কাজ শিখে হয়েছেন উদ্যোক্তা

মডেলদের সঙ্গে নাজমা মাসুদ। ছবি: সংগৃহীত
মডেলদের সঙ্গে নাজমা মাসুদ। ছবি: সংগৃহীত

নাজমা মাসুদের গল্পটা শুরু হয়েছিল খুব ছোটবেলায়। সেই গল্পের পরিণত পর্যায়ে নাজমা এখন উদ্যোক্তা। আবার শুরুর দিকে নজর দেওয়া যাক। বড় বোন আসিয়ার কাছে সুই-সুতা দিয়ে কাপড় সেলাই শেখার হাতেখড়ি। স্কুলজীবন পার করতে করতেই নাজমা রপ্ত করে নিয়েছিলেন ঝাড়ুর কাঠির মধ্যে উল দিয়ে পেঁচিয়ে কী করে সুদৃশ্য ফুলের কলি বানাতে হয়, সে কৌশল। এরপর একে একে অ্যাপ্লিক, ক্রসস্ট্রিচ, ভরাট সেলাই, সাগুদানা, যশোরের কাঁথাফোঁড়, বাটিক শিখে নিলেন। এসবই ছিল প্রস্তুতি।

কলেজে পড়ার সময় ফুচা ট্রেনিং সেন্টারে টেইলারিংও শিখলেন। যখন যে হাতের কাজটি দেখেছেন, তা-ই শিখে নিয়েছেন নিজের প্রচেষ্টায়। আর এই শেখাটেখা মিলিয়ে নন্দিনী ফ্যাশন নামে বুটিক হাউস চালু করেছেন রাজধানী ঢাকার মোহাম্মদপুরে। এটাও নিজের উদ্যোগে।

মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় মাত্র দুই মাস বয়সেই মা-বাবাকে হারান নাজমা। প্রথমে তাঁর মা সাহেরা বেগম, পরে বাবা গোলাম রহমান শহীদ হন মুক্তিযুদ্ধের সময়ে। ছোটবেলা থেকেই তাই অনেক না-পাওয়া বুকের ভেতর চেপে রাখতে হয়েছে নাজমাকে। এরপর পরিশ্রমের মধ্য দিয়ে আজ সফল উদ্যোক্তা নাজমা মাসুদ। আনন্দভুবন, অনন্যা আয়োজিত একাধিক ঈদ ফ্যাশন প্রতিযোগিতায় বেশ কিছু পুরস্কার পেয়েছেন তিনি। নারী কণ্ঠ ফাউন্ডেশনের ‘বেগম রোকেয়া শাইনিং পার্সোনালিটি অ্যাওয়ার্ড’ পেয়েছেন। আরও অনেক পুরস্কার রয়েছে নাজমা মাসুদের ঝুলিতে।

বর্তমানে উইমেন্স এম্পাওয়ারমেন্ট অর্গানাইজেশনের সভাপতি নাজমা মাসুদ। এ বছরের ঈদুল ফিতরে ৪০ জন উদ্যোক্তার হাতে তৈরি সালোয়ার-কামিজ, জামদানি শাড়ি, নকশিকাঁথা, চাদর ও ফতুয়া-পাঞ্জাবির মেলার আয়োজন করেছেন গুলশানে।

নাজমা মাসুদের এই এগিয়ে চলার গল্পে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন তাঁর স্বামী স্টেপ ওয়ান গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাসুদ হাসান। নাজমা বললেন, ‘আজকের এই পর্যায়ের জন্য স্বামীর কাছে আমি কৃতজ্ঞ।’ এই দম্পতির সংসারে এক ছেলে, এক মেয়ে—ঐশ্বর্য ও প্রাচুর্য।

নিজের প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি স্টেপ ওয়ান গ্রুপের উপব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবেও কাজ করছেন নাজমা মাসুদ। নাজমা বলেন, ‘আমার প্রতিষ্ঠানে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে আসা মেয়েদের প্রশিক্ষণ দিচ্ছি নিজ হাতে। আমরা আরও বেশি বেকার ছেলেমেয়েদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করে দিতে চাই। এ নিয়েই প্রতিনিয়ত কাজ করে যাচ্ছি।’