৪৮ বছরের 'তরুণের' পর্বত জয়ের মিশন

বাংলা মাউন্টেইনিয়ারিং অ্যান্ড ট্রেকিং ক্লাবের পক্ষ থেকে ১৫ অক্টোবর আমা-দাবলাম পর্বত অভিযান শুরু করবেন পর্বতারোহী এম এ মুহিত। এ উপলক্ষে আজ শুক্রবার জাতীয় প্রেসক্লাবে মুহিতকে জাতীয় পতাকা প্রদান করেন সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা অর্থনীতিবিদ হোসেন জিল্লুর রহমান এবং মুক্তিযোদ্ধা মোবাশ্বের হোসেন। ছবি : প্রথম আলো
বাংলা মাউন্টেইনিয়ারিং অ্যান্ড ট্রেকিং ক্লাবের পক্ষ থেকে ১৫ অক্টোবর আমা-দাবলাম পর্বত অভিযান শুরু করবেন পর্বতারোহী এম এ মুহিত। এ উপলক্ষে আজ শুক্রবার জাতীয় প্রেসক্লাবে মুহিতকে জাতীয় পতাকা প্রদান করেন সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা অর্থনীতিবিদ হোসেন জিল্লুর রহমান এবং মুক্তিযোদ্ধা মোবাশ্বের হোসেন। ছবি : প্রথম আলো

দুপাশে দুটি ছোট পর্বত। এর মাঝখানে মাথা উঁচু করে নীল আকাশটাকে ছোঁয়ার চেষ্টা করছে বরফাচ্ছন্ন আরেকটি পর্বত—নাম তার ‘আমা-দাবলাম’। অবস্থান নেপালে, বিশ্বের সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গ এভারেস্টের দক্ষিণ পাশে। নেপালিরা মনে করে ‘আমা-দাবলাম’ সৌন্দর্যের রানি। নেপালি ভাষায় ‘আমা’ শব্দের অর্থ ‘মা’ আর ‘দাবলাম’ বাংলা অর্থ ‘নেকলেস’ বা গলার হার। সুন্দর হার পরে এক মা তাঁর দুই বাহু দিয়ে দুই সন্তানকে আগলে রেখেছেন।

নজরকাড়া সৌন্দর্য হলেও ৬ হাজার ৮১২ মিটার বা ২২ হাজার ৩৫০ ফুট উঁচু আমা-দাবলামের গিরিপথ বেশ দুর্গম। একেবারে খাঁড়া। ৯০ ডিগ্রি খাঁড়া এই গিরিপথ। শক্ত পাথরের দুর্গম পর্বত জয়ের মিশনে যাচ্ছেন বাংলাদেশের পর্বতারোহী এম এ মুহিত। বয়স ৪৮ বছর। একেবারে ছিপছিপে দেহের গড়ন। শরীরে একবিন্দুও মেদ নেই। পর্বত জয়ই তাঁর নেশা। তবে এই নেশার লক্ষ্য একটিই—বাংলাদেশের লাল-সবুজ পতাকা ওড়াবেন বিশ্বের উঁচু সব পর্বতশৃঙ্গে। এরই মধ্যে দু্বার এভারেস্ট, একবার করে চো-ইয়ো,মানাসলু পর্বতশৃঙ্গে মেলে ধরেছেন তিনি বাংলাদেশের পতাকা। এ ছাড়া হিমালয়ের সাত হাজার মিটারের একটি এবং ছয় হাজার মিটারে ছয়টি পর্বত শিখর জয় করেছেন এম এ মুহিত।

বাংলা মাউন্টেইনিয়ারিং অ্যান্ড ট্রেকিং ক্লাবের পক্ষ থেকে আমা-দাবলাম জয়ের মিশন মুহিত শুরু করবেন ১৫ অক্টোবর। তাঁর সঙ্গে নেপাল যাচ্ছেন ইফফাত ফারহানা, কাওসার রূপম, মারুফ সালাম, আরিফুল ইসলাম ও সুজয় সেনগুপ্ত। ছয়জন পর্বতারোহীর মধ্যে পাঁচজন আমা-দাবলামের বেসক্যাম্পে ১৫ হাজার ৪২০ ফুট উচ্চতা পর্যন্ত আরোহণ করে ফিরে আসবেন। তবে ৪৮ বছর বয়সী মুহিত তাঁর শেরপাকে নিয়ে আমা-দাবলামের চূড়ায় উঠবেন।

মুহিতের আশা, নভেম্বর মাসের ৭ তারিখের মধ্যে পর্বতটি জয় করতে পারবেন। বাংলাদেশের পর্বত অভিযান উপলক্ষে আজ শুক্রবার জাতীয় প্রেসক্লাবের কনফারেন্স লাউঞ্জে পতাকা-প্রদান অনুষ্ঠানে এ কথা জানান তিনি।

অনুষ্ঠানে সম্মানিত অতিথি হিসেবে মুহিতের হাতে বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা তুলে দেন সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা অর্থনীতিবিদ হোসেন জিল্লুর রহমান ও মুক্তিযোদ্ধা মোবাশ্বের হোসেন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন অভিযানের পৃষ্ঠপোষক ইস্পাহানী টি লিমিটেডের মহাব্যবস্থাপক (জিএম) ওমর হান্নান ও ইউনিয়ন ব্যাংক লিমিটেডের উপব্যবস্থাপনা পরিচালক হাসান ইকবাল।

এম এ মুহিত প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমা-দাবলাম খুব সুন্দর একটি পর্বত। এর শৃঙ্গের ঠিক নিচে গলার মাঝখানে সাদা জমাট বরফ থাকে। দূর থেকে দেখলে মনে হবে যেন কোনো মেয়ের গলার হার। আমি এভারেস্টের চূড়া থেকে আমা-দাবলামকে দেখছিলাম। এভারেস্ট তো দেখতে খুব একটা সুন্দর নয়। কিন্তু আমা-দাবলামকে বেশ কয়েকবার অন্য পর্বতের শৃঙ্গ থেকে অনেক বার দেখেছি। অনেক পর্বতারোহীরই এই পর্বত জয়ের ইচ্ছে থাকে। আমারও তেমনই ইচ্ছে। তবে ইচ্ছে করলেই তো সহজে পূরণ হয় না। আবহাওয়ার দিক বিবেচনা করে অক্টোবর মাসকেই বেছে নিয়েছি। এ সময় আমা-দাবলামে অভিযান চালানো একটু সহজ থাকে। তাপমাত্রা মাইনাস ২০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মতো থাকে। কিন্তু খাঁড়া গিরিপথ বেয়েই চূড়ায় উঠবে হবে। আশা করছি সব বিপদ টপকে আমা-দাবলামের চূড়ায় বাংলাদেশের পতাকা উড়াতে পারব।’

হোসেন জিল্লুর রহমান বলেন, মুহিত কেবল ব্যক্তির খ্যাতি তুলে ধরছে না, ধারাবাহিকভাবে পর্বতারোহণের মাধ্যমে একটি প্রজন্মকেও উৎসাহিত করার চেষ্টা করছেন। এই অর্জনের জন্য অধ্যবসায়, দলীয় চেষ্টার প্রয়োজন। আশা করছি মুহিত বিপদ ছাড়াই এবার পর্বত জয় করবেন।

স্থপতি মোবাশ্বের হোসেন বলেন, বাংলাদেশ যদি স্বাধীন না হতো তাহলে শুধু নেপাল পর্যন্ত যাওয়া হতো। এর বেশি কিছু হতো না। স্বাধীনতা আমাদের স্বপ্নের দুয়ার খুলে দিয়েছে। আমরা বিশ্বের সর্বোচ্চ শিখরে দেশের পতাকা ওড়াতে পেরেছি, যে পতাকা ৩০ লাখ শহীদের প্রাণের বিনিময়ে অর্জন করেছি।