৪৭ বছর পর ফিরলেন বাড়ি

ইদ্রিস আলী
ইদ্রিস আলী

অভাব-অনটনের সংসারে ছেলেবেলায় বাবাকে হারান ইদ্রিস আলী। পেটের দায়ে চাচা মোমিন শেখের হাত ধরে ঘর ছাড়েন হাফপ্যান্ট, ছেঁড়া শার্ট পরে। সেটা ছিল ১৯৭২ সাল। সেদিনের সেই ১২ বছরের কিশোর ঘরে ফিরেছেন গত শনিবার। তবে তাঁর বয়স এখন ৫৯।

ইদ্রিস আলীর জন্ম ১৯৬০ সালে ফরিদপুরের সালথা উপজেলার বটরকান্দা গ্রামে। বাবা গোপাল শেখ। দুই ভাইয়ের মধ্যে তিনি ছোট। তাঁর ফিরে আসার খবরে এলাকার শত শত মানুষের ভিড় বড় ভাই আবু তালেবের বাড়িতে। ভাইকে ফিরে পেয়ে বেজায় খুশি তালেব। তিনি বলেন, ‘আমি যে আমার ভাইকে ফিরে পেয়েছি, এ ব্যাপারে কোনো সন্দেহ নেই। ছোটবেলায় গরুর গুঁতায় আমার একটি দাঁত পড়ে গিয়েছিল, সে কথা বলতে পেরেছে ইদ্রিস।’

৪৭ বছর আগের গল্প শোনান ইদ্রিস আলী, ‘অল্প বয়সে বাবা মারা গেছেন। অভাবের জন্য চাচার সঙ্গে বাড়ি থেকে বের হয়ে যাই। চাচা দিনাজপুর যাওয়ার সময় কুষ্টিয়া রেলস্টেশনের একটি হোটেলে পেটে-ভাতে আমাকে রেখে যান। কিন্তু কয়েক দিন পরই উঠে যায় হোটেলটি।’

ইদ্রিস আলী বলেন, এরপর মন্টু মিয়া নামের এক ব্যক্তি তাঁকে কুষ্টিয়া সদরের কবিখালী গ্রামে নিজ বাড়িতে নিয়ে যান। একজনের বাড়িতে রাখালের কাজ ঠিক করে দেন। আট বছর কাজ করেন সেখানে। পরে ওই গ্রামের আরেকজনের বাড়িতে কাজ করেন পাঁচ বছর। আরেকজনের বাড়িতে কৃষিকাজ করেন বছরখানেক। এভাবে কেটে যায় অনেক বছর। বাড়ি ফেরার উপায় ছিল না। কারণ, বাবা, ভাই ও নিজ গ্রামের নাম ছাড়া আর কিছুই মনে পড়ত না। তবে শেষমেশ দুই ব্যক্তির সহায়তায় পেয়েছেন ঠিকানা, ফিরেছেন নিজ গ্রামে। কিন্তু ফিরে দেখেন, মা আর বেঁচে নেই। আছেন বড় ভাই তালেব।

আবু তালেব বলেন, ‘ইদ্রিসকে কুষ্টিয়ার হোটেলে রেখে চাচা বাড়ি ফেরেন ২৫ দিন পর। ঠিকানা নিয়ে সেখানে ছুটে যাই। কিন্তু স্থানীয় লোকজন জানান, হোটেলটি ভেঙে দেওয়া হয়েছে। হতাশ হয়ে বাড়ি ফিরি।’