কালো ভোর

অলংকরণ: মাসুক হেলাল
অলংকরণ: মাসুক হেলাল

একটা পায়রা। নাম রাজ। তার মাথায় রাজমুকুট। সাদা ধবধবে দেখতে সে।

আরেকটা কবুতরের নাম ধবলী। সে-ও ধবধবে সাদা।

রাজ বলল, ধবলী, দ্যাখ দ্যাখ, রাসেল কী করছে?

ধবলী তার পালক ফুলিয়ে ডেকে উঠল, বাকবাকুম বাকবাকুম! লালচে ঠোঁট বাঁকিয়ে বলল, কী করছে!

দ্যাখ, বাড়ির পেছনের বাগানের কল ছেড়ে দিয়ে হাতের মেহেদির রং মোছার চেষ্টা করছে।

বাড়িতে বিয়ের ধুম বয়ে গেল। কামাল ভাইয়ের বিয়ে হলো, জামাল ভাইয়ের বিয়ে হলো। ওর হাতে তো রং থাকবেই।

তা থাকবে। কিন্তু রাসেল ওর মাকে কাল বলেছে, মা, প্রিন্সিপাল আপা আমাকে বললেন, রাসেল, তোমার হাতে এত রং কেন!

সত্যি তাই। রাসেল পড়ে ইউনিভার্সিটি ল্যাবরেটরি স্কুলে। ক্লাস ফোরে। ফোন করবে বলে সে সাহস করে গিয়েছিল প্রিন্সিপাল রাজিয়া মতিন চৌধুরীর অফিসে। বলল, আমি কি একটা ফোন করতে পারি? বাসায় ফোন করব।

করো।

রাসেল ফোন ঘুরিয়ে এক্সচেঞ্জকে বাসার ফোন নম্বর বলল।

যখন সে ডায়াল ঘোরাচ্ছিল, তখন প্রিন্সিপাল আপা বললেন, তোমার হাতের তালু তো দেখি লাল রঙে ভরা। তোমার হাতে এত রং কেন?

রাসেল লজ্জা পেল। হালকা-পাতলা একটা ছেলে। চোখ দুটো উজ্জ্বল। বয়স কত? দশ হয়েছে! এগারো হবে সামনের অক্টোবরে।

বলল, আপা, অনেকগুলো বিয়ে খেয়েছি। বিয়ের সময় হাতে রং দিয়েছি। অনেক ধুয়েছি। রং যায়নি।

রাসেল এখন কলের পানিতে হাতে হাত ঘষছে। টকটকে লাল হয়ে আছে মেহেদি। হাতের দিকে তাকিয়ে দেখল সে। বাকি অংশ সাদা হয়ে গেছে। কিন্তু রং তো আরও লাল হচ্ছে।

পায়রাগুলো হেসে উঠল। তারা রাসেলের মাথার ওপরে গিয়ে ডিগবাজি খেতে লাগল।

রাসেল হাততালি দিল। তার হাতের পানি ছিটকে উঠল শূন্যে।

হাততালি পেলে কী করতে হবে, পায়রারা জানে। তারা আরও একটু ওপরে উঠে ডিগবাজি খেয়ে নেমে এল রাসেলের হাতের ওপরে।

তারা যে রাসেলের কাছের বন্ধু।

জন্মের পর বোঝার বয়স থেকে রাসেল দেখে আসছে, আব্বা থাকেন জেলখানায়। আব্বাকে বাড়িতে না দেখেই সে বড় হয়েছে। খেতে চাইত না। চিনি মেখে ভাত খাওয়াতে হতো।

তার আব্বা ছয় দফা ঘোষণা করলেন। বাঙালির মুক্তির সনদ। আইয়ুব খান তাঁকে জেলে পুরল।

দুই সপ্তাহ পরপর আম্মা, হাসু আপা, দেনা আপা, কামাল ভাই, জামাল ভাই—সবার সঙ্গে রাসেল যায় আব্বাকে দেখতে, তার আব্বার বাড়ি।

অল্পক্ষণ পরই গার্ড বলে, সময় শেষ।

রাসেল কিছুতেই আব্বাকে ছেড়ে আসতে চায় না। বলে, আমি আব্বার বাড়িতে থাকব।

কামাল ভাই বলেন, চলো, বাইরে গাড়িটায় তোমাকে সামনের সিটে বসতে দেব। তুমি একটু চালাবে? চলো...। ভুলিয়ে-ভালিয়ে জেলখানা থেকে আনতে হতো রাসেলকে।

রাসেল খেতে চায় না। আত্মীয়স্বজন পরামর্শ দিল, এত হালকা একটা বাচ্চা, বাতাসেই তো উড়ে যাবে। এক কাজ করেন, ওকে কবুতরের স্যুপ খাওয়ান। রক্ত ভালো হবে। হাড় শক্ত হবে।

এটা কী? বাটির দিকে তাকিয়ে বলল রাসেল।

স্যুপ। কবুতরের স্যুপ!

কবুতরের স্যুপ! আমি খাব না। কবুতর আমার বন্ধু। আমি কেমন করে কবুতরের স্যুপ খাব? তোমরা আর কখনো কবুতর ধরবে না। কবুতর মারবে না। বলো, আর কোনো দিন কবুতর মারবে না।

কী খাবে রাসেল! সে চলে গেছে রান্নাঘরে। আবদুল খাচ্ছে। আম্বিয়ার মা খাচ্ছে। তাদের পাশে বসে সে খাচ্ছে। তার থালায় লাল ফুল আঁকা। এটাতেই খেতে সে পছন্দ করে।

রাজ হাসে। ধবলী হাসে।

রাসেল কত মজার কাণ্ডই না করে, তাই না!

সেদিন ওর প্রিয় কুকুর টমি ওকে দেখে ঘেউ ঘেউ করে উঠল। সে চলে গেছে তার ছোট আপার কাছে, দেনা আপা, দেনা আপা! টমি বকা দিচ্ছে।

হাসু আপা এগিয়ে এলেন। কী হয়েছে, রাসেল সোনা!

রাসেল খুব গম্ভীর। টমি বকা দিচ্ছে।

এবার হাসু আপাকেও মুখটা গম্ভীর করতে হলো। রাসেলের ব্যাপারটা তো গুরুতর। এটা হাসির ব্যাপার নয়।

একাত্তর সাল। তারা বন্দী। কামাল ভাই, জামাল ভাই যুদ্ধে গেছেন। আব্বা কোথায় আছে, কেমন আছে, কেউ জানে না।

রাসেল বাইরে এসে একা একা কাঁদত। সেই কান্না দেখেছে শুধু পায়রাগুলো। পোষা প্রাণীগুলো। বড়রা কেউ এসে জিজ্ঞেস করলে রাসেল বলত, কাঁদছি না। চোখে কুটা পড়েছে।

রাসেলকে আমরা সবচেয়ে খুশি দেখেছি যেদিন ওর আব্বা ফিরে এলেন পাকিস্তান থেকে, সেদিন—রাজ বলল, বাকবাকুম বাকবাকুম।

রাসেলের চোখ দুটো বুদ্ধির দীপ্তিতে ঝকঝক করে। তাতে অনেক মায়া। মায়া তার পায়রার জন্য। পোষা পাখিগুলোর জন্য। টমির জন্য।

তিন চাকার সাইকেল নিয়ে সে ঘুরে বেড়ায় পুরো ধানমন্ডি। পশ্চিম দিকে চলে যায় সুফিয়া নানুর বাড়ি। পুবদিকে যায় ফুপুর বাড়ি।

আব্বা অফিস করেন গণভবনে। সেটা মিন্টো রোডের কাছে। পাশেই রমনা পার্ক।

সেখানেও যায় রাসেল। সঙ্গে করে নিয়ে যায় তার ছোট্ট সাইকেলটা।

আব্বার সঙ্গে সে ছায়ার মতো লেগে থাকে। তার আব্বা সেটা জাপানি ফিল্মমেকারকে বললেনও। বললেন, দেখুন, এই ছেলে, সে তো আমাকে সারাক্ষণই দেখেছে জেলখানায়। ওর জন্মের পর থেকে আমি জেলখানাতেই কাটিয়ে দিলাম। তাই ও আমার সঙ্গ বেশি করে চায়। আমিও যেখানে যাই, ওকে নিয়ে যাই।

রাসেলও আব্বাকে পদে পদে অনুসরণ করে। আব্বা শেরওয়ানি পরেছেন। ওরও শেরওয়ানি চাই। আব্বার মতো করে সে পোশাক পরবে।

আব্বার একটা চশমা চোখে পরে সে ডাকছে, হাসু আপা, দেনা আপা, দেখো।

হাসু আপা তাড়াতাড়ি ওর চশমা খুলে নিলেন। আব্বার চশমায় অনেক পাওয়ার তো। তোমার চোখ নষ্ট হয়ে যাবে, সোনা।

পায়রারা বলল, না, ওর চোখ নষ্ট হবে না।

রাসেলের কথা শেখার সময়টা মনে করে পায়রারা। কামাল-জামালকে সে ডাকত ভাই, আর বড় বোন দুটোকে হাসুপা, দেনাপা। দুই বোন তাকে শেখাচ্ছে, বাবু, বলো, কামাল, জামাল।

শেষে একদিন সে বলেই ফেলল, কামমাল, জামমাল।

আর সে জানত, কালো পিঁপড়ারা বাঙালি। কাউকে কামড় দেয় না। লাল পিঁপড়াগুলো পাকিস্তানি। কামড় দেয়। কিন্তু একদিন তার হিসাবে হয়ে গেল ভুল। একটা বড় কালো পিঁপড়াকে সে হাতে ধরে আদর করতে গেল। বড় পিঁপড়া। সে কামড়ে ধরল রাসেলের আঙুল। রাসেল বলল, এই পিঁপড়ার নাম হলো ভুট্টো। 

ঘটে গেল একটা দুর্ঘটনা। ওর একটা খেলনা মোটরসাইকেল ছিল। মপেট। ওটা নিয়ে সে খেলতে বেরিয়েছে। সঙ্গে ওর দুই খেলার সাথি পাশের বাড়ির আদিল আর ইমরান। হঠাৎ মোটরসাইকেলের চাকার ভেতরে ওর পা ঢুকে গেল। ব্যাটারি থেকে অ্যাসিড বেরিয়ে এলে পায়ের অনেকটা জায়গা গেল পুড়ে।

কবুতরগুলো পাখা ঝাপটাতে থাকে। টমি কেঁদে ওঠে। হাসু আপা জয়কে কোলে নিয়ে দোতলা থেকে ছুটে বাইরে আসেন। রাসেল আসছে একজনের কোলে চড়ে। কাঁদছে। তার পা পুড়ে গেছে।

এই তো জুলাইয়ে ১৪ আর ১৭ তারিখে বিয়ে হলো কামাল ভাই আর জামাল ভাইয়ের।

রাসেল ভাবিদের পায়ে-পায়ে ঘোরে।

তোমার কী লাগবে?

তোমার কী লাগবে?

ভাবিদের যত্ন করার উপযুক্ত দেবর এসেছে বটে। বয়স দশ। 

এত ভোরবেলা কিসের শব্দ। রাজ ডাক ছাড়ে, বাকবাকম। ধবলী বলে ওঠে, ওগো, ভয় লাগছে, এত গুলির শব্দ কেন।

বাইরে থেকে গুলি আসছে। ভেতরের সেন্ট্রিরা একটু আগে পতাকা তুলেছে। বিউগল বাজিয়েছে। তারা পাল্টা গুলি ছুড়ছে। আরও গুলি কই? আনো তাড়াতাড়ি। 

রাসেলের আব্বা বেরিয়ে এলেন ঘর থেকে। এই, তোমরা গুলি থামাও। আমি দেখছি। 

পায়রাগুলো আকাশে উড়ছে। রাসেল কেমন আছে? রাসেলের কোনো ক্ষতি হবে না তো! 

উফ্ফ। সৈন্যরা ওপরে উঠছে।

প্রথমে তারা দেখা পেল রাসেলের বড় ভাই কামালের। তারা গুলি ছুড়ল কামালের পায়ে। তিনি বললেন, মুহিত ভাই, আপনি বলেন আমি শেখ মুজিবের ছেলে কামাল।

বলামাত্রই আবার গুলি।

কবুতরগুলো কেঁদে উঠল। ককিয়ে উঠল। না না না, তোমরা থামো। এই বাড়িতে একটা শিশু আছে। সে আমাদের ভালোবাসে। সে আর তার আব্বা আমাদের প্রতিদিন দানা খেতে দেয়। প্রতিদিন পানি খেতে দেয়। আমাদের নিয়ে খেলে। আমরা তাদের কোনো ক্ষতি হতে দেব না।

সৈন্যরা ওপরে উঠছে সিঁড়ি বেয়ে। তাদের বুটের শব্দে প্রতিটা পায়রার বুক দুমড়েমুচড়ে যাচ্ছে।

এই তোরা কী চাস? কোথায় নিয়ে যেতে চাস আমাকে...

এই পর্যন্ত তিনি মুখে বললেন। পায়রারা শুনতে পেল, যেন তিনি ফিরে গেছেন ১৯৬৮ সালের সেই দিনে, যেদিন রাসেলের আব্বাকে জেলখানা থেকে আর্মিরা নিয়ে যাচ্ছিল অজানা গন্তব্যে, আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার ১ নম্বর আসামি করে। সেদিন তিনি সৈন্যদের বলেছিলেন, আমাকে একটা মিনিট সময় দাও। তিনি মাটিতে উবু হয়ে বসেছিলেন। এক মুঠো ধূলি তুলে নিয়েছিলেন মুঠোয়। নিজের কপালে-মুখে ঘষেছিলেন। বলেছিলেন, আমার এই দেশেতে জন্ম যেন এই দেশেতে মরি...

কবুতরগুলোর মনে হচ্ছে, ঘাতকের উদ্যত মেশিনগানের সামনে ৩২ নম্বরের সিঁড়িতে দাঁড়িয়ে রাসেলের আব্বা শঙ্কাহীন কণ্ঠে বলছেন, যদি মৃত্যু আসে, এই দেশের মাটিতেই যেন আমার আশ্রয় হয়। আমি তো ’৭১ সালে পাকিস্তানিদের বলেছিলাম, তোমরা আমাকে মেরে ফেলবে, আমার কোনো দুঃখ নাই, শুধু আমার লাশটা আমার বাংলার মানুষের কাছে পৌঁছে দিয়ো। যে দেশে আমার জন্ম, সেই দেশেই যেন মৃত্যু হয়। যেন আমার কবর হয় বাংলার মাটিতে। ফাঁসির মঞ্চে দাঁড়িয়েও আমি বলব, আমি বাঙালি, বাংলা আমার দেশ, বাংলা আমার ভাষা, জয় বাংলা, স্বাধীন বাংলা...

পায়রারা ছুটে যেতে চাইল সিঁড়িতে। কিন্তু তার আগেই গুলির শব্দ।

রাসেলকে আনা হয়েছে নিচে। রাজ তাকিয়ে দেখছে আর উড়ছে। ধবলী তাকিয়ে দেখছে, তার বুক ফেটে আসছে, ক্লান্ত ডানা টেনে টেনে সে উড়ছে আর পাক খাচ্ছে।

বাড়ির রিসেপশনিস্ট মুহিতুল আলমের কাছে আনা হয়েছে রাসেলকে। কালো পোশাকধারী সশস্ত্র সৈন্যরা রাসেলের এত্তটুকুন শরীরটাকে টেনে নিচে আনছে। মুহিতকে জড়িয়ে ধরল রাসেল। বলল, ভাইয়া, ওরা আমাকে মারবে না তো!

না ভাইয়া, তোমাকে কেউ মারবে না।

পায়রারা তাদের মাথার ওপর দিয়ে উড়তে উড়তে বলল, এমন মাসুম বাচ্চাকে কেউ মারতে পারে না। ওকে মারবে না। ওকে মেরো না। ওকে মেরো না। 

রাসেলকে পুলিশ বক্সে রাখা হয়েছে।

ও কাঁদছে, আমি মায়ের কাছে যাব।

চল তোকে মায়ের কাছে নিয়ে যাই। বলে একজন সৈন্য ওকে টেনেহিঁচড়ে ওপরে নিয়ে যাচ্ছে। পায়রারা পিছু নিল তার...

রাসেলকে ওপরে নিয়ে যাওয়া হলো। সিঁড়ি ভেসে যাচ্ছে রাসেলের আব্বা, বাঙালির জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের রক্তে। সিঁড়ির জানালা দিয়ে দেখল পায়রারা।

সেই রক্ত মাড়িয়ে উঠছে সৈন্যরা। রাসেলের আব্বার পরনে লুঙ্গি, গায়ে সাদা পাঞ্জাবি, রক্তে লাল, তার মুখটা দেখাচ্ছে জ্যোতির্ময়...শুভ্র...

সিঁড়িতে পড়ে আছে তার চশমা, হাতে পাইপ...

রাসেলকে ওরা কোথায় নিয়ে যাচ্ছে? কবুতররা একে-অন্যকে জিজ্ঞেস করছে।

ওপরের একটা ঘরে...

ওখানে রাসেলের মায়ের রক্তাক্ত দেহ। ওখানে রাসেলের দুই ভাবি, জামাল ভাই, যাদের হাতের মেহেদির সঙ্গে মিশে আছে রক্ত...

রাসেল কাঁদছে। সে ভেতরে যেতে চাইছে না। তাকে জাপটে ধরে টেনেহিঁচড়ে নেওয়া হচ্ছে ভেতরে...

রাজ বলল, আহা, অতটুকুন বাচ্চা, এত রক্ত দেখে, এত মৃত্যু দেখে ওর কেমন যেন লাগছে...চলো...আমরা ভেতরে ঢুকি। আমরা ওকে মারতে দেব না।

বর্ষার শেষতম দিনে আকাশ কাঁদতে লাগল পায়রাদের সঙ্গে।

খোলা জানালা দিয়ে ভেতরে ঢুকে গেল পায়রারা...

রাসেল আর বন্দুকের নলের মধ্যখানে গিয়ে উড়তে লাগল তারা...

কিন্তু গুলি তারা থামাতে পারল না।

সাদা পায়রাদের দেহ লাল হলো।

রাসেলের চোখ উড়ে গেল সবার আগে...

সে তার দুই ভাবির মধ্যখানে গিয়ে শুয়ে পড়ল। 

তার আত্মাটা বেরিয়ে এসে পায়রা দুটোর পাখায় ভর করে পেছনের দিকে তাকাল একবার। সে দেখতে পেল, তার পায়ের পোড়া দাগটা বেশ স্পষ্ট। 

রক্তাক্ত পায়রারা বলতে লাগল, আমাদের বন্ধু এই ছোট্ট শিশুটাকে, এই মাসুম বাচ্চাটাকেও তোমরা মারতে পারলে!

চলো রাসেল, আমরা আকাশের নীলে মিলে যাই।

এই পৃথিবীতে যেন শান্তি নেমে আসে...

যেতে যেতে তারা তাকাল রাসেলের মায়ের মুখের দিকে...তাকাল রাসেলের আব্বার মুখের দিকে...

রাসেলের আব্বার মুখে অপার্থিব জ্যোতি। তাঁর মুখখানায় একটা পরিতৃপ্তি। আমার মৃত্যু এই বাংলাদেশে হয়েছে...এই বাংলার মাটিতে হবে আমার শেষ আশ্রয়...

রক্তাক্ত ডানা নিয়ে অনন্ত আকাশে মিশে যেতে যেতে পায়রারা বলতে লাগল, মনে আছে, একবার এক ভাষণে রাসেলের আব্বা বলেছিলেন, আপনাদের কাছে আমার ঋণ আমি জীবন দিয়ে শোধ করব...

রাসেলকে লক্ষ্য করে ছোড়া গুলিটাই ছিল ওই বাড়ির ভেতরে শেষ গুলি। এরপর পায়রারা আর কোনো গুলির শব্দ শোনেনি ওই বাড়িতে। তারপর তারা শুনতে পেল, ভেতর থেকে সৈন্যরা বাইরের সৈন্যদের বলছে, অল ফিনিশড।