১৫ আগস্ট-পরবর্তী কয়েকটি দলিল

৩২ নম্বরের সিঁড়িতে গুলিবিদ্ধ বঙ্গবন্ধু। ছবি: সংগৃহীত
৩২ নম্বরের সিঁড়িতে গুলিবিদ্ধ বঙ্গবন্ধু। ছবি: সংগৃহীত
>আজ শোকাবহ পনের আগস্ট। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যা করা হয়েছিল এ দিন। শোকে, অবিশ্বাসে কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে যাওয়া জাতির প্রাথমিক প্রতিক্রিয়া ছিল নৈঃশব্দ। কিন্তু ধীরে ধীরে সে নৈঃশব্দ ভেঙে যায়। উঠতে থাকে প্রতিবাদ। সে রকমই ঐতিহাসিক তিনটি প্রতিবাদী দলিল উপস্থাপন করা হলো আজকের ‘অন্য আলো’য়। ১৯৭৫ সালের ৪ নভেম্বর প্রচারিত বঙ্গবন্ধুর ছবিসংবলিত প্রথম লিফলেটটি পাওয়া যায়নি। এসব লিফলেট গোপনে ছাপা হতো, গোপনে বিলিও হতো ঢাকায় ও সারা দেশে। ’৭৫ ও ’৭৬ সালে এগুলো প্রকাশ করে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি। দলিলগুলো প্রথম আলো সম্পাদকের ব্যক্তিগত সংগ্রহ থেকে নেওয়া

লিফলেট-১
চক্রান্ত রুখে দাঁড়াও খুনিদের শাস্তি দাও
দেশের শাসন ক্ষমতা থেকে তাওয়াব বিতাড়িত হয়েছে। এয়ার ভাইস মার্শাল তাওয়াব বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যাকারী লিবিয়ায় নির্বাসিত ‘খুনি মেজর’দের সঙ্গে চক্রান্ত করে বাংলাদেশে আরেকটা বিপর্যয় সৃষ্টির চক্রান্তে লিপ্ত হয়েছিল। মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমানের সঙ্গেও তাওয়াবচক্রের প্রথম থেকেই ক্ষমতার দ্বন্দ্ব চলে আসছিল। দেশবাসী অবগত আছে যে তাওয়াব পাকিস্তান-আমেরিকার অনুচর সাবেক জামায়াতে ইসলামী, আলবদর-আলশামসের নেতা হিসেবে পবিত্র ধর্মের নামে, রাসুলের (সা.) নামে সিরাতুন্নবীর সুযোগ নিয়ে বাংলাদেশে পুনরায় পাকিস্তানি মার্কা ‘ইসলামতন্ত্র’ কায়েমের জন্য গত সাতই মার্চ ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যান থেকে দাবি উত্থাপন করেছিল। তাওয়াব, ‘খুনি মেজরের দল’ এবং দেশদ্রোহী আলবদর-রাজাকার জামায়াতে ইসলামীরা লাখ লাখ শহীদের রক্তে অর্জিত বাংলাদেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব ধ্বংস করে জাতীয় পতাকা ও জাতীয় সংগীত বদল করে এই দেশকে আবার ভুট্টোর পাকিস্তানের গোলাম বানাতে চেয়েছিল, ফারাক্কা সমস্যার সমাধানের নামে দেশবাসীকে ভারতের সঙ্গে যুদ্ধের ধ্বংসযজ্ঞে ঠেলে দিতে চেয়েছিল। এই লক্ষ্য হাসিলের জন্য তারা সেনাবাহিনীর মধ্যে আবার বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির উসকানি দিচ্ছিল এবং সায়েম-জিয়া সরকার অপসারণের চক্রান্ত চালিয়েছিল।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। ছবি: সংগৃহীত
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। ছবি: সংগৃহীত

তাওয়াবচক্রের এই ঘৃণ্য চক্রান্তের মধ্য দিয়ে পুনরায় প্রমাণিত হয়েছে যে প্রকৃত দেশদ্রোহী ও জাতীয় স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের প্রকৃত দুশমন, চক্রান্তকারী ও আইনশৃঙ্খলা ভঙ্গকারী প্রকৃত দুষ্কৃতকারী কারা। তাদের এই ঘৃণ্য চক্রান্ত ব্যর্থ হয়েছে বটে, কিন্তু বাংলাদেশ সরকার এই জঘন্য দেশদ্রোহী ষড়যন্ত্রকারী ও খুনিদের উপযুক্ত শাস্তি বিধান করেনি। চক্রান্তের নায়ক তাওয়াব চাকরিতে ইস্তফা দিয়ে নিরাপদে বিদেশে চলে গেছেন। ফারুক, রশীদ, ডালিমসহ যে কজন ‘খুনি মেজর’ লিবিয়া থেকে তাওয়াবকে সাহায্য করার জন্য দেশে এসেছিল, তাদের বিরুদ্ধে অনেক খুনের অভিযোগ থাকা সত্ত্বেও তাদের বিদেশে পাঠানো হয়েছে এবং শোনা যায় যে সরকার তাদের বিদেশে বিভিন্ন কূটনৈতিক মিশনে উচ্চপদের চাকরি নেওয়ার জন্যও অনুরোধ করেছে। চরম প্রতিক্রিয়াশীল ঘৃণ্য সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠীর যারা আজও দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের বিরুদ্ধে চক্রান্ত করে আসছে, সরকার তাদের জন্য সংবিধান সংশোধন করে রাজনৈতিক অধিকার ফিরিয়ে দিয়েছে।
সরকারি নেতারা দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব রক্ষা, আইন ও ন্যায়ের শাসন প্রতিষ্ঠা এবং আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতির জন্য গালভরা কথা বলেন। আমাদের জিজ্ঞাসা, ষড়যন্ত্র ও হত্যাকারীদের, স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের প্রকৃত দুশমনদের, প্রকৃত দুষ্কৃতকারীদের হাতের মুঠোয় পেয়েও তাদের ছেড়ে দেওয়া এবং পুরস্কার দিয়ে তাদের সঙ্গে আপস করে চলা কোন ধরনের ন্যায়নীতি? যারা দেশের পতাকা বদলের জন্য, স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব ধ্বংস করার জন্য চক্রান্ত করে, তাদের নির্বিঘ্নে বিদেশে যেতে দেওয়া, তাদের সুবিধার্থে সংবিধান সংশোধন করে দেওয়া কোন ধরনের রাজনীতি? অন্যায়ের সঙ্গে আপস করে চলা এবং খুনিদের সঙ্গে বন্ধুসুলভ আচরণ দেশে কী ধরনের আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় সহায়ক হবে? সায়েম সরকার দেশবাসীকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল যে ঢাকা জেলের অভ্যন্তরে চারজন নেতার হত্যাকারীদের বিচার ও শাস্তি দেওয়া হবে। যে খুনি মেজররা তাদের সব জঘন্য অপরাধের জন্য প্রকাশ্যে গর্ব করে বেড়ায়, তাদের হাতে পেয়ে ছেড়ে দেওয়া এবং তাদের লোভনীয় উচ্চপদস্থ সরকারি চাকরির টোপ দেওয়া কি সেই প্রতিশ্রুতি লঙ্ঘনেরই লক্ষণ?
দেশবাসী সজাগ থাকুন! তাওয়াব এবং ‘খুনি মেজর’রা দেশে নেই সত্য, কিন্তু হাজার হাজার আলবদর-আলশামস-রাজাকার আছে। তাদের চক্রান্তও অব্যাহত আছে। সরকার যেন এসব খুনি বদমায়েশের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণে বাধ্য হয়, সে জন্য শক্তিশালী জনমত গড়ে তুলুন। ওই শত্রুদের হাত থেকে দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব রক্ষা এবং প্রগতির জন্য গণতান্ত্রিক অধিকার আদায়ের সংগ্রামে এগিয়ে আসুন।
১৫.৫.৭৬-দেশপ্রেমিক

পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে খাওয়ার টেবিলে বঙ্গবন্ধু: ছবি সংগৃহীত
পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে খাওয়ার টেবিলে বঙ্গবন্ধু: ছবি সংগৃহীত

লিফলেট-২
ওদের ক্ষমা নেই
‘আমিই শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যা করার আদেশ দিয়েছিলাম। কারণ এটাই ছিল একমাত্র পথ।’—লে. কর্নেল সৈয়দ ফারুক রহমান, বাংলাদেশ থেকে পলাতক সামরিক কর্মকর্তা দলের নেতা (দ্য ভয়েস অব দ্য নেশন, ব্যাংকক, ৬ নভেম্বর ’৭৫)

‘খোন্দকার মোশতাক পরিকল্পনা সম্পর্কে অবহিত ছিলেন।...’ —ফারুক রহমান (দ্য ফার ইস্টার্ন ইকোনমিক রিভিউ, হংকং, ১৪ নভেম্বর ’৭৫)

সাংবাদিকের প্রশ্ন: শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যার জন্য আপনি কি অনুতপ্ত?
ফারুক রহমান: না, এর জন্য অনুতপ্ত নই।...ওঁদের (নিহত প্রেসিডেন্ট ও তাঁর ঘনিষ্ঠ সহকর্মী) সরিয়ে দেওয়াই প্রয়োজন ছিল। (রয়টার্স ও ব্যাংকক ওয়ার্ল্ড, ৫ নভেম্বর ’৭৫)

‘ফারুক রহমান জানান যে, ব্যাংককে পৌঁছার পরই তাঁরা যুক্তরাষ্ট্র ও পাকিস্তান দূতাবাসে তাঁদের উপস্থিতির খবর জানিয়ে দিয়েছেন এবং ওই দুই দেশে তাঁরা রাজনৈতিক আশ্রয় প্রার্থনা করবেন।’ —ব্যাংকক ওয়ার্ল্ড, ৫ নভেম্বর ’৭৫

‘একজন মার্কিন মুখপাত্র জানিয়েছেন, ফারুক আজ (৬ নভেম্বর) মার্কিন কনস্যুলেটে আসেন এবং তাঁর ও আরও ১৬ জন কর্মকর্তার জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের অনুমতি প্রার্থনা করেন।’ —ব্যাংকক পোস্ট, ৭ নভেম্বর ’৭৫

অবসরে আনন্দে বঙ্গবন্ধু: ছবি: সংগৃহীত
অবসরে আনন্দে বঙ্গবন্ধু: ছবি: সংগৃহীত

৩ নভেম্বর ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে চারজন জাতীয় নেতার হত্যার পর পলায়নপর্ব সম্পর্কে ফারুক: “...প্রেসিডেন্ট (খোন্দকার মোশতাক) আমাদের দেশ ত্যাগ করতে বলেন।...প্রেসিডেন্টও আমাদের সঙ্গে আসতে চেয়েছিলেন, কিন্তু তাঁকে আসতে দেওয়া হয়নি।...প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘যদি পরে আমি বের হতে পারি, আমিও আসছি...আমি যদি প্রেসিডেন্ট না থাকি, তবে আমার দেশ ত্যাগ করাই উচিত’।”
—ব্যাংকক ওয়ার্ল্ড, ৫ নভেম্বর; দ্য ভয়েস অব দ্য নেশন, ৬ নভেম্বর ’৭৫

‘...ফারুক আরও জানান, ব্যাংককে অবস্থানকালে তাঁরা ঢাকায় খোন্দকার মোশতাকের সঙ্গে দূরপাল্লার টেলিফোনে নিয়মিত যোগাযোগ রেখেছেন।’ —ব্যাংকক পোস্ট, ১৮ নভেম্বর ’৭৫

কারা সপরিবারে বঙ্গবন্ধুকে খুন করেছে, কী উদ্দেশ্যে কারা জেলের ভেতর চারজন জাতীয় নেতাকে খুন করেছে, কে তাদের নেতা ও পরামর্শদাতা, কোন কোন বহিঃশক্তি তাদের আন্তর্জাতিক মুরব্বি—এসব প্রশ্নের জবাব খুনিদের স্বীকারোক্তিতে বেরিয়ে এসেছে, যা বিভিন্ন সংবাদপত্রে প্রকাশিত হয়েছে।

***
কোথায় এই খুনিরা? জাতির জনকের রক্তে হাত ভিজিয়ে খুনি মীরজাফর খোন্দকার মোশতাক আজও এ দেশের মাটিতে বহাল-তবিয়তে তাঁর ষড়যন্ত্রমূলক কাজকর্ম চালাচ্ছেন। আর খুনি মেজরের দল? ওরা লিবিয়ায় বাংলাদেশ সরকারের ব্যবস্থাধীনে রয়েছে বহাল-তবিয়তে। ওদের ব্যাংককে সপ্তাহ দুয়েক থাকা-খাওয়া ও বেনগাজি পর্যন্ত চার্টার্ড বিমানে পৌঁছার খরচ মোট ৩৫ হাজার ডলার (চার লক্ষাধিক টাকা) দিয়েছে বাংলাদেশ সরকার। বলা বাহুল্য, এ টাকা দিতে হয়েছে বাংলাদেশের জনগণের কষ্টার্জিত বৈদেশিক মুদ্রায়। জেলের হত্যাকাণ্ড ও এদের পলায়নের বিষয় তদন্তের জন্য যে বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটি গঠিত হয়েছিল, তার কথা আর শোনা যাচ্ছে না কেন?
কিন্তু পাপকে কি ধামাচাপা দেওয়া যায়? না, তা যায় না। এই জঘন্য খুনি, অপরাধী, মীরজাফরদের দল কি পার পেতে পারে? না, তা পারে না। বাংলাদেশের জনগণ মীরজাফরদের ক্ষমা করবে না।
[ ১৯৭৫ সালের শেষ দিকে প্রচারিত]

সেই সময়ের বুলেটিন ও লিফলেট
সেই সময়ের বুলেটিন ও লিফলেট

লিফলেট-৩
রাজবন্দীদের মুক্তি দাও
বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতির প্রতি বিশ্বের বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গের আবেদন

বিশ্বের ৪৭টি দেশের ৬২ জন বিশিষ্ট ব্যক্তি বাংলাদেশের সব রাজবন্দীকে অবিলম্বে বিনাশর্তে মুক্তিদানের দাবি জানিয়ে বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতির কাছে একটি জরুরি আবেদন পাঠিয়েছেন। আবেদনে তাঁরা বাংলাদেশে মানবাধিকার লঙ্ঘনের নিন্দা করেছেন। তাঁদের আবেদনে তাঁরা লিখেছেন:
‘বাংলাদেশে নির্বিচার গ্রেপ্তার, নির্যাতন ও হাজার হাজার রাজবন্দীকে বেআইনিভাবে আটক রাখায় আমরা মর্মাহত হয়েছি। এসব রাজবন্দীর মধ্যে রয়েছেন অনেক সংসদ সদস্য, সাবেক মন্ত্রী এবং বিশ্ব শান্তি পরিষদের প্রেসিডেন্সিয়াল কমিটির সদস্য আব্দুস সামাদ আজাদ, বিশ্ব শান্তি পরিষদের সদস্য জিল্লুর রহমান, আব্দুর রাজ্জাক এবং অন্যরা। আমরা রাজবন্দীদের অবিলম্বে বিনাশর্তে মুক্তি দেওয়ার দাবি জানাচ্ছি।’
আবেদনে স্বাক্ষরকারীদের মধ্যে রয়েছেন:
ফরাসি সিনেটর রেমন্ড গুইয়ত, ফিনল্যান্ডের সেন্টার পার্টির বৈদেশিকসংক্রান্ত সম্পাদক অনিতি কুওসমানেন, ফিলিস্তিন শান্তি কমিটির সাধারণ সম্পাদক আবদুল্লাহ হুরানি, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অধ্যাপক হাওয়ার্ড পার্সনস, পোল্যান্ডের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইয়োসেফ সিরান কিউইস, সোভিয়েত শান্তি কমিটির প্রথম সহসভাপতি ই. ক. ফেদোরভ, অ্যাঙ্গোলা গণপ্রজাতন্ত্রের ভ্রাম্যমাণ রাষ্ট্রদূত প্যাসক্যাল কুভুআলু, গিনি জাতীয় পরিষদের সভাপতি কামারা দামাঙতাঙ, ইরাকের যুবসংক্রান্ত মন্ত্রী নাঈম হাদাদ ও প্রতিমন্ত্রী আমের আবদুল্লা, চেকোস্লোভাক জাতীয় ফ্রন্টের সহসভাপতি তমাস ত্রান ভনিসেক, বিশ্ব শান্তি পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রমেশ চন্দ্র, ভারতে হাঙ্গেরির সাবেক রাষ্ট্রদূত ড. লাসলো রেক্সজেই, মিসর শান্তি পরিষদের সাধারণ সম্পাদক খালেদ মাহিল-এল-দীন, তানানারিভের (মালাগাছি) মেয়র রেভারেন্ড রিচার্ড আন্দ্রিয়ামান জাতা, আর্জেন্টিনার লেখক আলফ্রেডো ভ্যারেলা, চিলির সিনেটর জেইমে সুয়ারেজ, ইউরোপীয় নিরাপত্তা ও সহযোগিতার আন্তর্জাতিক সেক্রেটারিয়েটের বেলজিয়াম ক্যানন রেমন্ড গুর, মঙ্গোলীয় পার্লামেন্টের চেয়ারম্যান নঞামুন লুভসানচুলতেম, সেনেগাল শান্তি আন্দোলনের সভাপতি ন-দেনে ন-দাও, আফ্রিকান ন্যাশনাল কংগ্রেসের সহকারী সাধারণ সম্পাদক দুমা নওকে, আফ্রো-এশীয় শান্তি ও সংহতি পরিষদের সম্পাদক আবদুল গলিল ঘাইলান, পশ্চিম জার্মানির প্যাস্টর হানস জেয়াশিম ওয়েফল্যার, আন্তর্জাতিক ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি দুসান উলসাক, বিশ্ব গণতান্ত্রিক যুব ফেডারেশনের সার্গিয়ো দুব্রভস্কি, বিশ্ব গণতান্ত্রিক নারী ফেডারেশনের সভানেত্রী ফ্রেডা ব্রাউন, সারা ভারত শান্তি ও সংহতি পরিষদের সাধারণ সম্পাদক হর্ষদেব মালব্য এমপি, ব্রিটিশ সাংবাদিক গর্ডন শেফার প্রমুখ।
[১৯৭৬ সালের মাঝামাঝি প্রচারিত]

ইন্দিরা গান্ধীর সঙ্গে সপরিবারে বঙ্গবন্ধু: ছবি সংগৃহীত
ইন্দিরা গান্ধীর সঙ্গে সপরিবারে বঙ্গবন্ধু: ছবি সংগৃহীত

সারা বিশ্বের প্রতিবাদ
প্রতিক্রিয়াশীলদের দ্বারা সংঘটিত বর্বরোচিত হত্যাকাণ্ডে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রয়াণের প্রথম বার্ষিকী স্মরণে আগামী ১৪ থেকে ২১ আগস্ট পর্যন্ত ‘বাংলাদেশের দেশপ্রেমিকদের সঙ্গে সংহতি সপ্তাহ’ পালনের জন্য বিশ্ব শান্তি পরিষদের প্রেসিডেন্সিয়াল কমিটি পরিষদের সব জাতীয় কমিটি এবং অন্যান্য জাতীয় ও আন্তর্জাতিক শান্তি সংগঠনের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে। গত ১৮ থেকে ২১ মে পর্যন্ত গ্রিসের এথেন্স নগরীতে অনুষ্ঠিত কমিটির বৈঠকে এ সম্পর্কে প্রস্তাব গৃহীত হয়।
প্রেসিডেন্সিয়াল কমিটির প্রস্তাবে বাংলাদেশে মানবাধিকার লঙ্ঘনে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয় এবং বর্তমান সরকারের অধীনে চিলির ফ্যাসিস্ট জান্তার অনুরূপ নির্বিচার গ্রেপ্তার, নির্যাতন, বিনাবিচারে আটক, সাজানো মামলায় দীর্ঘমেয়াদি কয়েদ, রাজনৈতিক কর্মীদের খতম করে দেওয়া প্রভৃতির নিন্দা করা হয়।
প্রস্তাবে বাংলাদেশের জেলে আটক বিশ্ব শান্তি পরিষদের প্রেসিডেন্সিয়াল কমিটির সদস্য ও বাংলাদেশ শান্তি পরিষদের সভাপতি আব্দুস সামাদ আজাদ, বিশ্ব শান্তি পরিষদের সদস্য জিল্লুর রহমান ও আবদুর রাজ্জাকসহ সাজাপ্রাপ্ত এবং বিনাবিচারে আটক সবার মুক্তি দাবি করা হয়।
ওই প্রস্তাবে বাংলাদেশের বর্তমান সরকার কর্তৃক সামরিক খাতে বিপুল ব্যয়ের নিন্দা করে বলা হয় যে সাম্রাজ্যবাদ ও প্রতিক্রিয়ার তত্পরতা চালানোর জন্য বাংলাদেশ উর্বর ক্ষেত্র হয়ে উঠছে।
সুকঠিন পরিস্থিতিতে সংগ্রামরত বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক, প্রগতিশীল ও সাম্রাজ্যবাদবিরোধী শক্তিগুলোর প্রতি প্রস্তাবে অভিনন্দন ও সংহতি জ্ঞাপন করা হয়।
মন্ত্রী, সংসদ সদস্য, অধ্যাপক, লেখক, সাংবাদিক এবং ছাত্র-যুব-নারী সংগঠন ও শান্তি আন্দোলনের নেতাসহ বিশ্বের ৪৭টি দেশের ৬২ জন বিশিষ্ট ব্যক্তি বাংলাদেশের সব রাজবন্দীর অবিলম্বে বিনাশর্তে মুক্তি দাবি করে বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি বিচারপতি সায়েমের কাছে একটি জরুরি আবেদন পাঠিয়েছেন। আবেদনে তাঁরা গ্রেপ্তার, নির্যাতন, বেআইনি আটক প্রভৃতি উপায়ে মানবাধিকার লঙ্ঘনের নিন্দা করেন।
ইস্পাত [কমিউনিস্ট পার্টির বুলেটিন]

(এই লেখাটি ২০০৮ সালের ১৫ আগস্ট প্রথম আলোর শুক্রবারের ক্রোড়পত্র অন্য আলো-তে প্রকাশিত হয়েছিল।)