাবা-মা মনে করেন মাছের চেয়ে দুধ, ডিম, মাংস বেশি ভালো। আর মাছে কাঁটা থাকায় অনেকে তা এড়িয়ে যান। কেউ কেউ ভাবেন, অন্য খাবার দিয়ে যেহেতু আমিষের ঘাটতি পূরণ হচ্ছে, তাহলে কাঁটাযুক্ত মাছ খাওয়ার ঝুঁকি নেব কেন? তাঁদের জন্য পরামর্শ হলো, আমিষ ছাড়াও মাছে কিছু গুরুত্বপূর্ণ উপাদান যা একজন শিশুর বুদ্ধি বিকাশসহ অনেক কাজে সাহায্য করে; যা দুধ, ডিম, মাংসে থাকে না। তাই শিশুর বুদ্ধি বিকাশে মাছ খাওয়ানোর অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে।
বারডেম জেনারেল হাসপাতালের প্রধান পুষ্টিবিদ আখতারুন নাহার বলেন, মাছে একধরনের ডোকোসাঙেনোয়িক অ্যাসিড নামে ফ্যাটি অ্যাসিড পাওয়া যায়। যা মায়ের গর্ভকালীন ও পরবর্তী সময়ে শিশুর বুদ্ধি বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তাই মা ও শিশু উভয়েরই নিয়মিত মাছ খাওয়া উচিত।
গবেষণায় দেখা গেছে যে যুক্তরাষ্ট্রের শিশুর তুলনায় জাপানের শিশুরা বেশি বুদ্ধিসম্পন্ন হয়ে থাকে, কারণ তারা প্রচুর মাছ খায়। যেসব মা ও শিশু মাছ খায় না, তাদের শিশুদের বুদ্ধি যারা নিয়মিত মাছ খায়, তাদের তুলনায় কম হয়।
সত্যি কথা হলো, হঠাৎ করে কোনো কিছুরই অভ্যাস গড়ে ওঠে না। তেমনি ছোটবেলা থেকে মাছ না খেলে, খাওয়ার অভ্যাস না করালে বা এড়িয়ে গেলে হঠাৎ করে এই অভ্যাস গড়ে তোলা যায় না। তাই শিশুকে একটু একটু মাছ খাওয়ানোর অভ্যাস করাতে হবে।

তৈরি হোক মাছ খাওয়ার অভ্যাস
শিশুকে পরিবারের সবার সঙ্গে একটু একটু করে মাছ খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে।
 প্রথমে একটু ধৈর্য ধরে কাঁটা বেছে বেছে শিশুকে খাওয়াতে হবে।
 সরাসরি মাছ পছন্দ না করলে তাঁদের একটু ভিন্নভাবে যেমন মাছ ভাজা, মাছের কাটলেট, ফিশ বল তৈরি করে দেওয়া যেতে পারে।
 প্রয়োজনে কাঁটাওয়ালা মাছ বেটে মাছের চপ, কাটলেট ইত্যাদি করে খাওয়ানো যেতে পারে।
 দই-ইলিশ করে খাওয়ানো যেতে পারে।
 শিশুরা একই খাবার সাধারণত বারবার খেতে পছন্দ করে না। সে ক্ষেত্রে মাছ নানাভাবে রান্না করে দেওয়া যেতে পারে।
 যেকোনো মাছের কাঁটা ছাড়িয়ে সামান্য গোলমরিচ, ধনেপাতা, পুদিনাপাতা, লবণ দিয়ে সেদ্ধ করে গোল গোল বল করে তেলে ভেজে নিন। এভাবে ফিশ বল, মাছের চপ, স্যান্ডউইচ তৈরি করা যেতে পারে।
 টেবিলে একসঙ্গে মাছ, মাংস, ডিম না রেখে ভিন্ন বেলা ভিন্ন খাবার রাখলে শিশুরা বাধ্য হয়েও মাছ খেতে অভ্যস্ত হয়।
অন্যান্য
সপ্তাহের খাদ্যতালিকায় পাঁচ দিন হলেও এক বেলা মাছ রাখা উচিত। নিয়মিত মাছ খেলে স্বাভাবিকের চেয়ে অন্তত দুই বছর বেশি আয়ুর অধিকারী হওয়া যায় বলে দাবি করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের হার্ভার্ড স্কুল অব পাবলিক হেলথের গবেষকেরা। বিশেষত ৬৫ বছর বা এর বেশি বয়সী মানুষের ক্ষেত্রে মাছের এই উপকারিতা বেশি বলে গবেষণা প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, যেসব সামুদ্রিক মাছে ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড রয়েছে, সেসব মাছ খেলে হার্ট বা হূদ্যন্ত্র ভালো থাকে এবং হূদেরাগের ঝুঁকি ৩৫ শতাংশ কমে। এ ছাড়া মাছের এই উপাদান মানবদেহে যেকোনো রোগের ঝুঁকি ২৭ শতাংশ কমায় এবং বয়স্কদের আয়ু গড়ে দুই বছর ১০ সপ্তাহ বাড়িয়ে থাকে।
গ্রন্থনা: শরিফুল ইসলাম