বাল্যবিবাহ ঠেকান তিনি

বাল্যবিবাহকে না বলছে বিভিন্ন বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।  ছবি: প্রথম আলো
বাল্যবিবাহকে না বলছে বিভিন্ন বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। ছবি: প্রথম আলো

নেত্রকোনা উপজেলায় কোনো বাল্যবিবাহ ঘটছে, এ খবর পেলেই হাজির হন নেত্রকোনার বারহাট্টা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ফরিদা ইয়াসমিন। গত এক বছর সাত মাসে তিনি উপজেলায় ৫১টি বাল্যবিবাহ বন্ধ করেছেন। যাদের বাল্যবিবাহ বন্ধ করা হয়েছে, তারা চারজন ছিল অসচ্ছল পরিবারের। তারা পড়াশোনা বন্ধ করে দিয়েছিল। ফরিদা ইয়াসমিন নিজ খরচে এই চার মেয়ের আবার পড়ার ব্যবস্থা করে দিয়েছেন। এই সব কর্মকাণ্ডের জন্য উপজেলায় ফরিদা ইয়াসমিনের নাম প্রায় সবার কাছেই পরিচিত।

যেসব পরিবার মেয়ের বাল্যবিবাহ দিতে চায়, তাদের কাছে অবশ্য ফরিদা ইয়াসমিনের নাম মুখে আনা খুব একটা সুখকর হয় না। কেননা, এই ইউএনও রাতদিন, রোদ-বৃষ্টি কিছুই মানেন না। বাল্যবিবাহের খবর শুনলেই সেখানে হাজির হন। তারপর সেই বিয়ে বন্ধ করেই থেমে থাকেন না, ওই মেয়েকে আবার নতুনভাবে ঘুরে দাঁড়াতে উৎসাহ দেন।

সম্প্রতি প্রথম আলোর সঙ্গে আলাপচারিতায় ফরিদা ইয়াসমিন জানান, ২০১৭ সালের মে মাসে বারহাট্টায় ইউএনও হিসেবে কাজ শুরু করেন। কাজ শুরুর সপ্তাহখানেক পরই সদর ইউনিয়নের একটি মাদ্রাসাপড়ুয়া মেয়ের বিয়ের অভিযোগ আসে। ফরিদা ইয়াসমিন প্রথমে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও পুলিশ পাঠিয়ে বিয়েটি বন্ধ করেন। কিন্তু পরে রাতের বেলায় ওই মেয়েকে অন্য জায়গায় নিয়ে বিয়ে দিয়ে দেয় পরিবার। এরপর থেকে খবর পেলে তিনি নিজেই হাজির হন বাল্যবিবাহ বন্ধ করার জন্য।

বাল্যবিবাহ বন্ধ হওয়ার পর বর্তমানে নবম শ্রেণিতে পড়ুয়া নাম প্রকাশ না করার শর্তে সিংধা ইউনিয়নের এক মেয়ে প্রথম আলোকে বলে, ‘ইউএনও ম্যাডাম আমার জীবন বদলে দিয়েছেন। আমাকে সহযোগিতা করছেন। আমি এখন নতুন করে স্বপ্ন দেখা শুরু করেছি।’

 ফরিদা বলেন, শুধু আইন দিয়ে বাল্যবিবাহ বন্ধ করা কঠিন। মানুষকে সচেতন করতে স্থানীয় বেসরকারি বিভিন্ন সংস্থার সহযোগিতা নিয়ে মাদ্রাসাসহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের সঙ্গে মতবিনিময়সহ নানা কর্মসূচি হাতে নেওয়া হয়েছে।

ফরিদা ইয়াসমিন
ফরিদা ইয়াসমিন

ইউএনও ফরিদা ইয়াসমিনের জন্ম জামালপুরে। বাবা ফজলুল হক চৌধুরী ও মা খালেদা বেগম। তিনি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন। স্বামী জামিল আহম্মেদ ময়মনসিংহ সরকারি কলেজের সহকারী অধ্যাপক। আরিজ নামে তিন বছরের ছেলেসন্তান নিয়েই এই দম্পতির সংসার।

উপজেলার সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে ফরিদা ইয়াসমিনের বাল্যবিবাহ বন্ধ করার দাবির সত্যতা মেলে। শুধু প্রথম আলোতেই তাঁর বাল্যবিবাহ বন্ধ-সংক্রান্ত ২০টির বেশি সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে।

 রায়পুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আতিকুর রহমান বলেন, ‘গত দেড় বছরে তাঁর ইউনিয়নে ১১টির মতো বাল্যবিবাহ বন্ধ করেছেন ইউএনও ফরিদা। রাত প্রায় ১২টার সময় একটি বাল্যবিবাহ বন্ধ করার সময় আমি নিজেই ইউএনওর সঙ্গে ছিলাম। বর্ষাকাল বৃষ্টি র মধ্যে কাদামাটির পথ হেঁটে মেয়েটির বাড়িতে পৌঁছাতে হয়েছিল। মেয়েটি এখন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে পড়ছে।’