রক্তাক্ত বাড়ি

৩২ নম্বরের বাড়ির সিঁড়িতে গুলিবিদ্ধ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। ছবি: সংগৃহীত
৩২ নম্বরের বাড়ির সিঁড়িতে গুলিবিদ্ধ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। ছবি: সংগৃহীত

৩২ নম্বর রোডের মুখে ঢুকতেই প্রহরারত সৈনিকেরা আমার জিপ আটকাল। আমার পরিচয় দিলে তারা ছেড়ে দিল। শেখ সাহেবের বাসার গেটে দাঁড়িয়ে মেজর পাশা ও মেজর বজলুল হুদা। পাশা এগিয়ে এসে অভ্যর্থনা জানাল। বাড়ির দেয়ালে বুলেটের ক্ষতবিক্ষত দাগগুলোর দিকে তার দৃষ্টি আকর্ষণ করে জিজ্ঞাসা করলাম, ‘এখানে যথেষ্ট ফায়ারিং হয়েছে নাকি?’ 

মেজর পাশা বলল, ‘বলেন কী স্যার, হেভি ফায়ারিং! রীতিমতো যুদ্ধ। বাসার ভেতর থেকে তারাই আগে ফায়ার করে। দেখুন কত হাতিয়ার।’
আমাকে গেটের পাশে লেকের ধারে সাজিয়ে রাখা হাতিয়ারগুলোর দিকে নিয়ে গেল। দেখলাম ২০-২৫টা রাইফেল, স্টেনগান, মেশিনগান, গ্রেনেড এমনকি একটি ভারী মেশিনগান রয়েছে। আমি মনে মনে ভাবলাম, এতগুলো ভারী অস্ত্র নিয়ে তো তারা অনেকক্ষণ প্রতিরোধ করতে পারত। এখন মনে হচ্ছে, ওগুলো ছিল বাসায় ডিউটিরত পুলিশের কাছ থেকে সিজ করা অস্ত্রশস্ত্র। পাশাকে বললাম, ভেতরে গিয়ে একটু দেখে আসতে চাই। সে তত্ক্ষণাৎ মেজর হুদাকে বলল আমাকে ভেতরে নিয়ে যেতে।
হুদা প্রথমেই নিয়ে গেল নিচতলায় রিসেপশন রুমে। সেখানে শেখ কামালের মৃতদেহ টেবিলের পাশে একগাদা রক্তের মাঝে উপুড় হয়ে পড়ে আছে। একটা টেলিফোনের রিসিভার টেবিল থেকে ঝুলছিল। মনে হলো যেন শেষ মুহূর্তে কাউকে ফোন করতে চাইছিলেন শেখ কামাল। একটা হাত তাঁর ওদিকেই ছিল। টেবিলের পাশে আর একটি মৃতদেহ। একজন পুলিশ অফিসার। প্রচুর রক্তক্ষরণেই দুজন মারা গেছেন। কামালের ভাঙা চশমা পাশে পড়ে ছিল। মনে হলো কামরার ভেতর থেকেই দুজন ফাইট করছিলেন। গোলাগুলিতে জানালার ভাঙা কাচ চতুর্দিকে ছড়িয়ে।
এরপর আমরা দোতলায় উঠতে পা বাড়ালাম। সিঁড়ির মুখেই চমকে উঠলাম। সিঁড়িতেই দেখি পড়ে আছেন রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমান। আমার নিজের চোখকেই বিশ্বাস হচ্ছিল না যে সিঁড়ির ওপরে এভাবে একজন রাষ্ট্রপ্রধানের দেহ পড়ে থাকতে পারে! তাঁর পরনে ছিল সাদা পাঞ্জাবি এবং চেক লুঙ্গি। পাশে পড়ে আছে তাঁর ভাঙা চশমা। তাঁর দেহ সিঁড়ির ওপরে এমনভাবে পড়েছিল যেন মনে হচ্ছিল সিঁড়ি দিয়ে নামতে নামতে হঠাৎ পা পিছলে পড়ে গেছেন। আমার মনে হচ্ছিল, তিনি ঘুমিয়ে আছেন, এখনই উঠে দাঁড়াবেন। কারণ, তাঁর মুখে কোনো রকমের আঘাতের চিহ্ন ছিল না। চেহারা ছিল সম্পূর্ণ স্বাভাবিক, সৌম্য, শান্ত। তাঁর বুকের অংশটুকু ছিল ভীষণভাবে রক্তাক্ত। মনে হলো ব্রাশ লেগেছে। আমি তাঁর বুকের কাছে মাথা নিচু করে দেখতে চেষ্টা করলাম। কোথায় গুলি লেগেছে, কিন্তু বুক ভরা রক্তের আবিরে কিছুই বোঝা গেল না। তাঁর বাম হাতটা ছিল বুকের ওপর ভাঁজ করা, তবে তর্জনী আঙুলটা ছিঁড়ে গিয়ে চামড়ার টুকরার সাথে ঝুলছিল। তাঁর দেহের অন্য কোনো অঙ্গে তেমন কোনো আঘাত দেখিনি। সারা সিঁড়ি দিয়ে রক্তের প্রবল বন্যা। কোনোমতে তাঁর বিশাল দেহ ডিঙিয়ে দোতলায় গেলাম। সিঁড়ির মুখেই ঘরটাতে দেখি বেগম মুজিবের দেহ দেউড়ির ওপর উপুড় হয়ে পড়ে আছে। তাঁর গলার হারটা ঢুকে আছে মুখের মধ্যে। মনে হলো স্বামীর ওপর গুলির শব্দ শুনে তিনি ছুটে আসছিলেন। কিন্তু দরজার মুখেই গুলিবিদ্ধ হয়ে দেউড়িতে লুটিয়ে পড়েন। তাঁর দেহ অর্ধেক বারান্দায়, অর্ধেক ঘরের ভেতরে। তাঁকে পাশ কাটিয়ে ভেতরে প্রবেশ করলাম। কামরার মেঝেতে এক সাগর রক্ত থপথপ করছিল। আমার বুটের সোল প্রায় অর্ধেক ডুবে যাচ্ছিল। বিধ্বস্ত পরিবেশ। রক্তাক্ত কামরার মধ্যে পড়ে আছে কয়েকটি লাশ। বাম পাশেরটি শেখ জামাল। তাঁর দেহের ক্ষতবিক্ষত অবস্থা দেখে মনে হলো কামরার ভেতরে বোধ হয় গ্রেনেড নিক্ষেপ করা হয়। মিসেস রোজী জামাল সদ্য বিবাহিতা, হাতে তাজা মেহেদির রং। ব্রাশ অথবা গ্রেনেডের আঘাত সরাসরি তার মুখে লেগেছিল।
ভাগ্যিস তাঁর প্রিয়জন কাউকে তাঁর চেহারা দেখতে হয়নি। পাশে মিসেস সুলতানা কামাল। কিছুদিন আগে ক্রীড়াঙ্গনের প্রিয়দর্শিনী এই গোল্ডেন গার্লকে স্টেডিয়ামে দেখেছি ছোটাছুটি করতে। প্রচুর রক্তক্ষরণে এখন তাঁর চেহারা সম্পূর্ণ বিবর্ণ, শুকনো।
তাঁর কোল ঘেঁষে ছোট রাসেলের মৃতদেহ। বড়ই করুণ দেখাচ্ছিল তার মুখখানি। তার মাথার খুলির পেছন দিকে একেবারে থেঁতলে যায়। জানি না কী অপরাধ করেছিল শিশুটি। এরপর কামরা দেখে বেরিয়ে গিয়ে পাশে আরও দুটি কামরায় ঢুকলাম। সবগুলো ছিল খোলা। প্রতিটি ঘরেই দামি দামি জিনিসপত্র। রাষ্ট্রপতির পরিবার। মাত্র কদিন আগেই দু-দুটি বিয়ে হয়ে গেছে ওই বাড়িতে, কামাল ও জামালের। আনন্দমুখর আনন্দ-ভবনটি এখন নীরব নিথর।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। ছবি: সংগৃহীত
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। ছবি: সংগৃহীত

আমরা তিনতলায় যে ঘরে শেখ সাহেব থাকতেন, সেখানে গেলাম। সেখানে তাঁর পালঙ্ক বিছানা সাজানো-গোছানো। খাটের পাশে সুন্দর টেলিফোন সেট সবই আছে। নেই শুধু রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমান। ধীরে ধীরে নেমে এলাম নিচে। মেজর হুদাকে বললাম মৃতদেহগুলোকে সাদা কাপড় বা চাদর দিয়ে ঢেকে দিতে। নিচের তলার একটি বাথরুমে শেখ নাসেরের রক্তাপ্লুত মৃতদেহ, চেনাই যাচ্ছিল না। তিনি মাত্র আগের দিনই খুলনা থেকে ঢাকায় এসেছিলেন, মৃত্যুর আহ্বানে সাড়া দিতে!
বাড়ির পেছনে আঙিনায় একটি লাল গাড়ির পেছনের সিটে হেলান দিয়ে বসে কর্নেল জামিল উদ্দিনের প্রাণহীন দেহ। তাঁর ঠিক কপালে বুলেট লেগেছিল। কপালে রক্ত জমাট হয়ে আছে, ঠিক যেন একটি লাল গোলাপ। বিদ্রোহীরা তাঁকে বাড়ির দিকে অগ্রসর হতে মানা করেছিল। কিন্তু তাদের কথা না মেনে তিনি গাড়ি থেকে নেমে হাত দুটি ওপরে তুলে এগিয়ে আসেন। কাছে থেকে নেওয়া বুলেটের একটি আঘাত তত্ক্ষণাৎ তাঁকে ধরাশায়ী করে। জানা যায় একজন অফিসারই তাঁকে শুট করে। সম্ভবত মেজর নূর।
বাড়ির ভেতর প্রচুর সেপাই ঢুকে পড়েছিল। প্রতিটি রুমই ছিল খোলা। দু-দুটো বিয়ের প্রচুর দামি জিনিসপত্র ও উপহারসামগ্রী। আমি হুদাকে বললাম কামরাগুলোকে লক করে দিতে, তা না হলে জিনিসপত্র চুরি হয়ে যেতে পারে। হুদা তখনই চিত্কার করে তাঁর সৈনিকদের ভেতর থেকে বেরিয়ে আসতে বলল। তারা আমাদের পেছনে পেছনে ঢুকে পড়েছিল। সৈনিকদের পায়ে পায়ে সারা বাড়িতে রক্তের ছাপ ছড়িয়ে পড়েছিল।
মনের ভেতরে যথেষ্ট ব্যথা-বেদনা নিয়ে বেরিয়ে এলাম। বাড়িটা দখল করার জন্য এতগুলো নিরীহ প্রাণ অকালে ঝরে পড়ল, এত রক্তপাত হলো। একটি বিরাট পরিবারে হাসিখুশি চিরদিনের জন্য স্তব্ধ হয়ে গেল। এ রকম করুণ রক্তাক্ত দৃশ্য আমার দীর্ঘ সৈনিকজীবনে আর কখনো দেখিনি। আমার গাড়ি ডেকে দ্রুত ফিরে চললাম ক্যান্টনমেন্টে। পেছন থেকে শিশু রাসেলের করুণ চাহনি বারবার আমাকে পিছু টানছিল।
৩২ নং রোড থেকে ফিরে আমি স্টেশন হেডকোয়ার্টার থেকে বঙ্গভবনে জেনারেল শফিউল্লাহকে জানালাম, ১৪৪ ধারা জারির কোনো দরকার নেই। কোনো রকম গন্ডগোলের আশঙ্কা কোথাও নেই। সব ঠিক।
ক্যান্টনমেন্টে দেখা গেল সবাই হাসিখুশি। কেউ দুঃখিত নয়। উর্দি পরা জ্ঞাতি ভাইদের দ্বারা একটি বিরাট অ্যাডভেঞ্চার সংঘটিত হয়েছে। সফল অ্যাডভেঞ্চার। সবাই এটাকে স্বাভাবিকভাবেই গ্রহণ করেছে। অবশ্য তারা কেউ ৩২ নং রোডের করুণ রক্তাক্ত দৃশ্য দেখেনি।
বিকেল বেলায়ই আর্টিলারি ও ল্যান্সারের কিছু ট্যাংক ও কামান সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে অবস্থান নেয়। কয়েকটি ট্যাংক ও কামান একেবারে বঙ্গভবনের ভেতরে এনে স্থাপন করা হলো। সন্ধ্যা নামার আগে আগেই ঢাকা শহরে ও ক্যান্টনমেন্টের পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসে।
সারা দিন রেডিওতে একের পর এক ঘোষণা ও নির্দেশ প্রচার চলছিল। চলছিল যুদ্ধসংগীত, কাওয়ালি, গজল ইত্যাদি। সারা দিন কাজকর্ম ফেলে সবাই ঘরে বসে কেবল রেডিওতে শুনছিল। বাইরে ছিল কারফিউ। রেডিও মারফত তাত্ক্ষণিকভাবে রাষ্ট্রীয় কর্মকাণ্ড সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছিল, এমনটি আর কখনো দেখা যায়নি। নতুন রাষ্ট্রপতি খোন্দকার মোশতাক আহমদ ইতিমধ্যে বঙ্গভবনে তশরিফ নিয়ে গেছেন। সিংহাসনে অধিষ্ঠিত হয়ে তিনি সেখান থেকেই বিভিন্ন নির্দেশ ও ফরমান দিচ্ছেন। বঙ্গভবনই তখন সকল কর্মকাণ্ডের কেন্দ্রবিন্দু। তার সাথে কোমরে পিস্তল ঝুলিয়ে মেজর আবদুর রশিদ ও ফারুক রহমান।
তিন বাহিনীর প্রধানেরা সবাই বঙ্গভবনে। জেনারেল শফিউল্লাহকে সারাক্ষণই বঙ্গভবনে অত্যন্ত ব্যস্ততার মধ্যে ডুবিয়ে রাখা হলো। প্রকৃতপক্ষে তাকে ১৫ থেকে ১৮ আগস্ট পর্যন্ত এক কাপড়ে এক নাগাড়ে সুকৌশলে বঙ্গভবনে এনগেজড (নাকি আটক) রাখা হয়, যাতে কোনোভাবে তার দ্বারা অপ্রত্যাশিত কোনো ঘটনার সৃষ্টি না হয়। তাকে ছায়ার মতো অনুসরণ করতে থাকেন জিয়াউর রহমান। শফিউল্লাহ ব্যাপারটা বুঝতে পারলেও কিছু করতে পারছিলেন না। ফারুক-রশিদের অবশ্য এমনিতেই তাঁকে সরিয়ে দেওয়ার প্ল্যান ছিল এবং চূড়ান্তভাবে তাকে ২৪ আগস্ট থেকে অবসর দেওয়া হয়। এভাবে জোর করে অবসর দেওয়ায় শফিউল্লাহ খুবই অপমানিত বোধ করেন।
১৫ আগস্ট ভোর ৪টা ৩০ মিনিটে ঢাকা ক্যান্টনমেন্টের উত্তর প্রান্ত থেকে দুটি শক্তিশালী যান্ত্রিক ইউনিটের অগ্রযাত্রার মধ্য দিয়ে ঝটিকার বেগে যে রক্তাক্ত অভ্যুত্থান সংঘটিত হয়, ১২ ঘণ্টার ব্যবধানে ওই দিন বিকেল ৪টা ৩০ মিনিটের মধ্যে তার সফল পরিসমাপ্তি ঘটল।
সন্ধ্যা নামার সাথে সাথেই নতুন রাষ্ট্র, নতুন রাষ্ট্রপতি, নতুন মন্ত্রিসভা, নতুন প্রশাসন। সর্বত্র জয়ধ্বনি। অদ্ভুত ব্যাপার! অবিশ্বাস্য কাণ্ড। মাত্র ১২ ঘণ্টার ব্যবধানে কী বিরাট পরিবর্তন! উত্থান-পতন।
সন্ধ্যাবেলা ঢাকা ক্যান্টনমেন্টে অন্ধকার নামার সাথে সকল নাটকীয়তার অবসান ঘটল। সারা দিন ধরে সর্বত্র বিরাজ করছিল টেনশন আর অনিশ্চয়তা। অফিসার ও সৈনিকগণ মিলিটারি অভ্যুত্থানের মাধ্যমে পরিবর্তন স্বাভাবিকভাবে গ্রহণ করেছে। বরং শাফায়াত জামিলের ৪৬ ইনফেন্ট্রি ব্রিগেডের সৈনিকবৃন্দের মধ্যে উল্লাস-আনন্দের মাত্রা ছিল স্বাভাবিকের চেয়ে কিছু বেশি। রাতে টেলিভিশনে নতুন রাষ্ট্রপতির সাথে নতুন মন্ত্রীগণ, আর ফারুক-রশিদ প্রমুখের সাথে সবার হাসিখুশি চেহারা ভেসে উঠল পর্দায়। উষ্ণ করমর্দন। অভিবাদন। তবে কেউ কেউ বেশ চিন্তিতও ছিলেন।

১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবস। ১৯৭৫ সালের এই দিনে স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যা করা হয়। ছবি: ফোকাস বাংলা
১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবস। ১৯৭৫ সালের এই দিনে স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যা করা হয়। ছবি: ফোকাস বাংলা


সন্ধ্যায় নবনিযুক্ত রাষ্ট্রপতি খোন্দকার মোশতাক আহমদের দেশবাসীর প্রতি ভাষণ:
বিসিমল্লাহির রাহমানের রাহিম
আসসালামু আলায়কুম
প্রিয় দেশবাসী ভাই ও বোনেরা, এক ঐতিহাসিক প্রয়োজনে বাঙলাদেশের সাড়ে সাত কোটি মানুষের সত্যিকার ও সঠিক আকাঙ্ক্ষাকে বাস্তবে রূপদানে পূর্ণ দায়িত্ব সামগ্রিক ও সমষ্টিগতভাবে সম্পাদনের জন্য পরম করুণাময় আল্লাহ তাআলা ও বাংলাদেশের গণমানুষের দোয়ার ওপর ভরসা করে রাষ্ট্রপতি হিসেবে সরকারের দায়িত্ব আমার ওপর অর্পিত হয়েছে। বাংলার মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনের বজ্রকঠিন দায়িত্ব সম্পাদনে পথ সুগম করার জন্য বাংলাদেশের সেনাবাহিনী সত্যিকারের বীরের মত অকুতোভয় চিত্তে এগিয়ে এসেছেন। বাঙলাদেশের বিমানবাহিনী, নৌবাহিনী, বাঙলাদেশ রাইফেলস, রক্ষীবাহিনী এবং পুলিশ বাহিনী সরকারের প্রতি অকুণ্ঠ আনুগত্য ও আস্থা প্রকাশ করেছেন। এঁরা সবাই একযোগে কাজ করে যাচ্ছেন।
‘সকলের প্রতি বন্ধুত্ব এবং কারো প্রতি বিদ্বেষ নয়’—এই নীতির রূপরেখার মধ্যে আমরা শান্তি ও প্রগতির পথে আমাদের অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখবো...।
খোদা হাফেজ, বাংলাদেশ জিন্দাবাদ।

রাতের অন্ধকারে
সারা দিন বিভিন্ন ঘটনার আবর্তে পড়ে দেহমন ছিল ক্লান্ত। তাড়াতাড়ি খাওয়াদাওয়া সেরে ঘুমিয়ে পড়েছিলাম। রাত তিনটার দিকে আমার বেডরুমে টেলিফোন সেটটি গর্জে উঠল, ক্রিং ক্রিং ক্রিং। ক্রমাগত বেজেই চলল। আমার স্ত্রী বাধা দিয়ে অনিশ্চয়তার সময়ে গভীররাতে টেলিফোন ধরতে মানা করল। আমি তবু ফোন ধরলাম। অপর প্রান্তে মেজর আবদুল মতিন (পরবর্তীতে ব্রিগেডিয়ার) তিনি বললেন, ‘আমি বঙ্গভবন থেকে বলছি, স্যার নতুন রাষ্ট্রপতি এবং সেনাবাহিনী ও অন্যান্য বাহিনীর প্রধানসহ অন্য উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা সবাই এখানে আছেন। আপনাকে যে মেসেজ দেয়ার জন্য আমাকে বলা হয়েছে তা হলো, আগামীকাল সূর্য ওঠার আগেই, শেখ সাহেবের বাসার সমস্ত লাশ বনানী গোরস্থানে দাফন করার ব্যবস্থা নিতে হবে। আমি জিজ্ঞাসা করলাম, এ অর্ডারটা কে দিলেন?’ সে বলল, এখানে তো রাষ্ট্রপতি থেকে শুরু করে সকল উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা আছেন, আপনার কোনো সন্দেহ থাকলে আপনি গাড়ি নিয়ে বঙ্গভবনে এসে যান। কিন্তু তাতে আপনার সময় নষ্ট হবে। আমি আপনাকে বলছি, এটা হাইয়েস্ট কোয়ার্টারের অর্ডার।
অসময়ে টেলিফোন উঠানোর জন্য আমি নিজেকে অভিসম্পাত দিলাম। মতিনের কণ্ঠস্বর বিব্রতকর হলেও মনে হলো বঙ্গভবনে মোশতাকের খাস কামরাতে বসেই যেন সে নির্দেশ বিতরণ করছিল।
কিছুক্ষণ পরে আবার মেজর মতিনের টেলিফোন, ‘স্যার আরও কিছু নির্দেশ। শেখ মনি, আবদুর রব সেরনিয়াবাতসহ অন্যান্য যারা ওই ঘটনায় মারা গিয়েছেন, তাঁদের বাসা থেকে মৃতুদেহগুলো কালেক্ট করতে হবে এবং তাঁদের লাশ বনানী গোরস্থানে দাফনের ব্যবস্থা করতে হবে। তবে শেখ সাহেবের লাশ শুধু বাসায় থাকবে। বনানীতে দাফন করা হবে না, স্থান পরে জানানো হবে।’ সময় খুব বেশি হাতে নেই। ১ নং সাপ্লাই ব্যাটালিয়ন ছিল ডিউটি ব্যাটালিয়ন। স্টেশন হেডকোয়ার্টারে আমার ডিউটি অফিসারকে তত্ক্ষণাৎ তাঁদের জড়ো করতে নির্দেশ দিলাম এবং সংশ্লিষ্ট সবাইকে টেলিফোনে মেসেজ দিতে বললাম। আমি তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে স্টেশন হেডকোয়ার্টারে পৌঁছে দেখি সেখানে অনেকেই এসে গেছে। আমি তাদের দুটো গ্রুপ করলাম। একট গ্রুপকে ট্রান্সপোর্টসহ শেখ সাহেবের বাসায় পাঠালাম। আর একদল পাঠালাম বনানী কবরস্থানে গিয়ে কবর খুঁড়তে। ৩০ জন সৈনিক একজন সুবেদারের অধীনে বনানী কবরস্থানে যায়। তাদের কমান্ডিং অফিসার কর্নেল রব তখনো এসে পৌঁছাননি। টেলিফোনে তাঁকে নির্দেশ শুনালাম। এরপর আমি নিজেই শেখ সাহেবের বাসার উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিলাম।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। ছবি: ফোকাস বাংলা
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। ছবি: ফোকাস বাংলা

 
সেদিন অমাবস্যা ছিল কি না জানি না, রাত ছিল গভীর অন্ধকার। দুই হাত দূরেও কিছু দেখা যাচ্ছিল না। আকাশ মেঘাচ্ছন্ন। মধ্যরাতে ফাঁকা রাস্তা দিয়ে আমার জিপ তীব্র আলো ছড়িয়ে অন্ধকার ভেদ করে ক্যান্টনমেন্ট থেকে ৩২ নম্বর রোডের দিকে ছুটে চলল। হঠাৎ কেন জানি গভীর রাতের অন্ধকারে আমি রাস্তায় চোরাগুপ্তা আক্রমণের আশঙ্কা করলাম। আমার সাথে তিনজন সৈনিককে তাই রাইফেল লোড করে সাবধান থাকতে বলে দিলাম। যা-ই হোক নির্বিঘ্নেই আমরা ৩২ নং রোডে পৌঁছে গেলাম। গেটের বাইরে থাকতেই মেজর হুদার কর্কশ কণ্ঠ ভেসে এল। সে সৈনিকদের লাইন করিয়ে কড়া ভাষায় গালাগালি দিচ্ছিল, কারণ তারা সুযোগ পেলেই ভেতরে ঢুকে এটা-ওটা হাতড়ে নিচ্ছিল।
আমার পৌঁছাবার আগেই শেখ সাহেবের পরিবারের সবগুলো লাশ কফিনবন্দী করে সাপ্লাই ব্যাটালিয়নের ট্রাকে তুলে আমার আগমনের জন্য অপেক্ষা করছিল। শুধু শেখ সাহেবের লাশ কফিনবন্দী করে বারান্দায় এক কোণে একাকী ফেলে রাখা হয়েছিল। আমি সুবেদার সাহেবকে জিজ্ঞাসা করলাম, ‘এটা কি শেখ সাহেবের লাশ?’ তিনি ত্বরিত জবাব দিলেন, ‘জি স্যার, ওটা শেখ সাহেবের, আমি নিজে চেক করে রেখেছি। সব ঠিক।’ কেন জানি আমার একটু খটকা লাগল। কৌতূহলবশত বললাম, ‘কফিনের ঢাকনাটা খুলুন, আমি চেক করব।’ তাঁরা বড়ই অনিচ্ছায় হাতুড়ি-বাটাল এনে আবার কফিনটা খুললেন। কী আশ্চর্য! দেখা গেল ওটা শেখ সাহেবের লাশ নয়, শেখ নাসেরের লাশ। সুবেদার সাহেব খুব ঘাবড়ে গেল। তাকে বকাঝকা করলাম। আসলে শেখ নাসেরকে দেখতে তার বড় ভাই শেখ মুজিবের মতোই। আর এতেই সুবেদার সাহেবের ঘটে বিভ্রান্তি।
আমি এবার ট্রাকে উঠে সবগুলো কফিনের ঢাকনা খুলে ম্যাচ বক্সের কাঠি জ্বালিয়ে শেখ সাহেবকে খুঁজতে লাগলাম। অন্ধকার রাত। কিছুই দেখা যাচ্ছিল না। অবশেষে ট্রাকের এক অন্ধকার কোণে শেখ সাহেবকে পাওয়া গেল। একটি কফিনের ঢাকনা খুলতেই বরফের স্তূপের ভেতর থেকে তার দীপ্ত, অক্ষত, সুপরিচিত মুখখানি বেরিয়ে এল। সাদা চাদরে ঢাকা বুকের সমস্ত অংশ তখনো রক্তে রাঙা। তাঁর কফিনের ঢাকনা বন্ধ করে সম্মানের সাথে তাঁকে নিচে নামিয়ে বারান্দায় স্থাপন করা হলো। বারান্দা থেকে শেখ নাসেরের কফিন ট্রাকে করে তুলে দেওয়া হলো। আমি সবগুলো কফিন নিজ হাতে কলম দিয়ে নাম লিখে মার্ক করে দিলাম। লাশ-বদল-বিভ্রাটের দরুন বেশ কিছু সময় নষ্ট হয়ে গেল। কফিনগুলোসহ ট্রাকটি বনানী রওনা করিয়ে দিয়ে এবার আমি জিপ নিয়ে ঊর্ধ্বশ্বাসে শেখ মনির বাসার দিকে ছুটলাম। মেজর আলাউদ্দিনকে পাঠালাম আবদুর রব সেরনিয়াবাতের বাসায়। তখন ভোর ৪টা ৪৫ মিনিট।
শেখ মনির বাসায় পৌঁছে ঘরের ভিতর ঢুকে দেখি সব ফাঁকা, কেউ নেই। এমনকি কোনো মৃতদেহও নেই। অথচ দরজা সব খোলা। বাড়ির জিনিসপত্র সবই যথাস্থানে পড়ে আছে, যেন জনমানশূন্য ভুতুড়ে বাড়ি। আমি ডাকাডাকি করলাম। কোনো সাড়াশব্দ নেই। তবে ঘরের ভিতর যে একটি রক্তক্ষয়ী প্রলয় ঘটে গেছে তা স্পষ্ট বোঝা গেল। কাছেই পুলিশ-থানা। থানায় গিয়ে জিজ্ঞাসা করলাম, শেখ মনির লাশ সম্পর্কে তারা কিছু জানে কি না। তারা বলল, গোলাগুলির পর কিছু সৈন্য এসে বোধ হয় ডেডবডিগুলো মর্গে নিয়ে গেছে। ইতিমধ্যে আলাউদ্দিনও সেরনিয়াবাত সাহেবের বাসায় কোনো লাশ না পেয়ে ফিরে এসেছে। অগত্যা আমি জিপ হাঁকিয়ে দ্রুত মেডিকেল কলেজের মর্গে ছুটলাম। সেখানে ডিউটিরত পুলিশ ইন্সপেক্টর এরশাদ বললেন, মর্গেই সব লাশ পড়ে আছে। লাশগুলো বের করে দেওয়ার জন্য মর্গের ডোমকে ডাকা হলো। ডোম এসে দরজা খুললে দেখা গেল মর্গে ১৫ দিনের পুরোনো পচা গলিত অনেকগুলো লাশ একসাথে স্তূপ হয়ে আছে। এগুলোর মধ্য থেকেই সেরনিয়াবাত ও শেখ মনির পরিবারের সদস্যদের মৃতদেহগুলো শনাক্ত করা হয়। পুলিশ অফিসার এগুলো শনাক্ত করেন। এতগুলো লাশ একসাথে চাপাচাপি করে থাকায় ১২ ঘণ্টায় একেবারে পচে গিয়েছিল। ভীষণ দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছিল। মরা মানুষের লাশ এত দুর্গন্ধময় হতে পারে, আমার ধারণাই ছিল না। দরজা খুলতেই পুলিশ অফিসার তো ওয়াক থু করে একেবারে বমিই করে বসলেন। লাশগুলো ট্রাকে উঠিয়ে বনানী গোরস্থানে নিয়ে যেতে বলি। আমি সেখান থেকে দ্রুত জিপ চালিয়ে বনানী ছুটলাম।
চারদিকে বীভত্স দৃশ্য দেখে আমার মাথায় বারবার গন্ডগোল বেধে যাচ্ছিল। কয়েকবার বমি করার উপক্রম হলো। গভীর রাতে এ রকম একটি অপ্রীতিকর কাজে জড়িয়ে ফেলার জন্য বারবার মেজর মতিনকে অভিসম্পাত দিতে লাগলাম। সাপ্লাই ব্যাটালিয়নের সৈনিকরা একটানা কাজ করে ১৮টি কবর খুঁড়ে রেখে ছিল। শেখ সাহেবের পরিবারের লাশগুলো আগে দাফন করা হয়। তাঁদেরকে প্রথম সাতটি কবরে সম্মানের সঙ্গে দাফন করা হয়। এ সময় ব্যাটালিয়নের একজন সিনিয়র সুবেদার উপস্থিত ছিলেন। তাদের কমান্ডিং অফিসার কর্নেল রবও ছিলেন। তাদের আরও দু-তিন অফিসার ছিল। আমি কাউকে ঠাহর করতে পারছিলাম না। অত্যন্ত বৈরী পরিবেশ ও টেনশনের মধ্যে তারা দাফন কার্য সমাধা করে।
শেখ পরিবারের সাতজন সদস্যের কবর আছে বনানীতে। প্রথম কবরটা বেগম মুজিবের। দ্বিতীয়টা নাসেরের। তৃতীয়টা শেখ কামালের। চতুর্থ কবর মিসেস কামালের। পঞ্চম কবর শেখ জামালের। ষষ্ঠ কবরে মিসেস জামাল এবং সপ্তম কবরে শায়িত আছে মাস্টার রাসেল।
সব মিলে ওখানে ১৮টি কবর রয়েছে। ১৩ নং কবরটি শেখ মনির। ১৪ নং বেগম মনির। ১৭ নং কবরে শায়িত রয়েছেন জনাব সেরনিয়াবাত। বাকিগুলো শেখ মনি ও জনাব সেরনিয়াবাতের বাসায় অন্যান্য যাঁরা মারা যান তাঁদের কবর।
লাশগুলো দাফনের পর আমি আমার অফিস থেকে গোরস্থানে ফিরে এসে এক এক করে নামগুলো আমার অফিস প্যাডে লিপিবদ্ধ করি। রেকর্ডটি বহুদিন ধরে আমার কাছে রক্ষিত রয়েছে। এ ছাড়া আর কোথাও এই সমাধিগুলোর রেকর্ড নেই।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। ছবি: সংগৃহীত
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। ছবি: সংগৃহীত

প্রয়াত রাষ্ট্রপতির দাফন
সারা রাত ভূতের মতো এখানে-ওখানে ছোটাছুটি করে আমার মাথা বনবন করছিল। বনানীতে শেখ পরিবার, শেখ মনি ও সেরনিয়াবাত পরিবারের দাফন সম্পন্ন হয়ে গিয়েছিল। যদিও সৈনিকদের সূর্য ওঠার বেশ কিছু পরও কাজ করতে হয়েছিল। আমি ক্যান্টনমেন্টে বোর্ড অফিসারকে নির্দেশ দিলাম মালি পাঠিয়ে যেন কবরগুলো সুন্দরভাবে ড্রেসিং করে দেয়।
আমি আমার অফিসে ফিরে গিয়ে বসে এক কাপ চা পান করছিলাম। বঙ্গভবন থেকে টেলিফোনে আমার মেসেজ পাঠানো হলো। শেখ সাহেবের ডেডবডি টুঙ্গিপাড়া পাঠানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে। একটি এয়ারফোর্স হেলিকপ্টারের ব্যবস্থা করা হয়েছে। রাষ্ট্রপতিকে টুঙ্গিপাড়া দাফনের যাবতীয় ব্যবস্থা করা হয়েছে। বঙ্গভবন থেকে বারবার ফোন আসাতে আমাকে বঙ্গভবনের টেলিফোন-ভীতি পেয়ে বসল। আমি জিপ নিয়ে অফিস থেকে রাস্তায় বেরিয়ে পড়লাম এবং খামাখাই এখানে-ওখানে ঘুরাফেরা করে সময় কাটাতে লাগলাম।
আর্মি অর্ডিন্যান্সের একটি প্লাটুন মেজর মহিউদ্দিনের নেতৃত্বে প্রস্তুত রাখা হলো। প্রয়াত রাষ্ট্রপতির হেলিকপ্টারের পাইলট ছিলেন ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট শামসের আলী (পরে এয়ার কমোডর)। তারা তেজগাঁও এয়ারপোর্ট থেকে বেলা আড়াইটা নাগাদ শেখ সাহেবের লাশ নিয়ে টুঙ্গিপাড়ার উদ্দেশে আকাশে পাড়ি জমাল। হামলার আশঙ্কায় হেলিপ্টার অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত ছিল। আকাশযানটি টুঙ্গিপাড়ার আকাশে পৌঁছালে আশপাশের লোকজন ভয়ে গ্রাম ছেড়ে পালিয়ে যায়। ওখানে আগেই পুলিশ পাঠানোর জন্য সংবাদ দেওয়া হয়েছিল। মেজর মহিউদ্দিন পুলিশের সহায়তায় কোনোক্রমে ১৫-২০ জন লোক জানাজার জন্য জড়ো করতে সক্ষম হয়েছিল। একজন স্থানীয় মৌলবীকে ডেকে এনে শেখ সাহেবের লাশ গোসল করানো হয়। তাঁর গায়ে ১৮টি বুলেটের আঘাত দেখতে পাওয়া যায়। গোসল শেষে পিতার কবরের পাশেই তাঁকে চিরনিদ্রায় শায়িত করা হয়।
সূর্যিমামা পশ্চিম গগনে হেলে গিয়ে বিদায়ের প্রস্তুতি নিচ্ছিল। তার আগেই দাফনকার্য শেষ করে শামসের হেলিকপ্টার নিয়ে আকাশে উড়ল। জাতির জনককে শেষবিদায় জানাতে যেকোনো কারণেই হোক টুঙ্গিপাড়ার লোকজন সেদিন ভিড় করেনি। যে ব্যক্তি সারা জীবন বাঙালি জাতির স্বাধীন সত্তার জন্য সংগ্রাম করে গেলেন, তাঁকে শেষবিদায় জানানো হলো অতি নীরবে, নিঃশব্দে, সুদুর টুঙ্গিপাড়ার একটি গ্রামে। বেজে উঠল না বিউগলের করুণ সুর।

(এই লেখাটি লে. কর্নেল (অব.) এম এ হামিদের তিনটি সেনা অভ্যুত্থান ও কিছু না বলা কথা বইয়ের অংশবিশেষ। মিজান পাবলিশার্স থেকে প্রকাশিত এই বইয়ের বানানরীতি অপরিবর্তিত রাখা হয়েছে।)