নারীদের চলাচলকে সহজ করেছে 'শাটল'

শাটলে চলাচল করছেন নারীরা
শাটলে চলাচল করছেন নারীরা

বিশ্ববিদ্যালয়ে যেতে শিক্ষার্থী আশমিতা আলিফের বাবার অফিসে যাওয়ার সময়ের ওপর নির্ভর করতে হতো। বাড়ি ফেরার বেলায় ভরসা ছিলেন বন্ধুরা। তবে আশমিতা শাটল নামে পিক অ্যান্ড ড্রপ সার্ভিসে যাতায়াত করায় পরিবার এখন স্বস্তিতে আছে। আরামের সঙ্গে সহনীয় মাত্রার ভাড়া চলাচলকে সহজ করেছে বলেই জানালেন আশমিতা।

শাটল অ্যাপভিত্তিক পরিবহনসেবা প্রতিষ্ঠান। গত বছরের জুলাইয়ে শাটল নামে নতুন এক সেবা চালু হয় রাজধানীতে। সম্পূর্ণ নারীদের জন্য মাইক্রোবাসভিত্তিক পিক অ্যান্ড ড্রপ সার্ভিসটি বর্তমানে ঢাকায় ছয়টি রুটে চলছে। শাটলে চড়তে হলে অ্যান্ড্রয়েড ভার্সনে অ্যাপ ডাউনলোড করে রেজিস্ট্রেশন করতে হবে। এ ছাড়া সরাসরি ফোন করেও রেজিস্ট্রেশন করা যায়। যাত্রার অন্তত এক ঘণ্টা আগে নিজের রাইড বুক করে নিতে হবে। এক দিন আগেও করা যাবে। নতুন যাত্রীর জন্য শাটলে প্রথম তিনটি থেকে ছয়টি রাইড ফ্রি। প্রতিটি মাইক্রোবাসে চালকের সঙ্গে থাকা শাটলের ট্রিপ ম্যানেজারের মাধ্যমে রাইড শুরু হওয়ার ১৫ মিনিট আগে যাত্রীকে ফোন দিয়ে কোথায় আসতে হবে, তা জানিয়ে দেওয়া হয়।

শাটলের প্রতিষ্ঠাতা তিনজন—জাওয়াদ জাহাঙ্গীর, রিয়াসাত চৌধুরী ও শাহ সুফিয়ান মাহমুদ চৌধুরী। জাওয়াদ জাহাঙ্গীর বললেন, শাটলের মাইক্রোবাসে করে নারীদের নির্দিষ্ট গন্তব্যে পৌঁছে দেওয়া হয়। এতে একসঙ্গে ১০ জন চড়তে পারেন।

সম্প্রতি জিগাতলা থেকে শাটলের একটি সার্ভিসে চড়ে কথা হয় ইনডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশের শিক্ষার্থী আশমিতা আলিফের সঙ্গে। তিনি বললেন, শাটল সার্ভিসে সিএনজি অটোরিকশা বা অন্য কোনো রাইড শেয়ারিংয়ের চেয়ে খরচ হয় অনেক কম।

শাটলে চলাচলকারী যাত্রীদের বেশির ভাগই শিক্ষার্থী। কেউ কানে হেডফোন দিয়ে গান শুনছেন, কেউ পরীক্ষার আগে শেষ মুহূর্তের জন্য বইয়ে চোখ বুলিয়ে নিচ্ছেন। ঝুট-ঝামেলা নেই। শীতাতপনিয়ন্ত্রিত গাড়ি।

শাটলের ১৮টি মাইক্রোবাস আছে। এদের রুটগুলো হলো উত্তরা থেকে বসুন্ধরা, মিরপুর থেকে বসুন্ধরা, ধানমন্ডি থেকে বসুন্ধরা, মোহাম্মদপুর থেকে বসুন্ধরা, ধানমন্ডি থেকে গুলশান এবং মিরপুর থেকে মোহাম্মদপুর হয়ে গুলশান ও রামপুরা। এসব রুটের ভাড়া ৮০ থেকে ১২০ টাকার মধ্যে। এ ছাড়া ১০টি রাইডের টিকিট একসঙ্গেও কিনে রাখা যায়। সকাল ৬টা ৪০ মিনিটে শাটলের প্রথম রাইড শুরু হয়। সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় শেষ রাইড যায়।

জাওয়াদ জাহাঙ্গীর জানান, নারীদের নিরাপত্তা নিয়ে এ দেশে সবাই উদ্বিগ্ন। সে চিন্তা থেকেই শাটলের এ সেবা। এতে ট্রিপ ম্যানেজাররা শাটলের নিজস্ব কর্মী। যাচাই–বাছাই করার পর গাড়ি ও চালক ভাড়া করা হয়। ট্রিপ শুরুর আগে চালকদের আচরণসহ বিভিন্ন বিষয়ে প্রশিক্ষণও দেওয়া হয়।

ধানমন্ডির বাসিন্দা নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মালিহা প্রমা প্রায় ছয় মাস ধরে শাটলে চড়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে যাতায়াত করেন। মালিহা মনে করেন, এ ধরনের সেবার পরিধি আরও বাড়ানো উচিত।

জাওয়াদ জাহাঙ্গীর জানালেন, নারীদের নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে যাত্রী কোথায় আছেন, তা পরিবারের কারও সঙ্গে শেয়ার করলে সেই সদস্যও যাতে তা অ্যাপের মাধ্যমে দেখতে পারেন, সে ধরনের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। রুট বাড়ানোর পাশাপাশি গাড়িতে সিসি ক্যামেরার মাধ্যমে সরাসরি মনিটর করার ব্যবস্থা থাকবে।