চাকরি হাজির

বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের বুথ ঘুরে দেখেছেন শিক্ষার্থীরা। ছবি: সংগৃহীত
বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের বুথ ঘুরে দেখেছেন শিক্ষার্থীরা। ছবি: সংগৃহীত

‘সদ্য এমবিএ করা একজন যুবক। অনেক জোরাজুরি করে তাকে গার্মেন্টসে চাকরি করতে রাজি করানো হয়েছে। এক সপ্তাহ সে চাকরি করল। পরদিন পদত্যাগপত্র জমা দিয়ে চলে এল। কারণ শ্বশুরবাড়ির লোকজন তার এই চাকরিতে আপত্তি জানিয়েছে। এমবিএ করা একটা ছেলে কিনা গার্মেন্টসে চাকরি করবে! শুনতে কেমন লাগে!’

প্রথম আলো যুব কর্মসূচির সমন্বয়ক মুনির হাসানের গল্পে মিলনায়তনে হাসির রোল পড়ে গেল। দর্শক-শ্রোতাদের হাসি থামলে তিনি বললেন, ‘দেখো। এখানেই আমাদের সমস্যা। আমরা কিন্তু তিন-চারটা ক্ষেত্র ছাড়া অন্যদিকে নজর রাখছি না। একটা উদাহরণ দিই। গার্মেন্টসের মতো একটা ভালো খাতে আমাদের শিক্ষিত তরুণেরা যায় না। বড় বড় পদ দখল করে আছে অন্য দেশের মানুষ।’

বিশেষ অতিথি হিসেবে মুনির হাসান কথা বলছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যারিয়ার ক্লাব আয়োজিত ক্যারিয়ার ফেস্টে। ১৬ ও ১৭ জুলাই এই ফেস্ট আয়োজন করা হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসিতে। উদ্বোধন করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মোহাম্মদ আখতারুজ্জামান। আয়োজনটির সহযোগী ছিল প্রথম আলো

বৃষ্টিস্নাত সকালে টিএসসিতে ধীরে ধীরে ভিড় বাড়তে থাকে। ছাতা মাথায় দাঁড়িয়ে ছিলেন অর্থনীতি বিভাগের পুষ্পিতা চৌধুরী। অনুষ্ঠানে বিনা মূল্যে চা-পানের ব্যবস্থা ছিল। এক চুমুক দিয়ে মজা করে বললেন, ‘সুখের জীবন শেষ! এখন তো ক্যারিয়ারের পেছনে ছুটতেই হবে। আসলাম কিছু সফল মানুষের গল্প শুনতে। নিশ্চয়ই ভবিষ্যতে কাজে লাগবে।’

পুষ্পিতা টিএসসি মিলনায়তনে ঢুকে গেলেন। আমরা পা বাড়াই সামনের দিকে। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের বুথ বসেছে। সেখানে আগ্রহীরা সিভি জমা দিচ্ছেন। একটি বুথের সামনে দেখা গেল, সিভি জমা দিলেই চকলেট দেওয়া হচ্ছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তড়িৎ প্রকৌশল বিভাগের এক ছাত্রী হাসতে হাসতে বলছিলেন, ‘সিভি দেওয়ার পরই মিষ্টিমুখ করিয়ে ফেলল! চাকরি পাই বা না পাই পরের বিষয়, আয়োজনটা দারুণ। কোনো ঝুটঝামেলা নেই। এক জায়গায় অনেকগুলো প্রতিষ্ঠান চলে এসেছে। নিজের যোগ্যতা অনুযায়ী সিভি দেওয়া যাচ্ছে।’

এই শিক্ষার্থীদের কথার সঙ্গে মিল খুঁজে পাওয়া গেল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যারিয়ার ক্লাবের সভাপতি মোহাম্মদ মুহাইমিনুল ইসলামের বক্তব্যে। তিনি ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড ইনফরমেশন সিস্টেম বিভাগের শিক্ষার্থী। বলছিলেন, ‘মূলত একটা সেতুবন্ধ তৈরি করা এবং সে অনুযায়ী যেন শিক্ষার্থীরা নিজেদের প্রস্তুত করতে পারে—এই দুই দিক মাথায় রেখে এ আয়োজন।’

দুজনের সঙ্গে কথা শেষ করে সামনে এগোতেই দেখি মূল ফটকের কাছে হইচই। কে যেন চিৎকার করে বলল, ‘নায়ক সিয়াম এসেছেন!’ সমাপনী দিনের অন্যতম প্রধান আকর্ষণ ছিলেন এই তারকা। আরও ছিলেন আলোকচিত্রী প্রীত রেজা। দুজনের সেশনেই ছিল উপচে পড়া ভিড়। সব মিলিয়ে গল্প–আড্ডার ছলে ক্যারিয়ারের পাঠ নিয়েছেন শিক্ষার্থীরা।