শেখ সোরাব-শেখ রুস্তম

গোপালগঞ্জ শহরে কিছু দিন ধরেই বেশ উত্তেজনা। প্রতিবছর এই সময়টায় ফুটবল টুর্নামেন্ট হয়। এ জেড খান শিল্ড। বেশ জমজমাট ফুটবল টুর্নামেন্ট। চোঙামতোন একটা মাইক হাঁকিয়ে শহরের অলিতে-গলিতে ঘোষণা করা হয়: ভাইসব, ভাইসব অদ্য বিকাল চার ঘটিকায়, ঈদগাহ ময়দানে গোপালগঞ্জ ফুটবল শিল্ড টুর্নামেন্টের খেলা অনুষ্ঠিত হইবে। ভাইসব, ভাইসব। উক্ত খেলায় অংশগ্রহণ করিবে...। আপনারা সবান্ধবে আমন্ত্রিত। ভাইসব, ভাইসব...।

মাইকিং করার দরকার ছিল না। এমনিতেই এবার মানুষের ঢল নেমেছে। বিশেষ করে দুটি দল নিয়ে সবার মধ্যে বেশ কৌতূহল। একটা দল অফিসার্স ক্লাব। শহরের সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নিয়ে গড়া দল। আরেকটা দল একেবারেই বয়সে কিশোর। গোপালগঞ্জ মিশন স্কুলের ছাত্রদের নিয়ে গড়া।

অফিসার্স ক্লাবের টাকা আছে। তারা সুযোগ বুঝে অন্য শহর থেকে ভালো ভালো খেলোয়াড় ‘হায়ার’ করে আনে। প্রায় ম্যাচেই তিন-চারজন দুর্দান্ত খেলোয়াড় থাকে। মিশন স্কুলের ছেলেপুলেদের কি আর অত টাকা আছে? তাদের একটাই দল।

তবে স্কুলের ক্যাপটেন যেন সত্যিকারের নেতা। তার দূরদৃষ্টি অন্য রকম। মহকুমায় যারা খুব ভালো খেলত, তাদের সে এনে ভর্তি করায় নিজের স্কুলে। বেতন ফ্রি করে দেওয়ার ব্যবস্থাও করায়। এ কারণে তাদের দলটা হয়ে উঠেছে দুর্দান্ত।

এ কারণেই মিশন স্কুলের কাছে একের পর এক ম্যাচ হেরে যাচ্ছে অফিসার্স ক্লাব। বাকি সবগুলো দলও। সামনে দেওয়া হয়েছে ফাইনাল। যে জিতবে, শিল্ড তার। এবার শিল্ডও বানানো হয়েছে বেশ বড়। এসডিও সাহেব নিজে প্রধান অতিথি থাকতে রাজি হয়েছেন। এই ম্যাচটিকে বলা হচ্ছে সোরাব-রুস্তমের লড়াই। এই ম্যাচের দুই দলের অধিনায়ক যে দুই শেখের ব্যাটা! বাবা আর ছেলে!

শেখ বংশের আগের সেই জৌলুশ আর নেই। ব্যবসা নেই, জমিদারি নেই। সামান্য কিছু তালুক আর খাসজমি আছে। তবে সবচেয়ে বেশি আছে আত্মগৌরব। নিজেদের বংশের মর্যাদা। শেখ বংশের কেউ কারও কাছে হার মানে না। মানতে পারে না।

সেই নীলকর রাইন সাহেব পর্যন্ত হার মেনে গেছে। রানি রাসমণি অন্যায় মামলায় ফাঁসিয়ে বছরের পর বছর কোর্ট-কাছারি করিয়ে শেখ বংশকে প্রায় সর্বস্বান্ত করেছে। জমি-জিরেত সব গেছে। তবু আপস করেনি শেখ বংশের কেউ।

নীলকর রাইন সাহেবের গল্পটা তো লোকের মুখে মুখে। এ নিয়ে পালাগানও বাঁধা হয়েছে। ‘ওরে ধলা সাহেব রাইনের পো, শুনলি না তো মানা/ এখন বুঝবি ঠ্যালা পয়সা ম্যালা গুনবি জরিমানা।’

এমন ঘটনা যে কেউ কোনো দিন শোনেনি। ব্রিটিশ নীলকরদের বিরুদ্ধে মামলা করে জিতেছে কিনা এক ‘কালো আদমি’!
তখন শেখ বংশের প্রদীপ ছিল দুজনের হাতে। একজন শেখ কুদরতউল্লাহ, অন্যজন শেখ একরামউল্লাহ। একরামউল্লাহ ছিলেন এলাকার সর্দার। সবাই মান্যগণ্য করত। তাই যেকোনো বিচার-সালিস তিনিই করিয়ে দিতেন। তাঁর মুখের কথাই আইন। আর কুদরতউল্লাহ দেখাশোনা করতেন পারিবারিক সম্পত্তি।

আর সেই কয়েক শ বছর আগে শেখ বোরহানউদ্দিন নামের এক সাধুপুরুষ টুঙ্গিপাড়ায় ধর্ম প্রচার করতে এসে মধুমতীতীরে থিতু হলেন। সেখান থেকেই কয়েক পুরুষ ধরে চলছে বয়ে চলেছে শেখ বংশের গৌরব-নদী।

একসময় বর্গী এল দেশে। বুলবুলিতে ধান খেয়ে যায়, খাজনা দেব কিসে! কিন্তু বর্গীদের অত্যাচার কমে না। তারা জমি-জিরেতে জোর করে ধান চাষের বদলে চাপিয়ে দিতে চায় নীল চাষ। এই নীল যাবে বিলাতের কারখানায়। কিন্তু গরিব-দুঃখী কৃষকের মুখের অন্ন জুটবে কোথা থেকে? কে পরোয়া করে তার?

সে সময় খুলনা জেলার আলাইপুরে মিস্টার রাইন নামের এক ধলা সাহেব এসে কুঠি বানালেন। শুরু করলেন নীল চাষ। তাঁর অত্যাচারের চাবুক গিয়ে পড়ল শেখবাড়ির কর্মচারীদের ওপরেও। শেখদের তখন ছিল নৌকার বহর। রাইন সাহেব ক্ষমতা দেখিয়ে সেই নৌকাগুলো আটকে রাখতেন। মাঝিদের জোর করে কাজ করাতেন নিজের এস্টেটে।

এই শুনে কুদরতউল্লাহ গেলেন খেপে। কয়েক দফা দাঙ্গা-হাঙ্গামা হলো। কোর্টে মামলা উঠল। বিচারক নিজেও সাদা সাহেব, কিন্তু সাক্ষী-সাবুদ সব রাইনের বিরুদ্ধে। শেষমেষ আদালত মাত্র আধা পয়সা জরিমানা করলেন রাইন সাহেবকে।

জরিমানার অঙ্কটা আধা পয়সা হলে কী হবে, একজন সাদা সাহেব যে হেরে গেছেন একজন ‘কালা আদমি’র কাছে! রাইন সাহেব প্রস্তাব দিল শেখ কুদরতউল্লাহকে, ‘যত টাকা লাগে হামি তোমহাকে দেবে, কিন্তু এই মামলার রায় কার্যকর করো না। তাহলে ইংরেজ সমাজ হামাকে আর মানিয়া লইবে না। ওরা বলিবে, কালা আদমি হামাকে জরিমানা করিয়াছে। বলো তুমি কত টাকা চাও। হামার কুঠিবাড়ি তোমহাকে লেখিয়া দেবে।’

কুদরতউল্লাহ নিজের বুকে চাপড় মেরে বলেছিল, ‘শোনো সাহেব, আমি কুদরতউল্লাহ। টাকা আমি গুনে রাখি না, মেপে রাখি। তোমার টাকার আমার দরকার নাই। তুমি আমার লোকদের ওপর অন্যায়-অত্যাচার করেছ। আমি এর প্রতিশোধ নিলাম।’
খুলনা শহর থেকে সেই খবর দাবানলের মতো ছড়িয়ে গেল আশপাশে। বাগেরহাটে, মাদারীপুর, ফরিদপুরে। গোপালগঞ্জে তো বটেই। এমনকি কলকাতায়।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। ছবি: সংগৃহীত
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। ছবি: সংগৃহীত

এই গল্প শুনে শুনে বড় হয়েছে মুজিব। ইংরেজদের বিরুদ্ধে তারও খুব রাগ। এই দেশে থাকার অধিকার ইংরেজদের নাই। তার কৈশোরেই শুরু হয়েছে স্বদেশি আন্দোলন। মায়ের দেওয়া মোটা কাপড় মাথায় তুলে নে রে ভাই, দীন-দুঃখিনী মা যে তোদের, এর বেশি আর সাধ্য নাই। আব্বার চাকরির সুবাদে এ-শহর ও-শহর ঘুরে ঘুরে মুজিব তখন মাদারীপুরে। মাদারীপুরের পূর্ণ দাস তখন ইংরেজদের আতঙ্কের নাম।

সুভাষ বোসের কথা ছড়িয়ে যায় সেই শহরে। মুজিবরা নিজেরাই হাফপ্যান্ট পরা আজাদ ফৌজ বানায়। কলাগাছগুলোকে ইংরেজ বানিয়ে তাদের দিকে মাটির বানানো বোমা ছোড়ে। আর গায়: ‘কদম কদম বাড়ায়ে যা, খুশি কে গীত গায়ে যা।’
সেই মুজিব, ছোটবেলা থেকেই বড্ড একরোখা, দুরন্ত; এই তো বছর দুয়েক আগে এক অন্যায়ের প্রতিবাদ করে জেল খেটে এসেছে। তার বাবা শেখ লুত্ফর কোর্টেরই সেরেস্তাদার। উকিল-দারোগাদের সঙ্গে বন্ধুত্ব। তবু ছেলেকে অন্যায় প্রভাব খাটিয়ে বের করে আনেননি। কিন্তু ছেলেদের প্রতি ভালোবাসায় বুক টলমল করে তাঁর।

ছেলের প্রতি শেখ লুত্ফরের অন্য রকম এক মায়া। ছেলেরা মায়ের আঁচলঘেঁষা হয়। কিন্তু এই ছেলেটা হয়েছে বাবার ন্যাওটা। ছোট থেকে তাঁকে জড়িয়ে ধরে ঘুমায়। বাপের গায়ের গন্ধ না পেলে নাকি তার ঘুম হয় না। ছেলেটা বলতে গেলে মায়ের আদর পায়নি।
লুত্ফরের স্ত্রী সায়েরা খাতুন কোনো দিন স্বামীর সঙ্গে শহরে গেলেন না। লুত্ফর জোরাজুরি করলে সায়েরা বলতেন, ‘আমার আব্বা আমাকে সম্পত্তি দিয়ে গেছেন, যাতে আমি বাড়িতে থেকে এর দেখাশোনা করতে পারি। শহরে গেলে ঘরে আলো জ্বলবে না। আব্বার আত্মা আমাকে অভিশাপ দেবে।’

কিন্তু ছেলে আবার বাবাকে ছাড়া থাকবে না। বাবাই তার সব। শিক্ষক, আদর্শ, বন্ধু। এ কারণে ছোটবেলা থেকে সে বাপের সঙ্গে শহরে শহরে ঘোরে। পড়াশোনা করে।
অনেকে ভাবে, মুজিব বংশের বড় ছেলে, এ কারণেই ওকে লুত্ফর এত আগলে রাখেন। তা কথাটা কিছুটা সত্যি। কিন্তু পিতৃস্নেহের পেছনে আছে অন্য কারণ। ছেলেটা বারবার অসুখে পড়ে ভুগেছে। ১৪ বছর বয়সে তো বেরিবেরি রোগে আক্রান্ত হয়ে হার্টটাই দুর্বল হয়ে গেল। দুই বছর পর গ্লকোমা ধরা পড়ল চোখে। তখন থেকে চশমা হয়ে গেল নিত্যসঙ্গী।

কিন্তু এই ছেলে মোটা কাচের ভেতর দিয়ে যা দেখতে পায়, অন্য অনেকে তা দেখে না। এই ছেলের বুকে যে সাহস, আর কারও নেই। এই ছেলের হার্ট দুর্বল, কিন্তু হৃদয় শক্তিশালী। সেখানে সাহস আছে যেমন, ভালোবাসা আর মমতাও আছে। আর আছে অভিমান।
অসুস্থতার কারণে স্কুলের পড়ায় পিছিয়ে গেল। বাকি বন্ধুরা সব প্রমোশন পেয়ে বড় ক্লাসে। ছেলেটা আর স্কুলেই যাবে না। একসময়ের সহপাঠীদের উঁচু ক্লাসে দেখার অপমান সে সইতে পারবে না! পাগল ছেলে! বাধ্য হয়ে তাকে ভর্তি করাতে হলো অন্য স্কুলে। গোপালগঞ্জ মিশন স্কুল।
সেই মিশন স্কুলের সঙ্গেই খেলা অফিসার্স ক্লাবের।

এইবেলা লুত্ফর ছাড় দিতে চান না। হেরে গেলে সহকর্মীদের খোঁচা সহ্য করতে হবে। এরই মধ্যে যে খোঁচাগুলো বেশ কাঁটার মতো বিঁধছে। আর মানুষও মজা নিচ্ছে। বাপ-বেটার লড়াইয়ে এমন মজা পাওয়ার সুযোগ তারা হাতছাড়া করবেই-বা কেন! এবার বছরের শেষ খেলা। ফাইনাল।
মুজিব দলের অবস্থা বুঝতে পারল। একের পর এক ম্যাচ খেলে সবাই ক্লান্ত। অনেকের চোট-আঘাত। পুরো ফিট নয়। দলের মূল স্ট্রাইকারও ঠ্যাং ভেঙে বসে আছে। রাইট ব্যাকের হাঁটুতে ব্যথা।
এই পরিস্থিতির সুযোগ নিতে চাইলেন লুত্ফর। বললেন, ‘আগামীকালই ফাইনাল খেলা। সকালে খেলতে হবে। আমার দলের বাইরের খেলোয়াড়দের রাখা যাবে না আর। তাদের অনেক খরচ।’

মুজিব তো এখন বাধ্যপুত্র নয়; প্রতিপক্ষের অধিনায়ক। তার দলের ভালোটাই তাকে দেখতে হবে। টানা খেলে খেলে দলের সবাই ক্লান্ত। খেলা কয়েক দিন পেছাতেই হবে। তখন আবার দলটা গোছানো যাবে। মুজিব আপত্তি করে বসল, ‘কালকে খেলতে পারব না। আমাদের পরীক্ষা আছে।’
টুর্নামেন্টের আয়োজক গোপালগঞ্জ ফুটবল ক্লাব। ক্লাবের সেক্রেটারি দুই পক্ষকে সমঝোতায় আনার চেষ্টা করছেন। একবার তিনি শেখ লুত্ফরের কাছে যান, আরেকবার যান শেখ মুজিবের কাছে। দুই শেখের ব্যাটা দুই দিকে, কেউ হার মানবে না!

মুজিব যেহেতু পরীক্ষার দোহাই দিচ্ছে, ঠিক আছে। লুত্ফর গিয়ে ধরলেন স্কুলের প্রধান শিক্ষক রসরঞ্জন সেনগুপ্তকে। রসরঞ্জন স্যার আবার মুজিবকে প্রাইভেটও পড়ান। ইংরেজির শিক্ষক। ট্রান্সলেশন শেখান: শিক্ষকের অমর্যাদা করিও না, শিক্ষক পিতামাতার সমান...।
লুত্ফর জনতেন, তাঁর কথা মুজিব ফেলতে পারবে না। রসরঞ্জন বললেন, ‘মুজিব, তোর বাবা যা বলছে, সেটা শোন। জেদ করিস না। কালকে সকালে তোরা খেল। না হলে ওদের অসুবিধা হবে।’

স্যারের কথা অমান্য করার শিক্ষা পরিবার থেকে পায়নি মুজিব। শিক্ষাগুরুর নির্দেশ অবশ্যপালনীয়। তবু অধিনায়ক সত্তাটা চেষ্টা করে শেষ প্রতিরোধের, ‘স্যার, আমাদের সবাই ক্লান্ত। এগারোজনই সবগুলা ম্যাচ খেলছি। সবার পায়ে ব্যথা। ক্লান্ত। দুই-চার দিন বিশ্রাম না হলে স্যার আমরা হেরে যাব।’
স্যার এবার অনুরোধই করলেন, ‘খেল বাবা। আমার রিকোয়েস্টটা রাখ।’ মুজিব আর ‘না’ করতে পারল না।

মুজিবের মনটা খুব খারাপ। এই ভাঙাচোরা দলটা নিয়েও তারা টক্কর দিয়েছে সমানে-সমানে। শেষ পর্যন্ত মাত্র ১ গোলে অফিসার্স ক্লাবের কাছে হেরেছে মিশন স্কুল। রুস্তমের কাছে হেরে গেছে সোরাব!
বাবার ওপর মুজিবের ভীষণ অভিমান হলো! বাবা তো সব জানত। তবু কেন জোর করে খেলাল! নাহ, আর কোনো দিন সে বাবার সঙ্গে কথা বলবে না। মায়ের কাছে চলে যাবে। গ্রামেই থাকবে।

অধিনায়ক হিসেবে শেখ লুত্ফরের হাতে বিশাল শিল্ডটা তুলে দিলেন অতিথিরা। সবার গলায় মেডেল পরিয়ে দেওয়া হলো। মুজিব রানার্সআপের মেডেল আনতে গেলই না। বুকের ভেতরটা চিনচিন ব্যথা করছে। কাউকে কিছু না বলে মুজিব হাঁটা দিল বাড়ির পথে। তখনো মাইকে ভেসে আসছে শোরগোল। অফিসার্স ক্লাবের উল্লাসধ্বনি। হিপ হিপ হুর রে...।

জার্সির আস্তিনে মুখের ঘাম মোছার ছল করে মুজিব কি চোখের পানিও মুছে নিল? পেছন থেকে ঠিক বোঝা গেল না। ঠিক সেই সময় একজন তার নাম ধরে ডাক দিল। চেনা কণ্ঠস্বর। মুজিব ডাক শুনে পেছনে না ঘুরে বরং হাঁটার গতি আরও বাড়িয়ে দিল। এসেছে এখন আহ্লাদ দেখাতে। হাহ্!
এবার নাম ধরে নয়, লুত্ফর আবেগমাখা গলায় ডাক দিলেন, ‘বাবা, মানিক আমার!’
এই ডাক অগ্রাহ্য করার সাধ্য নেই মুজিবের। এইবার চোখের জল আর বাঁধ মানল না। বাবা পেছন থেকে এসে কাঁধে হাত রাখলেন। মুজিব এবার ঘুরে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে রইল। কেন যে সে বড় হলো! আগের মতো ছোটটি থাকলে এখনই বাবার বুকে ঝাঁপিয়ে পড়া যেত। ঘুমের ছল করে তবু বাবাকে জড়িয়ে ধরা যায়। এখন সে বাবাকে জড়িয়ে ধরবে কী করে!

বাবাই জড়িয়ে ধরলেন মুজিবকে। নিজের গলা থেকে খুলে মেডেলটা পরিয়ে দিলেন ছেলেকে। তারপর হেসে বললেন, ‘পাগল ছেলে। এবার হেরেছিস জন্য এত কষ্ট! আল্লাহর দরবারে দোয়া করি রে বাপধন, তুমি একবার এমন জয় জিতবা, সারা পৃথিবী তোমাকে মনে রাখবে।’

মুজিব বাবার ঘাম মেশানো বুকে গুঁজে দিল মাথা। ১৯৪০ সালের ডিসেম্বরের শীতের মেঘ কেটে উঁকি দেওয়া সোনালি রোদ তার সময়ের নোটবুকে টুকে রাখল দিনটার কথা। এর ঠিক ৩১ বছর পর এমনই এক ডিসেম্বরে আরেক বিজয় রচিত হলো, মুজিবের নেতৃত্বে। যার কথা সত্যিই সারা পৃথিবী জানে।
শেখ লুত্ফরের মন থেকে করা দোয়া নিশ্চয়ই ওপরে কেউ একজন শুনেছিলেন!

* শেখ মুজিবুর রহমানের অসমাপ্ত আত্মজীবনীর ছায়া অবলম্বনে