যাচ্ছি যুক্তরাষ্ট্রে

মার্কিন রাষ্ট্রদূত মার্শা বার্নিকাটের সঙ্গে আমন্ত্রিত শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা ও অতিথিরা। ছবি: সংগৃহীত
মার্কিন রাষ্ট্রদূত মার্শা বার্নিকাটের সঙ্গে আমন্ত্রিত শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা ও অতিথিরা। ছবি: সংগৃহীত

তরুণদের মুখগুলোতে কোথায় যেন মিল। একেকজন একেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পড়েছেন। এসেছেন দেশের নানা প্রান্ত থেকে। গত বৃহস্পতিবার তাঁদের জন্য একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছিল ঢাকার আমেরিকান সেন্টারে। অনুষ্ঠানের ফাঁকে যখন নাশতাপর্ব চলছে, এই সুযোগে তাঁরা একে অপরের সঙ্গে পরিচিত হয়ে নিলেন।

পরিচয়পর্বের সুযোগটি তৈরি করে দিয়েছিল মার্কিন দূতাবাসের এডুকেশন ইউএসএ বিভাগ। কিছুদিনের মধ্যেই এই তরুণেরা যুক্তরাষ্ট্রে রওনা হবেন। প্রত্যেকেই সে দেশের কোনো না কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে যাচ্ছেন। কেউ কেউ যাচ্ছেন গবেষণা করতে। জীবনের নতুন একটা যাত্রা শুরু হচ্ছে। তাই বোধ হয় চাপা রোমাঞ্চ খেলা করছিল অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত প্রত্যেক তরুণের চোখেমুখে। মিলটা আসলে এখানেই।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী ছিলেন জান্নাতুল ফেরদৌস। যুক্তরাষ্ট্রে যাচ্ছেন ভূমি ও বায়ুমণ্ডলবিজ্ঞান নিয়ে পড়ালেখা করবেন বলে। প্রশ্ন করলাম, ‘সেখানে গিয়ে তো আপনাকেও নতুন ভূমি, নতুন বায়ুমণ্ডলের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে হবে। কেমন লাগছে?’ হেসে বললেন, ‘রোমাঞ্চটা ভালোভাবেই টের পাচ্ছি।’ বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় থেকেই গবেষণার ওপর বিশেষ জোর দিয়েছিলেন জান্নাতুল। তার পুরস্কার হিসেবে পূর্ণ বৃত্তি নিয়েই তিনি পা রাখছেন আমেরিকায়। সেখানে কাজ করবেন গবেষণা সহকারী হিসেবে।

খুলনা প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী তুনাজ্জিনা বিনতে আলম স্নাতক করেছেন নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগ থেকে। পূর্ণ বৃত্তি নিয়ে একই বিষয়ে স্নাতকোত্তর করতে যাচ্ছেন। তাঁর গন্তব্য—ইউনিভার্সিটি অব আইওয়া। মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্র মো. নূর নবী, চট্টগ্রাম প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (চুয়েট) আসিফ শাহজালাল, তাঁরাও এখন ব্যাগ গোছাচ্ছেন যুক্তরাষ্ট্রে যাবেন বলে। দুজনই গবেষণা করতে আগ্রহী।

আমন্ত্রিত ৭৫ জন তরুণের মধ্যে সবাই যে স্নাতকোত্তর কিংবা পিএইচডি করতে যাচ্ছেন, তা নয়। গত বছর ঢাকা সিটি কলেজ থেকে উচ্চমাধ্যমিক পাস করেছেন অর্চি অর্ণব। পূর্ণ বৃত্তি নিয়ে অর্থনীতি পড়তে যাচ্ছেন যুক্তরাষ্ট্রে। স্কুল-কলেজে বিভিন্ন সহশিক্ষা কার্যক্রমে যুক্ত ছিলেন। এই বাড়তি যোগ্যতা তাঁকে বৃত্তি পেতে সাহায্য করেছে। অর্চি বললেন, ‘পড়ালেখার পাশাপাশি আমি টিউশনি করতাম। আবেদন প্রক্রিয়ায় আমার এই অভিজ্ঞতার কথা লিখেছিলাম। মজার ব্যাপার হলো, এই বিষয়টি ওরা খুব গুরুত্বসহকারে বিবেচনা করেছে। তবে আবেদন প্রক্রিয়াটা সহজ ছিল না। আমার যেহেতু শুরু থেকেই ইচ্ছা ছিল যুক্তরাষ্ট্রে পড়ব, তাই আর কোথাও ভর্তি হওয়ার চেষ্টা করিনি।’

গত ৫ বছরে যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের সংখ্যা ৫০ শতাংশের বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে। স্নাতকোত্তর পর্যায়ে যুক্তরাষ্ট্রে যত বিদেশি ছাত্রছাত্রী আছেন, তাঁদের মধ্যে সংখ্যার দিক দিয়ে বাংলাদেশের অবস্থান নবম। তথ্যটা দিলেন স্বয়ং ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত মার্শা বার্নিকাট। আমেরিকাগামী এই তরুণদের সঙ্গে কথা বলতে তিনি এসেছিলেন। হাসিমুখে ছবি তুলেছেন, অভিনন্দন জানিয়েছেন। চমৎকার একটা বক্তৃতাও দিয়েছেন। বার্নিকাট বলছিলেন, ‘তোমরা যে যুক্তরাষ্ট্রে পড়তে যাচ্ছ, এটা কিন্তু শুধু সুযোগ নয়, অনেক বড় দায়িত্বও। যখন তুমি দোকানে কেনাকাটা করবে, যখন তুমি কোনো অনুষ্ঠানে যাবে, প্রতি মুহূর্তেই মনে রেখো, তুমি বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করছ। তোমার একটা গৌরবের ইতিহাস আছে। তুমি তোমার ইতিহাসটা বাইরের দেশের মানুষকে জানানোর একটা সুযোগ পাচ্ছ। এই সুযোগটা কাজে লাগিয়ো।’ ইংরেজিতে পুরো বক্তৃতার শেষে তিনি বাংলায় বললেন, ‘অনেক ধন্যবাদ। আবার দেখা হবে।’

যুক্তরাষ্ট্র থেকে পড়ালেখা করে আসা প্রাক্তন ছাত্ররাও বলেছিলেন আবার দেখা হওয়ার প্রত্যাশার কথা। নিজেদের অভিজ্ঞতা ভাগাভাগি করে নিতে তাঁদের কেউ কেউ অনুষ্ঠানে এসেছিলেন। আমেরিকান অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের সেক্রেটারি আরেফীন সৈয়দ তাঁর বক্তৃতায় বললেন, ‘তোমরা যেন পড়ালেখা শেষে দেশে ফিরে এসে দেশের জন্য কিছু করতে পারো, এই বিষয়টি সব সময় মাথায় রেখো।’ অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন এডওয়ার্ড এম কেনেডি সেন্টার (ইএমকে সেন্টার) ও মার্কিন দূতাবাসের কর্তাব্যক্তিরা। সবাই জানিয়ে দিলেন, শিক্ষার্থীদের কোনো সহযোগিতা বা জিজ্ঞাসার জন্য তাঁদের দরজা সব সময় খোলা।