রাশিয়ায় ব্রোঞ্জ জয়

ইয়াকুতিয়া আন্তর্জাতিক বিজ্ঞান মেলায় ব্রোঞ্জ পদকজয়ী সেন্ট যোসেফ হায়ার সেকেন্ডারি স্কুলের তিন শিক্ষার্থী। বাঁ থেকে অদ্রি, মাশরুর ও শিহাব
ইয়াকুতিয়া আন্তর্জাতিক বিজ্ঞান মেলায় ব্রোঞ্জ পদকজয়ী সেন্ট যোসেফ হায়ার সেকেন্ডারি স্কুলের তিন শিক্ষার্থী। বাঁ থেকে অদ্রি, মাশরুর ও শিহাব

ছোটবেলা থেকেই বিভিন্ন বিজ্ঞান মেলায় অংশ নিত সেন্ট যোসেফ হায়ার সেকেন্ডারি স্কুলের অদ্রি প্রিয়ম ভৌমিক। ভূমিকম্পের ‘অ্যালার্ম’-এর মতো ছোটখাটো প্রকল্প নিয়ে হাজির হয়ে যেত নানা প্রতিযোগিতায়। একটু একটু করে সে বুঝতে পারে, নতুন কিছু উদ্ভাবন করতে হলে জানার পরিধিটা আরও বড় করতে হবে। সেই ভাবনা থেকেই অদ্রি ও তার দুই বন্ধু মাশরুর আহমেদ এবং মো. শিহাব সারার বের করে ফেলে ক্যাডমিয়ামমুক্ত (বিষাক্ত মৌলিক পদার্থ) বিশুদ্ধ পানি পাওয়ার উপায়। তিনজনই ঢাকার সেন্ট যোসেফ হায়ার সেকেন্ডারি স্কুলের দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী।

রাশিয়ার ‘ইয়াকুতিয়া আন্তর্জাতিক বিজ্ঞান মেলা’ থেকে ব্রোঞ্জ পদক নিয়ে ফিরেছে তিন কিশোরের এই উদ্ভাবন। বাংলাদেশ থেকে প্রথমবার অংশ নিয়েই একটা পুরস্কারসহ ফেরা কিন্তু কম কথা নয়!

রাশিয়ার ইয়াকুতিয়া শহরটা রাজধানী মস্কো থেকে প্রায় ৬ হাজার মাইল দূরে। ছোট্ট শহরটি তখনো বিশ্বকাপের উন্মাদনায় মত্ত। এর মধ্যেই গত ৮ থেকে ১৫ জুলাই শহরের তিনটি আলাদা ভেন্যুতে বসেছিল ‘ইয়াকুতিয়া ইন্টারন্যাশনাল সায়েন্স গেমস ২০১৮।’ ১০টিরও বেশি ভিন্ন রকমের প্রতিযোগিতা, স্কুলের শিক্ষার্থীদের নিয়ে সম্মেলন, গণবক্তৃতা এবং মাস্টার ক্লাস নিয়ে গড়া এই সায়েন্স গেমসকে বলা হয়ে থাকে ইউরোশিয়ার সবচেয়ে বড় বিজ্ঞান-সংক্রান্ত মিলনমেলা। বেশ কয়েকটি স্কুল ও বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগিতায় প্রতিবছর ‘গভর্নমেন্ট রিপাবলিক অব সাখার (ইয়াকুতিয়া)’ আয়োজন করে। এবারের গেমসে মোট ৩৪টি দেশ থেকে স্কুল, কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা অংশ নেন।

শিক্ষার্থীদের উপস্থাপিত প্রকল্পের নকশা
শিক্ষার্থীদের উপস্থাপিত প্রকল্পের নকশা

ইয়াকুতিয়া সায়েন্স গেমসের সবচেয়ে বড় আকর্ষণ ছিল এই ‘ইয়াকুতিয়া ইন্টারন্যাশনাল সায়েন্স ফেয়ার’। বাংলাদেশ ছাড়াও সিঙ্গাপুর, ইতালি, তাইওয়ান, রাশিয়া, কাজাখস্তানসহ ২২টি দেশের শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণ ছিল এবারের বিজ্ঞান মেলায়। প্রত্যেকেই প্রথমে তাদের প্রস্তাবগুলো প্রথমে অনলাইনে উপস্থাপন করেছে। নির্বাচিত হওয়ার পর সুযোগ পেয়েছে চূড়ান্ত প্রতিযোগিতায়।

দেশে ফেরার পর কথা হলো বাংলাদেশ দলের দলনেতা প্রিয়মের সঙ্গে। তার মুখ থেকেই শোনা যাক বিস্তারিত—‘আমাদের উদ্ভাবিত পদ্ধতির নাম ছিল “ইফিশিয়েন্ট রিমুভাল অব ক্যাডমিয়াম ফ্রম ওয়াটার ইউজিং ম্যাগনেটিক রেজোন্যান্স অ্যান্ড অ্যালগি অ্যাডজরপশন”। মূলত অনেক শক্তির ডোনাট আকৃতির তড়িৎ-চুম্বক ব্যবহার করে তার মধ্য দিয়ে পানি চালনা করলে ক্যাডমিয়াম চুম্বক দ্বারা বিকর্ষিত হয়ে পাত্রের তলায় থেকে যাবে। পাওয়া যাবে বিশুদ্ধ পানি—এটাই ছিল আমাদের মূল ধারণা।’ শুধু ক্যাডমিয়াম নয়, চুম্বকের বিকর্ষণের কারণে জিংক বা সিসার মতো বিষাক্ত পদার্থগুলোও থেকে যায় পাত্রের তলায়। আর লোহার কণাগুলো আকৃষ্ট হয়ে লেগে যায় চুম্বকের গায়ে। পানি বিশুদ্ধ করার এমন অভিনব ধারণা দিয়েই ব্রোঞ্জ জিতে নেয় প্রিয়মরা।

মূলত চারটি ধাপে বিচারকাজ সম্পন্ন হয় এই প্রতিযোগিতার। মাশরুর বলল, ‘অনলাইন সাবমিশনে নির্বাচিত হওয়ার পর অনুষ্ঠানস্থলে আমাদের প্রথম রাউন্ড ছিল ৯ জুলাই, একটি পাওয়ার পয়েন্ট উপস্থাপন। যেখানে স্থানীয় এবং আন্তর্জাতিক বিচারকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দিতে হয়।’

শিহাব বলল, ‘এই রাউন্ড শেষে আমাদের ইভেন্টের ভেন্যু ট্রায়াম্ফ স্পোর্টস সেন্টারে একটি স্টল বানিয়ে দেওয়া হয়। সেখানে চলে পোস্টার উপস্থাপন। যেটা ধাপে ধাপে স্থানীয় রুশ বিশেষজ্ঞদের সামনে, রাশিয়ার বাইরে থেকে আসা বিচারকদের সামনে এবং সবশেষে রুশ জনসাধারণদের সামনে পোস্টারের মাধ্যমে উপস্থাপন করতে হয়।’ এই লম্বা বিচারপ্রক্রিয়া শেষে ১৩ জুলাই সন্ধ্যায় আসে সুখবর—ব্রোঞ্জ জিতেছে বাংলাদেশ দল!

প্রতিযোগিতায় স্বর্ণপদক জিতেছে সিঙ্গাপুরের শিক্ষার্থীদের একটি দল। তাইওয়ান জিতেছে রৌপ্য এবং রাশিয়া পেয়েছে সম্মানজনক পুরস্কার।