সফল পেশাজীবীর মুখোমুখি তরুণেরা

মিট দ্য এক্সপার্টের আয়োজনে গ্রামীণফোনের ডেপুটি সিইও এবং সিএমও ইয়াসির আজমান ও সঞ্চালক আরিফ আর হোসেনের সঙ্গে তরুণেরা। ছবি: প্রথম আলো
মিট দ্য এক্সপার্টের আয়োজনে গ্রামীণফোনের ডেপুটি সিইও এবং সিএমও ইয়াসির আজমান ও সঞ্চালক আরিফ আর হোসেনের সঙ্গে তরুণেরা। ছবি: প্রথম আলো

বিএসআরএম-প্রথম আলো ‘মিট দ্য এক্সপার্ট’-এর দ্বিতীয় পর্বে বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলার বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অংশগ্রহণ করেছিলেন একঝাঁক তরুণ। করপোরেট জগতের এই সময়ের একজন সফল ব্যক্তিত্বের সঙ্গে নাশতার টেবিলে বসে কথা বলা ও ক্যারিয়ার নিয়ে পরামর্শ গ্রহণের সুযোগও ছিল তাঁদের সামনে। গত ২৭ এপ্রিল গুলশানের শেফ’স টেবিলে আয়োজিত এই অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে ছিলেন গ্রামীণফোনের ডেপুটি সিইও এবং সিএমও ইয়াসির আজমান।

বিশ্ববিদ্যালয়পড়ুয়া তরুণদের মনে থাকে অসংখ্য প্রশ্ন, স্বপ্ন, সামনে এগোনোর প্রত্যয় ও নানা কৌতূহল। ইয়াসির আজমানকে পেয়ে তাই সেদিন নাশতার টেবিলে তরুণেরা খুলেছিলেন প্রশ্নের ঝাঁপি। নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এসেছিলেন জোয়ারিয়া ইসরাত। তিনি জানতে চেয়েছিলেন, প্রথম বর্ষের ছাত্রী হয়েও কি পড়াশোনার পাশাপাশি কোনো ভালো কোম্পানিতে ইন্টার্নশিপের সুযোগ পাওয়া সম্ভব, যেখানে তাঁর কোনো পূর্ব অভিজ্ঞতাই নেই? ইয়াসির আজমানের মতে, বাংলাদেশে এখনো হয়তো প্রথম বর্ষে পড়ুয়া ছাত্রদের নিয়ে ইন্টার্নশিপ সুবিধা কোনো কোম্পানি শুরু করেনি। কিন্তু নিজের ইচ্ছা দৃঢ় হলে এবং নিজের পড়াশোনার ক্ষেত্রেই কাজ করতে চাইলে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান সেটাকে ভালোভাবে গ্রহণ করবে এবং সুযোগ দেবে।

তড়িৎ প্রকৌশলে প্রথম বর্ষে পড়ুয়া তৌফিকের প্রশ্ন ছিল, বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশে তো বেশি সুযোগ-সুবিধা নেই। সে ক্ষেত্রে তরুণদের বিদেশে গিয়ে আরও ভালো পেশাজীবন গড়ার মনোভাব কাজ করে, এমন অবস্থায় দেশে থেকে দেশের জন্য কীভাবে কাজ করা সম্ভব? তৌফিকের প্রশ্নের উত্তরে ইয়াসির আজমান বললেন, ‘প্রথমেই মন থেকে এই নেতিবাচক ভাবনা দূর করতে হবে। ইতিবাচক চিন্তা রাখতে হবে। আমাদের যেসব সুযোগ-সুবিধা আছে, সেগুলোকে কাজে লাগাতে হবে। বড় স্বপ্ন দেখতে হবে, ছোট ছোট লক্ষ্য অর্জনের মাধ্যমে বড় স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে হবে।’

চট্টগ্রামের ছেলে আরফান পড়ছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় বিভাগে। আরফানের জিজ্ঞাসা ছিল, ব্যবসায় শিক্ষায় পড়াশোনা করে প্রযুক্তি খাতে কীভাবে ক্যারিয়ার গড়া সম্ভব? আরফানের প্রশ্নে ইয়াসির আজমানের বক্তব্য, ব্যবসায় ও প্রযুক্তি এখন ভীষণভাবে একে অন্যের সঙ্গে যুক্ত। ব্যবসায় বা বিক্রয়ে পড়াশোনা বা কাজ করলেও নিজেকে সব সময় আরও উন্নত করার চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে। প্রযুক্তি নিয়ে পড়াশোনা করতে হবে এবং জানতে হবে। সেটা যে কেউ ইচ্ছা করলেই পারবে। কারণ, এটি খুব কঠিন কিছু নয়।

তরুণ কর্মী সায়মা সদ্য পড়াশোনা শেষ করে চাকরিতে ঢুকেছেন। সায়মার প্রশ্ন ছিল, ভবিষ্যতে তিনি কীভাবে ইয়াসির আজমানের মতো একজন সিইও হতে পারবেন? ইয়াসির আজমানের কাছ থেকে সায়মা যে উত্তর পেলেন সেটা এ রকম—‘আমরা সবাই কাজ করি। কিন্তু একজন নেতা বা সিইও তিনি হন, যিনি অন্যদের থেকে একটু বেশি কাজ করেন, একটু বেশি ভাবেন এবং গভীরভাবে চিন্তা করতে পারেন। লিডার হতে হলে সততা, স্বচ্ছতা এবং জানার খুব আগ্রহ থাকতে হবে। স্বপ্ন দেখতে হবে এবং সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য কঠোর পরিশ্রম করতে হবে।’

গার্হস্থ্য অর্থনীতি কলেজ থেকে এসেছিলেন ফারজানা। তাঁর প্রশ্ন ছিল, কর্মক্ষেত্রে মেয়েদের নানান বিপত্তি ও অপ্রীতিকর অবস্থার সম্মুখীন হতে হয়। মেয়েদের নিরাপত্তার ব্যাপারে কোম্পানিগুলোর জন্য পরামর্শ কী? কর্মক্ষেত্রে নারীদের নিরাপত্তা নিয়ে ইয়াসির আজমান জানান, তিনি বাংলাদেশের বিভিন্ন করপোরেট সিইওদের সঙ্গে বসে এ বিষয়ে আলোচনা শুরু করেছেন। তাঁরা সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, তাঁদের সবার প্রতিষ্ঠানে অন্তত একজন করে নারী কর্মীকে প্রশিক্ষণ, পরামর্শ ও সহযোগিতা দিয়ে লিডার হিসেবে গড়ে তুলবেন। কর্মক্ষেত্রে নারী কর্মীদের নিরাপত্তা ও সুন্দর কর্মপরিবেশ দেওয়ার নিশ্চয়তা দেবেন। যদিও এটি সময়সাপেক্ষ, কিন্তু তাঁরা কাজ শুরু করে দিয়েছেন।

প্রশ্ন আসে, আসে উত্তর। নানা পরামর্শ ও আলোচনার মাধ্যমে এগিয়ে চলে মিট দ্য এক্সপার্টের এই পর্ব। একপর্যায়ে বুয়েট থেকে আসা শাইখ জানতে চান, লিডারশিপ বা নেতৃত্বের গুণগুলো কি জন্মগতভাবে পাওয়া যায়, নাকি এটা অর্জন করা যায়? উত্তর এল, জন্মগতভাবে হয়তো নেতৃত্বের গুণাবলি কেউ পেয়ে থাকতে পারেন। কিন্তু আসল কথা হলো, এই গুণগুলো অর্জন করা সম্ভব। প্রতিনিয়ত নিজেকে উন্নত করা, আরও ভালো লিডার বা নেতা হওয়ার চেষ্টা চালিয়ে যেতে হয়।

 আলোচনার একেবারে শেষ দিকে তরুণদের উদ্দেশে ইয়াসির আজমান বলেন, ‘এখনকার তরুণেরা অনেক সুযোগ-সুবিধা পাচ্ছেন। ইন্টারনেটের মাধ্যমে সারা বিশ্বের সঙ্গে তাঁরা সংযুক্ত। এই সুযোগকে কাজে লাগাতে হবে। নিজের ওপর বিশ্বাস রেখে নিজেকে প্রস্তুত করতে হবে, পরিকল্পনা করতে হবে, সততা ও স্বচ্ছতার সঙ্গে কঠোর পরিশ্রম করে স্বপ্ন বাস্তবায়নের দিকে এগিয়ে যেতে হবে। তাহলেই নেতা হওয়া সম্ভব এবং সফল হওয়া সম্ভব। ’

বিএসআরএম ও প্রথম আলোর এই উদ্যোগকে ধন্যবাদ জানান আজমান। তরুণদের সঙ্গে বসে তাঁদের ভালোভাবে জানতে পারা একটা সৌভাগ্যের বিষয়, এমনটাই মন্তব্য ছিল তাঁর। মিট দ্য এক্সপার্ট সম্পর্কে আরও জানতে ঢুঁ মারুন এই ওয়েব ঠিকানায়: prothomalo.com/meet-the-expert