ওদের দেশ গড়তে দিন

নিরাপদ সড়ক চাই আন্দোলনে স্কুল-কলেজের ছাত্রছাত্রীদের প্রতিবাদ। ছবি: সারাবন তুরিন
নিরাপদ সড়ক চাই আন্দোলনে স্কুল-কলেজের ছাত্রছাত্রীদের প্রতিবাদ। ছবি: সারাবন তুরিন

দুই বছর আগেই পড়াশোনা শেষ। হবিগঞ্জ পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট থেকে কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল পড়েছি। আমি আবার উদ্যোক্তা, ব্যবসায়ীও। চার বছর ধরে তথ্যপ্রযুক্তি খাতে কাজ করছি। পাঠশালা সাউথ এশিয়ান মিডিয়া ইনস্টিটিউট থেকে আলোকচিত্র নিয়ে পড়ার পর আলোকচিত্রী হিসেবে কাজও করেছি। পাঠশালার একজন অ্যালামনাই আমি। মাঝে দুই বছর ফটোগ্রাফি করিনি।

কয়েক দিন ধরে দেখছিলাম দেশের পরিস্থিতি। শিক্ষার্থীদের বাসচাপায় মৃত্যু খুবই দুঃখজনক, মেনে নেওয়া কঠিন। ভাবলাম আন্দোলনরত শিশু-কিশোরদের দেখে আসি, কী করছে তারা। আমি যেহেতু বয়সে বড়, মানে স্কুল-কলেজ পেরিয়ে এসেছি, তাই মনে হলো আমাদের প্রতিবাদ করার একটাই অস্ত্র-ক্যামেরা। নেমে পড়লাম বন্ধুরা। ঢাকা কলেজ, টিএসসি থেকে কাউকে না পেয়ে বাসার দিকে ফিরছিলাম বাসে। বাসটাও ভাঙা ছিল। আমার বন্ধু অনুরব এ ভাঙা বাসের ছবি তুলছিল। হঠাৎ ধানমন্ডির ল্যাব এইডের সামনে থেকে চিৎকার শুনলাম। লাফ দিয়ে নামলাম সবাই। ওদের মতো ওরা কাজ করছিল। হঠাৎ পুলিশ এসে আমাদের মধ্য থেকে বাচ্চাদের মারছিল। ধরে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছিল। আমরা নিজেরাই ওই ভাইদের টেনে এনেছি। সেই মুহূর্তে মনে হয়েছিল, আমাদের ছবি তোলার থেকে ওই ছাত্রের জীবন অনেক দামি। ৩১ জুলাই এভাবে ওদের বোন হয়ে যাই আমরা।

এর আগে আন্দোলন দেখেছি অনেক। ক্যাম্পাসে তো কত কিছুই হয়। আমাদের ডিপ্লোমা প্রকৌশলীদের দ্বিতীয় থেকে তৃতীয় শ্রেণি করা হলো। তখন আমরাও আন্দোলন করেছি রাস্তায়।

ব্যক্তিগতভাবে আমি ‘মেয়ে’ এই মানসিকতা নিয়ে বড় হইনি। আমার মা-বাবা দুজনই শিক্ষক। খারাপ-ভালো বোঝার ক্ষমতা রাখি। দুই ভাইয়ের একমাত্র বোন হয়ে হারতে শিখিনি। ছেলেবেলা থেকেই এমন ছিলাম।

এখন আন্দোলনরত এই ছোট ছোট শিক্ষার্থীদের দেখে অবাক হচ্ছি। এত সুন্দর রাস্তা আমি কোনো দিন দেখিনি ঢাকায়। এমনকি আমার মা, সহযোগী বন্ধু কেউই দেখেনি। আহা কী প্রাণ এই শহরের।

একটা সুন্দর স্বাভাবিক জীবন পাওয়ার অধিকারের কথা তো বলতেই পারি একজন বাংলাদেশি হিসেবে। ওরা সবাই মিলে একটা সূর্য। এই সূর্য উঠতে দিন। পুলিশের একটা হাত যেন ওদের গায়ে না পড়ে। প্লিজ। অনেক কিছু শেখার আছে ওদের কাছ থেকে। দেশটা গড়ার বাকি এদের। করতে দিন। গড়তে দিন। গায়ে হাত দিয়ে নয়, মাথায় হাত বুলিয়ে।

ইতিহাস যতটুকুই জানি, আমরা হার মানি না।

অনেক ভালোবাসা, শ্রদ্ধা সবার প্রতি। দেশটা আমার, দায়টাও আমার।