বিজয়িনী বৈমানিক রিয়ানা

মা–বাবার সঙ্গে রিয়ানা আজাদ। ছবি: সংগৃহীত
মা–বাবার সঙ্গে রিয়ানা আজাদ। ছবি: সংগৃহীত

বাংলাদেশে নারীর অগ্রযাত্রায় একটি উজ্জ্বলতম নাম ফ্লাইং অফিসার রিয়ানা আজাদ। তিনি বাংলাদেশের সামরিক ইতিহাসে প্রথম নারী বৈমানিক, যিনি প্রশিক্ষণকালে সার্বিক বিষয়ে সেরা কৃতিত্বের জন্য ‘সোর্ড অব অনার’ লাভ করেছেন। এটি সামরিক বাহিনীর প্রাক্‌–কমিশন প্রশিক্ষণকালীন সর্বোচ্চ সম্মান ও গৌরবের প্রতীক। কোর্সের শ্রেষ্ঠ ফ্লাইট ক্যাডেটকে ‘সোর্ড অব অনার’ প্রদান করা হয়।

গত ১২ ডিসেম্বর ৭৫ নম্বর বাফা (বাংলাদেশ এয়ারফোর্স অ্যাকাডেমি) কোর্সে বাংলাদেশ বিমানবাহিনীতে জিডি (পি) শাখায় নারী বৈমানিক হিসেবে কমিশন লাভ করেন রিয়ানা আজাদ। এদিন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ তাঁকে বর্ণাঢ্য কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠানে সোর্ড অব অনার প্রদান করেন।

সোর্ড অব অনার পাওয়ার পর রিয়ানা আজাদ বলেন, ‘সামরিক বাহিনীতে একাডেমির দীর্ঘমেয়াদি কোর্সের সবচেয়ে সম্মান ও গৌরবের প্রতীক সোর্ড অব অনার পেয়ে আমি নিজেকে সৌভাগ্যবান মনে করছি। এই মাহেন্দ্রক্ষণে বিএএফ একাডেমিতে আমার সিনিয়রদের স্মরণ করছি, যাঁরা আমাকে প্রশিক্ষণের সময় প্রতিটি বিষয়ে হাতে–কলমে শিখিয়েছেন। দক্ষ প্রশিক্ষকদেরও ধন্যবাদ জানাচ্ছি, যাঁরা আমাকে বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর একজন কর্মকর্তা হয়ে ওঠার ব্যাপারে অনবদ্য ভূমিকা রেখেছেন। সর্বোপরি মহান আল্লাহ তাআলা ও আমার বাবা–মায়ের প্রতি অশেষ কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি। আমি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে বিশেষভাবে কৃতজ্ঞ। কেননা, তিনিই সশস্ত্র বাহিনীতে নারীদের যোগদানের সুযোগ করে দিয়েছেন।’

দীর্ঘ তিন বছরের কঠোর পরিশ্রম ও সাধনার পর বিমানবাহিনীতে কমিশন পেয়েছেন রিয়ানা আজাদ। তিনি বললেন, ‘বাংলাদেশ বিমানবাহিনী একটি দক্ষ, আধুনিক ও প্রযুক্তিনির্ভর সুশৃঙ্খল বাহিনী। বাংলার আকাশ মুক্ত রাখার দৃপ্ত প্রত্যয়ে উজ্জীবিত এই বাহিনীর একজন কর্মকর্তা হতে পেরে আমি গর্বিত। ছোটবেলা থেকে নীল আকাশে ওড়া বিমান দেখে মনের কোণে উঁকি দিয়েছিল আকাশে ওড়ার স্বপ্ন। আজ সে স্বপ্ন বাস্তবে রূপ পাওয়ায় আমি আনন্দিত।’

বিমানবাহিনী একাডেমিতে একজন প্রশিক্ষণার্থীকে সামরিক প্রশিক্ষণের পাশাপাশি ভবিষ্যতের একজন সুনাগরিক হওয়ার প্রশিক্ষণও দেওয়া হয়। রিয়ানা বলেন, ‘ডিসিপ্লিন, ইন্টেগ্রিটি অ্যান্ড এক্সিলেন্স ইন অল উই ডু—এই মন্ত্রে দীক্ষিত হয়ে একজন সৎ, নির্ভীক ও পেশাদার কর্মকর্তা হিসেবে গড়ে তোলার জন্য এই একাডেমির রয়েছে দীর্ঘ ইতিহাস। একাডেমির সার্বিক প্রশিক্ষণ কার্যক্রমে আমি মুগ্ধ।’

রিয়ানা আজাদ
রিয়ানা আজাদ

ফ্লাইং অফিসার রিয়ানা আজাদ তিন ভাইবোনের মধ্যে বড়। জন্ম ও বেড়ে ওঠা ঢাকায়। বাড়ি বরিশালের বাকেরগঞ্জ উপজেলায়। লেখাপড়া করেছেন উত্তরা রাজউক মডেল কলেজে। এসএসসি ও এইচএসসি পাস করেছেন ২০১৩ ও ২০১৫ সালে। দুটি পরীক্ষাতে জিপিএ–৫ পেয়েছেন। প্রাতিষ্ঠানিক লেখাপড়া শেষ করে প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে ২০১৬ সালের ১ জানুয়ারি ফ্লাইট ক্যাডেট হিসেবে বিএএফ একাডেমিতে যোগ দেন। তাঁর ছোট ভাই নটর ডেম কলেজে পড়ছে। ছোট বোন চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ে। রিয়ানা আজাদের বাবা মো. আবুল কালাম আজাদ একজন প্রকৌশলী। চাকরি করছেন কুয়েত এয়ারওয়েজে। মা তাসলিমা আক্তার গৃহিণী।

রিয়ানার বাবা মেয়ের সাফল্যে গর্বিত। তিনি বলেন, ‘রিয়ানা ছোটবেলা থেকেই লেখাপড়ায় মনোযোগী ও আন্তরিক ছিল। ওর লেখাপড়ার প্রতি আমরা খেয়াল রাখতাম।’ রিয়ানার মা বলেন, ‘আমার মেয়ে যখন প্রশিক্ষণে যায়, তখন আমি অজান্তেই বলে ফেলেছিলাম, তুই সোর্ড অব অনার পাবি। এ কথাই আজ সত্যি সত্যি ওর জীবনে বাস্তবায়িত হয়েছে, যা আমার জন্য খুবই আনন্দের এবং গৌরবের।’

যাঁরা এ পেশায় আসতে চান, তাঁদের উদ্দেশে রিয়ানা বললেন, বর্তমানে বিমানবাহিনীতে উল্লেখযোগ্যসংখ্যক নারী কর্মকর্তা রয়েছেন। একজন–দুজন করে নারী বৈমানিকের সংখ্যাও বাড়ছে। নারীদের জন্য বিমানবাহিনী একটি নির্ভরযোগ্য কর্মক্ষেত্র। পরিশ্রম, মেধা এবং ইচ্ছাশক্তি থাকলে যেকোনো ক্ষেত্রেই সাফল্য লাভ করা যায়। আর ছেলেমেয়েকে আলাদা হিসেবে না দেখে নিজেকে একজন ব্যক্তি হিসেবে দেখলে কোনো বাধাই আর বাধা মনে হবে না। এভাবেই নারীরা এগিয়ে যাবে অদম্য গতিতে।

লেখক: সহকারী পরিচালক (বিমান), আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর-আইএসপিআর