আর কত অপেক্ষা?

জামেনা খাতুন
জামেনা খাতুন

৬৫ বছর বয়সী জামেনা খাতুনকে তাঁর মৃত স্বামী নছর উদ্দিনের অবসর ভাতা পেতে ৩৩ বছর ধরে অপেক্ষা করতে হচ্ছে। অপেক্ষায় থেকে থেকে তিনি নিজেই বার্ধক্যজনিত রোগে–শোকে শয্যাশায়ী। আর কত অপেক্ষা করতে হবে, জানেন না এ নারী।

ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার ভালুকবের গ্রামের জামেনা খাতুনকে নিয়ে গত বছরের ১ অক্টোবর প্রথম আলোয় ‘স্বামীর অবসর ভাতা বন্ধ ৩৩ বছর’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন ছাপা হয়। জামেনা খাতুন প্রথম আলোর প্রতিবেদনের কপি যুক্ত করে অবসর ভাতা (পেনশন) পেতে উপজেলা হিসাবরক্ষণ কার্যালয়ে আবার আবেদন করেন।

ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলা হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা এস এম এমরান সোহেল বললেন, জামেনার আবেদনের বিষয়ে নির্দেশনা চেয়ে গত ৮ জানুয়ারি ঢাকায় বিভাগীয় হিসাব নিয়ন্ত্রকের কাছে চিঠি পাঠানো হয়েছে। এরপর ৭ মে বিভাগীয় হিসাব নিয়ন্ত্রকের কার্যালয় থেকে জামেনার বিষয়টি পুনরায় তদন্ত করে পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন দিতে বলা হয়। তিনি আরও বলেন, কারও প্রাপ্য অর্থ পাঁচ বছর আটকে থাকলে তা ছাড় করাতে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অনুমতি লাগে। জামেনা খাতুনের বেলায় তা গড়িয়েছে ৩৩ বছর। তদন্ত প্রতিবেদনের ওপর নির্ভর করছে জামেনার ভাতা পাওয়া না–পাওয়ার বিষয়টি।

জামেনার স্বামী নছর উদ্দিন ময়মনসিংহ জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে অফিস সহায়ক (এমএলএসএস) পদে চাকরিরত অবস্থায় ১৯৮৪ সালে মারা যান। পরে জেলা হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে জামেনাকে পারিবারিক পেনশন ও অন্যান্য আনুতোষিক বাবদ ৮ হাজার ৩৫৫ টাকা দেওয়া হয়। পরে জামেনার পিপিও বইটি (পেনশন পাস বই) ঈশ্বরগঞ্জ হিসাবরক্ষণ কার্যালয়ে (ইউএও) স্থানান্তর করা হলে সেখানকার কিছু অসাধু কর্মকর্তা জামেনাকে পুনরায় সমপরিমাণ অর্থ দেন। এক খাতের অর্থ দুবার নেওয়ায় জামেনার পেনশন বইটি জব্দ করা হয়। দুর্নীতি দমন ব্যুরোতে তাঁর বিরুদ্ধে মামলা হয়। অন্যদিকে, গ্রামের একটি কুচক্রী মহল জামেনা দ্বিতীয় বিয়ে করেছেন বলে তথ্য দিয়ে ঈশ্বরগঞ্জ জ্যেষ্ঠ সহকারী জজ আদালতে মামলা করেন। পরে সে তথ্য মিথ্যা প্রমাণিত হলে মামলাটি খারিজ হয়ে যায়। বর্তমানে জামেনা গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় পালিত পুত্র আবদুস সাত্তরের বাড়িতে থাকছেন।