বিষণ্নতাকে পেছনে ফেলে

মাইলি সাইরাস, রণবীর সিং, সেলেনা গোমেজ ও জেইন মালিক
মাইলি সাইরাস, রণবীর সিং, সেলেনা গোমেজ ও জেইন মালিক
>

অনেক সময় বিষণ্নতা-হতাশায় মুষড়ে পড়তে হয়। ব্যক্তিজীবনের নানা সংকট ও দ্বিধায় তারকারাও পড়েন। তাঁদের ওপর ভর করে বিষণ্নতা আর অবসাদ। কেউ কেউ বিষণ্নতা ভক্তদের কাছ থেকে লুকিয়ে রাখেন। অনেকে মনের জোরে এগিয়ে চলেন, বিষণ্নতাকে জয় করে অনুপ্রেরণা হিসেবে নিজেকে তুলে ধরেন। আজ পড়ুন এমনই কয়েকজন তরুণ তারকার কথা, যাঁরা লড়াই করে ফিরে এসেছেন হতাশ নিস্তেজ-নিস্তব্ধ ভুবন থেকে। 

হাসির উল্টো পিঠে যখন বিষণ্নতা
ডিজনি চ্যানেলের হানা মন্টানা, একসময় খুব জনপ্রিয় একটি চরিত্র ছিল। প্রাণোচ্ছ্বল আর সাবলীল অভিনয়ের জন্য হানা চরিত্রে মাইলি সাইরাস সবার বন্ধু হয়ে গিয়েছিলেন। মেয়ে জন্মের পরে এতটাই হাসত যে বাবা মেয়ের নাম স্মাইলি থেকে রাখেন মাইলি। সেই মাইলি ধীরে ধীরে অভিনেত্রী থেকে সংগীতশিল্পী হিসেবে আবির্ভূত হন। একের পর এক গান দিয়ে ভক্তদের চমকে দেন মাইলি।

হাসিখুশি মাইলি ২০১৪ সালে সবাইকে নাড়া দেন নিজের হতাশার খবর জানিয়ে। এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘বিষণ্নতা নিয়ে কেউ তেমন কথা বলতে চায় না। আসলে কেউ জানে না বিষণ্নতা নিয়ে কীভাবে কথা বলতে হয়। সবাই ধরে নেয় বিষণ্নতার সময়ে দুঃখ পেতেই হবে। আমি জীবনের বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ সময় বেশ বিষণ্নতার মধ্যে কাটিয়েছি। নিজেকে ঘরের মধ্যে আটকে রাখতাম। আমার বাবা দরজা ভেঙে আমাকে খুঁজে বের করতেন। আমি নিজেকে নিয়ে হতাশা ছিলাম ভীষণভাবে।’

পরিবারের সদস্যদের সাহায্যে বিষণ্নতা থেকে বেরিয়ে আসেন মাইলি। তিনি মনে করেন, এ রকম খারাপ সময়ে চারপাশের মানুষেরাই পারে শক্তি দিয়ে সব সমস্যার সমাধান করতে। তার ভাষ্যে, ‘আমার বিষণ্নতার সময় অনেকেই আমাকে নিয়ে কটূক্তি করত। অনেকটা সময় নেই ভালো হওয়ার জন্য, সে সময় পরিবারের সদস্যরা আমার পাশে দাঁড়ান। চারপাশে মানুষের মেকি আচরণ দেখে আমি সব সময়ই বিরক্ত হই। পৃথিবীতে কেন যে আমরা নকল হাসি নিয়ে চলাফেরা করি।’

ত্বকের রং নিয়ে সবাই মাইলিকে কটু কথা শোনাতেন বলেই তাঁর হতাশা শুরু হয়। বিষণ্নতায় একসময় মাইলি মাদকাসক্ত হয়ে পড়েন। এমনকি এমটিভির পুরস্কার গ্রহণের সময় মঞ্চে মাদক নিয়ে উঠে বিতর্ক তৈরি করেন তিনি। বিষণ্নতার কারণে গণমাধ্যম থেকেও বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েন। পরিবারের সদস্যরা একাত্ম হয়ে চিকিৎসা শুরু করলে মাইলি স্বাভাবিক হতে থাকেন।

মাইলি বেশি কষ্ট পান যখন তাঁর প্রেমিক লিয়াম হেমসওর্থের সঙ্গে তাঁর বিচ্ছেদ হয়। সুস্থ হওয়ার পর মাইলি তাঁর ভক্তদের বলেন, ‘জীবনে বিচ্ছেদ থাকবেই। আমার ভালোবাসার মানুষটি যখন আমার কাছ থেকে চলে যায় তখন আমি কষ্টে বিষণ্নতা বোধ করি। ভুলে গিয়েছিলাম যে, বিচ্ছেদ আছে বলেই জীবন এত রঙিন।’

বিষণ্নতাকে জয় করে এখন বেশ স্বাভাবিক মাইলি। ভক্তদের মাঝেমধ্যেই পরামর্শ দেন হতাশা কাটিয়ে সামনে এগিয়ে যেতে। নিয়মের মধ্যে জীবনকে আটকে ফেললে হতাশা কিংবা দুঃখবোধ বেশি দিন টেকে না বলে মনে করেন মাইলি। 

বন্ধু হারানোর শোকে বিষণ্ন রণবীর সিং
এমনিতেই রণবীর সিং বলিউডে হাসিখুশি তারকা হিসেবে পরিচিত। বন্ধুবৎসল এবং অন্যদের প্রতি খুব যত্নশীল বলে সবার প্রিয় রণবীর। খুব কাছের এক বন্ধুর প্রয়াণে অনেকটা সময় বিষণ্ন ছিলেন বলিউডের অভিনেতা রণবীর সিং।

রণবীরের এক বন্ধু ব্যক্তিজীবনের দুঃখ–গ্লানি–হতাশা থেকে দূরে সরে যেতে ফেসবুকে আত্মহত্যার ঘোষণা দেন। সেই বন্ধুর কাছে অন্যরা পৌঁছানোর আগেই বন্ধু আত্মহননের পথ বেছে নেন। ফেসবুকে ঘোষণা দিয়ে যে কেউ আত্মহত্যা করতে পারে, তা কেউই কল্পনাই করতে পারেননি। সেই বন্ধুর অকালপ্রয়াণে অনেক দিন বেশ বিষণ্ন ছিলেন রণবীর।

রণবীরের আরেক বন্ধু সংবাদমাধ্যমকে জানান, রণবীর তাঁর ব্যক্তিজীবনের তেমন কোনো কথা গণমাধ্যম বা ডিজিটাল দুনিয়ার দেয়ালে প্রকাশ করেন না। এমনকি ব্যক্তিগত কষ্ট বা দুঃখ কাউকে জানান না। দীপিকা পাড়ুকোন সেই বিষণ্ন সময়ের কথা জানতেন। বন্ধু যখন আত্মহত্যা করেন, তখন রণবীরের কিছু করার ছিল না বলে নিজের ওপর ভীষণ রাগ তাঁর।

নিজের ওপর রাগ থেকে একসময় বিষণ্ন হয়ে পড়েন রণবীর। পর্দায় সেই বিষণ্নতা না দেখালেও ব্যক্তিজীবনে একাকিত্বের চাদরে আটকে যান তিনি। সে সময় নিয়মিত থেরাপিস্টের কাছে যেতে হতো তাঁকে। অনেকটা সময় লেগেছিল স্বাভাবিক হতে। সে ঘটনার পর থেকে এখন রণবীর তাঁর পরিবার ও বন্ধুবান্ধবদের প্রতি আরও সংবেদনশীল। 

সেলেনার আজীবনের দুশ্চিন্তা
হাজারো তরুণের ‘ক্রাশ’ বলা হয় তাকে, তিনি গায়িকা সেলেনা গোমেজ। সেলেনার তারকাখ্যাতি, জনপ্রিয়তা সবই আছে, তবুও তিনি হতাশাবোধ করেন। সেই হতাশা কাটাতে ২০১৮ সালকে নিজেকে নতুন করে সাজানোর বছর হিসেবে ঠিক করেছেন তিনি। তাঁর বয়ানে, ‘দুশ্চিন্তা আর হতাশা নিয়ে আমার অনেক সমস্যা আছে। আমি এত দিন ইচ্ছে করেই নিজের সমস্যা কাটানোর চেষ্টা করিনি। এ বছর নিজেকে আমি সময় দিয়ে ঠিক করতে চাই। বাকি জীবনের জন্য এখনই তৈরি হতে হবে।’

এ কারণেই এ বছর তেমন কনসার্ট বা গান নিয়ে ব্যস্ততা দেখা যাচ্ছে না। গত গ্রীষ্মে সেলেনা তাঁর কিডনি প্রতিস্থাপনের কথা জানান। হতাশায় শরীরের প্রতি তেমন যত্নশীল ছিলেন না এই তারকা। সেই প্রভাবের কারণে তাঁর কিডনি জটিলতা দেখা যায়। পুষ্টিকর খাদ্য, নিয়মিত ব্যায়াম আর প্রফুল্ল মন তৈরির জন্য চেষ্টা করে যাচ্ছেন সেলেনা।

 ২০১৬ সালে দুশ্চিন্তার কারণে অনেক কনসার্ট বাতিল করেন তিনি। কনসার্ট বাতিলের পাশাপাশি ভক্তদের সঙ্গে দূরত্ব তৈরি হয় তাঁর। পাপারাজ্জিদের সঙ্গে খারাপ আচরণও করছিলেন কয়েকবার। সবাই ভেবেছিলেন তারকাখ্যাতির কারণে পথভ্রষ্ট হয়ে যাচ্ছেন সেলেনা।

তারকা সেলেনার পতনে ভীষণ কষ্ট পাচ্ছিলেন তাঁর ভক্তরা। পরে জানা যায়, যুক্তরাষ্ট্রের টেনেসির এক সেবাকেন্দ্রে মানসিক চিকিৎসার জন্য জন্য ভর্তি হয়েছিলেন তিনি। দুশ্চিন্তা কাটাতে ডায়ালেকটিক্যাল বিহেভিয়র থেরাপি গ্রহণ করেন তিনি। নিজের আবেগ নিয়ন্ত্রণ ও প্রফুল্লতা খুঁজতে সংগ্রাম করে যাচ্ছেন তিনি। সেলেনা এক সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘আমি আরও বেশি উচ্ছ্বল হওয়ার চেষ্টা করে যাচ্ছি, যে কারণে স্বাস্থ্যের দিকে জোর দিচ্ছি। স্বাস্থ্যের সঙ্গে সুখের সংযোগ আছে। আপনি স্বাস্থ্যের যত্ন নিলে সুখী হতে পারেন।’

প্রায় বিশৃঙ্খল একটি জীবনকে গোছানোর চেষ্টা করে যাচ্ছেন সেলেনা। এ ক্ষেত্রে তাঁকে সবচেয়ে বেশি সহযোগিতা করছেন তাঁর বন্ধুবান্ধব ও পরিবারের সদস্যরা। জাস্টিন বিবারের সঙ্গে প্রেমের বিচ্ছেদে সাময়িক কষ্ট পেলেও এখন জীবনকে উপভোগ করা শিখেছেন সেলেনা। ‘আমি জানি, কখনো দুশ্চিন্তাকে পুরোপুরি কাটানো সম্ভব নয়, কিন্তু দুশ্চিন্তাকে পাশে রেখে জীবনকে রাঙানোর চেষ্টা করলেই আমরা নিজেকে নতুন করে চিনতে পারব।’ 

খাদ্যে জেইন মালিকের অরুচি
হালের ক্রেজদের মধ্যে অন্যতম জেইন মালিক। প্রেমিকা সুপারমডেল জিজি হাদিদকে নিয়ে মাঝেমধ্যেই পত্রিকার শিরোনাম হচ্ছেন জেইন। অনেক দিন ধরেই প্রতিদিনকার খাবারে অরুচি চলছে তাঁর। অরুচির কারণে একপর্যায়ে হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়েন জেইন।

হতাশার কারণেই কাজে অমনোযোগী ছিলেন অনেক দিন। ধীরে ধীরে ভক্তদের সঙ্গে তাঁর দূরত্ব তৈরি হয়। ছেলেকে সঠিক পথে ফেরাতে জেইনের মা পর্দায় আবির্ভূত হন। মায়ের কড়া শাসনে এখন বেশ নিয়মের মধ্যে জীবন কাটাচ্ছেন তিনি।

জেইনের ভাষ্যে, ‘যখন হতাশা কড়া নাড়ে তখন আমি নিজেকে হারিয়ে ফেলি। বাড়িতে আমার মা আছেন বলেই আমি প্রতিদিনকার জীবনকে নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করে যাচ্ছি।’

গ্রন্থনা: জাহিদ হোসাইন খান

সূত্র: জিকিউ ও এলে ম্যাগাজিন