কপালের টিপে বাঙালিয়ানা

বাহারি টিপে প্রিয়াঙ্কা সিকদার
বাহারি টিপে প্রিয়াঙ্কা সিকদার

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে চারুকলায় এমএ করেছেন প্রিয়াঙ্কা সিকদার। তিনি আট বছর ধরে কপালের টিপে নিজের পছন্দের নকশা এঁকে ব্যবহার করেন। কোনো টিপে রবীন্দ্রনাথ, কোনোটিতে নজরুল, আবার কোনোটিতে থাকে শরতের কাশফুল। এবার পয়লা বৈশাখে সাজের জন্যও এঁকেছেন অনেক টিপ। তবে এ শিল্পকর্ম এখন পর্যন্ত শখের বশেই করছেন।

প্রিয়াঙ্কা বড় হয়েছেন রাজশাহী নগরের বেলদারপাড়া এলাকায়। বাবা জয়দেব সিকদারের রাজশাহী নিউ মার্কেটে কারুশিল্পের ব্যবসা। মা–বাবার উৎসাহেই নতুন কিছু করার প্রেরণা পান প্রিয়াঙ্কা। বর্তমানে ফ্রিল্যান্সার হিসেবে লোগো, কার্ড, বুক কাভারের নকশা করেন। আর চাকরি পেতে করছেন পড়াশোনা।

প্রিয়াঙ্কার স্বামী সরকার অসীম কুমার পাবনার চাটমোহর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও)। তাঁর একমাত্র সন্তান অরিত্রের বয়স আড়াই বছর। সংসার, পড়াশোনা সামলেই তিনি টিপে নকশা আঁকেন। টিপ নিজে পরেন, অন্যকে উপহার দেন।

প্রিয়াঙ্কা বললেন, ‘দেখতাম, ফেরদৌসী প্রিয়ভাষিণী ও ফ্যাশন ডিজাইনার বিবি রাসেল আঁকিবুঁকি করা টিপ পরে বিভিন্ন টেলিভিশন অনুষ্ঠানে কথা বলতেন। জিনিসটা ভালো লেগে যায়। তখন থেকেই টিপে আঁকিবুঁকি শুরু করি। প্রথম দিকে বিভিন্ন বর্ণ লিখে টিপ পরতাম। কখনো “ক”, কখনো “মা”, কখনো “অ”, আবার কখনোবা তাতে লেখা থাকত “২১”। বছরখানেক আগে বিভিন্ন দিবসের সঙ্গে মিলিয়ে টিপে নকশা করতে শুরু করি।’

প্রিয়াঙ্কার নকশা করা বাহারি টিপ
প্রিয়াঙ্কার নকশা করা বাহারি টিপ

প্রিয়াঙ্কা জানালেন, প্রথমে রবীন্দ্রজয়ন্তীর অনুষ্ঠানকে সামনে রেখে টিপে রবীন্দ্রনাথের প্রতিকৃতি আঁকেন। এটা দেখে সবাই পছন্দ করেন। পরে নজরুল, নারী দিবসে রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেন, স্বাধীনতা দিবসে বাংলাদেশের মানচিত্র, পতাকা, ১৭ মার্চ বঙ্গবন্ধুর জন্মদিনে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতি—এভাবে চলতে থাকে। বাউলের একতারা, গ্রামীণ ঐতিহ্যের পরিচয় বহনকারী শিকা, শখের হাঁড়ি, ঘুড়িসহ নানা বিষয়ও বাদ যায়নি টিপের নকশা থেকে।

প্রিয়াঙ্কার চাচাতো বোন মনীষা সিকদার প্রায়ই নকশা আঁকা এই উপহার পান। তিনি বললেন, বাজার থেকে টিপ কিনে সবাই পরেন। কিন্তু এ রকম টিপ পরলে সবাই অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকেন। সবাই জানতে চান, কোথায় কিনতে পাওয়া যায়।

স্কুলশিক্ষিকা কামরুন নাহার বললেন, তিনি প্রিয়াঙ্কাকে প্রায় সব অনুষ্ঠানেই টিপ পরে যেতে দেখেন। একটা টিপের মধ্যে এমন সুন্দর শিল্পকর্ম যে করা যায়, তা নিজের চোখে না দেখলে বিশ্বাস করাই কঠিন হতো।

প্রিয়াঙ্কার স্বামী সরকার অসীম কুমার তাঁর টিপের প্রধান ভক্ত। তিনি বেশ গর্ব করেই জানালেন, ২৮ মার্চ চাটমোহর উপজেলা প্রশাসন আয়োজিত চিত্রকর্ম প্রদর্শনীতে স্ত্রীর অঙ্কিত টিপের প্রতি মানুষের আলাদা আকর্ষণ ছিল।