ক্যাপ্টেন কাহিনি

>বলা হয় আগামী দিনগুলোতে সফল হতে হলে তরুণদের যে গুণগুলো রপ্ত করতে হবে, তার মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশই হলো ‘লিডারশিপ স্কিল’ বা নেতৃত্বের দক্ষতা। কারো এটা সহজাত, কেউবা রপ্ত করে চর্চার মাধ্যমে। বিশ্বকাপ ক্রিকেটের এই মৌসুমে আমাদের সামনেই কিন্তু আছে নেতৃত্বের অনবদ্য কিছু উদাহরণ। ১০ দেশের ১০ জন অধিনায়কের দিকে তাকালেই পাওয়া যায় অনেক অনুপ্রেরণার গল্প।
মাশরাফি বিন মুর্তজা
মাশরাফি বিন মুর্তজা

মাশরাফি বিন মুর্তজা বাংলাদেশ
আমাদের ম্যাশ

মাশরাফি বিন মুর্তজা বাংলাদেশের সফলতম অধিনায়ক। অধিনায়ক হিসেবে তাঁর সামনে প্রথম চ্যালেঞ্জ ছিল দলের খেলোয়াড়দের মধ্যে ‘আমরা জিততে পারি’, এই বিশ্বাস গড়ে তোলা। এখন যখন বাংলাদেশ দলের ক্রিকেটাররা মাঠে নামেন, তখন তাঁদের শরীরী ভাষাই বলে দেয়, মাশরাফি বিন মুর্তজা তাঁর প্রথম চ্যালেঞ্জে সফল হয়েছেন। দলের খেলোয়াড়দের কাছে তিনি বড় ভাই, বন্ধুদের কাছে ‘পাগলা’, কেউ কেউ ভালোবেসে ‘বস’ বলেও ডাকেন। ভক্তরা ভালোবেসে ফেসবুকে লেখেন ‘আমাদের ম্যাশ’। দুই হাঁটুতে প্রায় সাতটি বড় অস্ত্রোপচারের পরও যিনি বোলিংয়ে আগুন ঝরিয়ে যাচ্ছেন, তাঁকে ‘পাগলা’ বলার কারণ ব্যাখ্যা করার প্রয়োজন পড়ে না। মাশরাফি সব সময় বলেন, ‘আমার মন যা বলে, আমি তা-ই করি। জীবন নিয়ে খুব বেশি ভাবি না।’ নেতৃত্বের গুণাবলি কীভাবে তাঁর মধ্যে গড়ে উঠল, মাশরাফি খুব স্পষ্ট করে এই প্রশ্নের উত্তর দিতে পারেননি। তবে মানুষকে ভালোবাসার শিক্ষা তিনি পরিবার থেকেই পেয়েছেন। মানুষকে কাছে টেনে নেওয়ার একটা দারুণ গুণ আছে বলেই সম্ভবত দলের খেলোয়াড়েরা তাঁর ওপর ভরসা করতে পারেন। হাসি-ঠাট্টায় সব সময় যেমন দলকে উজ্জীবিত রাখেন, তেমনি মাঠে আক্রমণাত্মক হয়ে উঠতেও নেতৃত্ব দেন সামনে থেকে।

এউইন মরগান
এউইন মরগান

এউইন মরগান ইংল্যান্ড
সাদার স্বপ্ন

এউইন মরগান যখন ক্রিকেট ব্যাট হাতে নেন, তখন ব্যাটের দৈর্ঘ্য আর তাঁর উচ্চতা ছিল সমান। চার বছর বয়স থেকে ভাইবোনদের সঙ্গে বাড়ির পাশের মাঠে খেলতেন তিনি। আয়ারল্যান্ডের জাতীয় দলের পোশাক পরে তাঁর প্রথম আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলার সুযোগ হয় ২০০৬ সালে, স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে। ভাবছেন ইংল্যান্ডের অধিনায়ক কেন আয়ারল্যান্ডের হয়ে খেলতে নামবেন! মরগানের শুরুটা কিন্তু আয়ারল্যান্ডেই হয়েছিল। বাবা আইরিশ, আর মা ব্রিটিশ। মরগান বড় হয়েছেন আয়ারল্যান্ডের ডাবলিন শহরে, কিন্তু ব্রিটিশ পাসপোর্টও তাঁর ছিল। আয়ারল্যান্ডের জাতীয় দলের হয়ে খেলার সুযোগ পেয়েও মন ভরছিল না তাঁর। কারণ আইরিশ ক্রিকেট তখনো একেবারে নবিশ পর্যায়ের। আর মরগান তখন টেস্ট খেলার স্বপ্নে বিভোর। ইংল্যান্ডের জাতীয় দলে খেলার স্বপ্ন নিয়ে যখন আয়ারল্যান্ড ছাড়েন, তখন অনেকে হেসেছিল। বলেছিল, মরগান বড্ড উচ্চাভিলাষী। সেই মরগানই কিন্তু ইংল্যান্ড দলের নেতৃত্ব পেয়েছেন। ২০১০ সালে তাঁর টেস্ট খেলার স্বপ্ন পূরণ হয়। লর্ডসের মাঠে প্রথম সাদা পোশাকে খেলতে নামেন তিনি। মরগান বলেন, ‘খেলার সুযোগ পাওয়ার চেয়েও সেদিন বড় পাওয়া ছিল গ্যালারিতে মা-বাবার উপস্থিতি। এই ত্যাগ আর স্বপ্নযাত্রায় তাঁরাই তো আমার সারথি ছিলেন।’

বিরাট কোহলি
বিরাট কোহলি

বিরাট কোহলি ভারত
চোখে-মুখে লড়াই

প্রতিটি ম্যাচেই যেন জয়ের তীব্র ক্ষুধা নিয়ে মাঠে নামেন বিরাট কোহলি। তাঁর শরীরী ভাষাই বলে দেয়, খেলায় একচুল ছাড় দিতে রাজি নন তিনি। ২০০৬ জীবনের একটি ঘটনা ক্রিকেটের প্রতি বিরাট কোহলির দৃষ্টিভঙ্গি বদলে দিয়েছিল। ডিসেম্বরের ১৮ তারিখ, দীর্ঘদিন অসুস্থতার পর হঠাৎ করেই মারা যান বিরাটের বাবা প্রেম কোহলি। রঞ্জি ট্রফিতে তখন দিল্লির হয়ে খেলছিলেন বিরাট। দল তখন পরাজয়ের দ্বারপ্রান্তে। বাবার মৃত্যুশোককে শক্তি বানিয়ে পরদিন মাঠে নেমেছিলেন ঠিকই, খেলেছিলেন ৯০ রানের একটা দুর্দান্ত ইনিংস। বিরাট কোহলি বলেন, ‘যে রাতে বাবার মারা গেলেন, সেই রাতটা আমার এখনো মনে পড়ে। সেটা ছিল আমার জীবনের সবচেয়ে কঠিন সময়। কোচকে ফোন করে বললাম, আমি খেলতে চাই। কারণ আমার কাছে খেলা অসমাপ্ত রাখাটা অন্যায়। এই মুহূর্তটাই মানুষ হিসেবে আমাকে বদলে দিয়েছিল। আমার জীবনে এই খেলার গুরুত্ব অনেক, অনেক বেশি।’

অ্যারন ফিঞ্চ
অ্যারন ফিঞ্চ

অ্যারন ফিঞ্চ অস্ট্রেলিয়া
মাঠে মারকুটে, বাইরে শান্ত

‘তুমি কয়টা সেঞ্চুরি করেছ, সে কথা তোমার এপিটাফে লেখা থাকবে না।’ এই একটি কথাই নাকি ক্রিকেটার হিসেবে অ্যারন ফিঞ্চের জীবন-দর্শন বদলে দিয়েছিল। কথাটা বলেছিলেন নিউজিল্যান্ডের বর্তমান অধিনায়ক কেন উইলিয়ামসন। ২০১৪ সালে অ্যারন আর উইলিয়ামসন তখন ইংল্যান্ডের ক্লাব ক্রিকেটে ইয়র্কশায়ার দলের হয়ে খেলতেন। অ্যারন ফিঞ্চ বলেন, ‘মনে আছে তখন আমার ১৯-২০ বছর বয়স। ক্লাব ক্রিকেটে সময়টা ভালো যাচ্ছিল না। ক্লাবের সঙ্গে চুক্তি শেষ হওয়ার কিছুদিন আগে থেকে ভাবতে শুরু করেছিলাম, আমার কি একটা চাকরি খোঁজা উচিত?’ সেই দ্বিধান্বিত তরুণ ক্রিকেটারই এখন অস্ট্রেলিয়ার জাতীয় ক্রিকেট দলের অধিনায়কের ‘চাকরি’ করছেন, নেতৃত্ব দিচ্ছেন বিশ্বকাপে। অ্যারন ফিঞ্চ বিশ্বাস করেন, একটি উপলব্ধি তাঁকে মানুষ হিসেবে বদলে দিয়েছে, ‘মানুষ হিসেবে আমি কেমন, ক্রিকেট মাঠে আমার পারফরম্যান্স সেটা ঠিক করে দেবে না।’

কেন উইলিয়ামসন
কেন উইলিয়ামসন

কেন উইলিয়ামসন নিউজিল্যান্ড
সব্যসাচী অধিনায়ক

কেন উইলিয়ামসন ডান হাতে ব্যাটিং ও বোলিং করেন, কিন্তু লেখেন বাঁ হাতে। শচীন টেন্ডুলকার ছিলেন তাঁর ছেলেবেলার নায়ক। টেন্ডুলকারের যখন টেস্ট অভিষেক হয়, তার এক বছর পর কেন উইলিয়ামসনের জন্ম হলেও ছেলেবেলার নায়কের বিপক্ষে খেলার সৌভাগ্য তাঁর হয়েছে। ক্রীড়াপরিবারেই বড় হয়েছেন তিনি। ভাইবোনেরা প্রত্যেকেই কোনো না কোনো খেলার সঙ্গে যুক্ত। রাগবি-বাস্কেটবলের সঙ্গে সখ্য থাকলেও কিউই অধিনায়ক বেছে নিয়েছিলেন ক্রিকেটকে। ২০১৪ সালের ডিসেম্বর মাসে পাকিস্তানের পেশোয়ারে একটি স্কুলে হামলা চালিয়েছিল তালেবান জঙ্গিরা, নির্বিচার গুলি করে তারা হত্যা করেছিল ১৩২ জন শিশুসহ ১৪৯ জনকে। সে সময় সংযুক্ত আরব আমিরাতে পাকিস্তানের সঙ্গে ওয়ানডে, টি-টোয়েন্টি ও টেস্ট সিরিজ খেলছিল নিউজিল্যান্ড। স্কুলে হামলার ঘটনাটি খুব নাড়া দিয়েছিল কেন উইলিয়ামসনকে। সে সময় ৫টি ওয়ানডের পুরো ম্যাচ ফি তিনি দিয়ে দিয়েছিলেন হামলায় ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তার জন্য।

সরফরাজ আহমেদ
সরফরাজ আহমেদ

সরফরাজ আহমেদ পাকিস্তান
প্রকৌশলী ক্রিকেটার

সরফরাজ আহমেদ পাকিস্তানের ক্রিকেটে অন্যতম সফল অধিনায়ক। শৈশব থেকেই ক্রিকেটে পূর্ণ মনোযোগ দিয়েছেন, কিন্তু পড়ালেখা ছাড়েননি। পাকিস্তানের দাউদ ইউনিভার্সিটি অব ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনোলজি থেকে তড়িৎ প্রকৌশলে স্নাতক করেছেন তিনি। উইকেটকিপার-ব্যাটসম্যান হিসেবে সরফরাজ যেমন জাতীয় দলে জায়গা পাওয়ার ক্ষেত্রে কিছুটা সুবিধা পেয়েছেন, একই কারণে অসুবিধায়ও পড়তে হয়েছে তাঁকে। একটা সময় পর্যন্ত পাকিস্তানের নিয়মিত উইকেটকিপার কামরান আকমল ইনজুরিতে পড়লেই কেবল সরফরাজের দিকে নজর দিতেন নির্বাচকেরা। জাতীয় দলে নিয়মিত হয়ে যাওয়ার পরও বাজে পারফরম্যান্সের কারণে বাদ পড়েছেন। ঘরোয়া ক্রিকেটে ভালো খেলে আবার ফিরেছেন দলে। অধিনায়ক হিসেবে সরফরাজ আহমেদ নজর কাড়েন পাকিস্তান সুপার লিগে (পিএসএল)। নানা কারণে বিতর্কিত হয়েছেন, একাধিকবার বাদ পড়েছেন দল থেকে। কিন্তু তিনি হাল ছাড়েননি। ভাগ্য সাহসীদের সঙ্গে থাকে—এ কথা সব সময় বিশ্বাস করেন সরফরাজ।

ফাফ ডু প্লেসি
ফাফ ডু প্লেসি

ফাফ ডু প্লেসি সাউথ আফ্রিকা
রান্না বা রাগবি নয়, ক্রিকেট

ক্রিকেটার না হলে ডু প্লেসি নাকি রন্ধনশিল্পী হতেন। সে ক্ষেত্রে ব্যাট হাতে মাঠে নয়, ডু প্লেসিকে হয়তো সসপ্যান হাতে হেঁশেলে পাওয়া যেত। দক্ষিণ আফ্রিকার অধিনায়ক অকপটে বলেন, রসনাশিল্পকেও তিনি ক্রিকেটের মতোই ভালোবাসেন। ছোটবেলায় অবশ্য রাগবি খেলোয়াড় হওয়ার কথাও ভেবেছিলেন। কিন্তু রাগবি ছেড়েছেন ব্যথা পাওয়ার ভয়ে। ১৬ বছর বয়সে যে ফাফ ডু প্লেসি হাত ভাঙলেন, সেটা অবশ্য রাগবি খেলার জন্য নয়। ক্রিকেট খেলতে গিয়েই হাত ভেঙেছিলেন তিনি। দুই মাস অনুশীলনে যেতে পারেননি। হাতটা ব্যাট ধরার উপযোগী হতেই আবার ছুটেছেন মাঠে। যদিও তাঁর বাবা ছেলেকে রাগবি খেলোয়াড় বানাতে চেয়েছিলেন। ইউনিভার্সিটি অব প্রিটোরিয়া থেকে স্নাতক করেছেন তিনি। দক্ষিণ আফ্রিকার বোলার ক্রিস মরিস একবার ইএসপিএন-ক্রিকইনফোকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, ‘একটা টেস্ট বাঁচানোর জন্য টানা তিন দিন ব্যাটিং করে যেতেও তাঁর আপত্তি নেই। কেউ সামনে থেকে নেতৃত্ব দিলে অন্যরাও তাঁকে অনুসরণ করার সাহস পায়।’

দিমুথ করুনারত্নে
দিমুথ করুনারত্নে

দিমুথ করুনারত্নে শ্রীলঙ্কা
প্রতিযোগিতাই প্রেরণা

খুব কঠিন একটা সময়ে শ্রীলঙ্কার অধিনায়কত্বের দায়িত্ব পেয়েছেন দিমুথ করুনারত্নে। মাঠে শ্রীলঙ্কার সময় খুব একটা ভালো যাচ্ছে না। দলের মধ্যে নানা বিভেদ। অধিনায়ক হিসেবে দায়িত্ব নিয়েই সবচেয়ে কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছেন দিমুথ—খেলোয়াড়দের একটা ‘দল’ হিসেবে গড়ে তোলা। একজন ‘নেতা’ হিসেবে কী কৌশল অবলম্বন করেছেন তিনি? এক সাক্ষাৎকারে করুনারত্নে বলেন, ‘দক্ষিণ আফ্রিকা সিরিজের সময়ই আমরা খেলোয়াড়দের মধ্যে দলীয় মনোভাব গড়ে তোলার চেষ্টা করতে শুরু করেছি। হোয়াটসঅ্যাপে একটা গ্রুপ খুলে আমরা প্রথমে দলের সব খেলোয়াড়কে একসঙ্গে নৈশভোজে আমন্ত্রণ জানিয়েছি। প্রথম দিন হাজির হয়েছিল ৫ জন। পরদিন ৭ জন। কিছুদিন পর দেখা গেল, দলের স্টাফরাসহ সবাই হাজির।’ অধিনায়কের এই কৌশল কতটা কাজে লাগল, সেটা বিশ্বকাপ চলাকালেই টের পাওয়া যাবে। স্কুলজীবন থেকেই তিনি দলের সেরা খেলোয়াড়টিকে ছাড়িয়ে যেতে চেষ্টা করতেন। এই প্রতিযোগিতাই তাঁকে এগিয়ে রাখে বলে তিনি বিশ্বাস করেন।

জেসন হোল্ডার
জেসন হোল্ডার

জেসন হোল্ডার ওয়েস্ট ইন্ডিজ
আনন্দের জন্য খেলা

ডোয়াইন ব্রাভোকে যখন অধিনায়কত্বের জায়গা থেকে সরিয়ে দেওয়া হলো, ওয়ানডে ক্রিকেটের জন্য একজন অধিনায়ক খুঁজছিলেন ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেট দলের নির্বাচকেরা। সে সময় নির্বাচক দলের চেয়ারম্যান ছিলেন কিংবদন্তি ক্রিকেটার ক্লাইভ লয়েড। তিনিই ২৩ বছর বয়সী জেসন হোল্ডারকে অধিনায়ক করার প্রস্তাব দেন। সেই থেকে সবচেয়ে কম বয়সে ওয়েস্ট ইন্ডিজের জাতীয় দলকে নেতৃত্ব দেওয়ার রেকর্ডটি জেসনের। এ বছরের জানুয়ারিতে, ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ওয়েস্ট ইন্ডিজের কেনসিংটন ওভাল মাঠে ২০২ রানের একটি অনবদ্য ইনিংস খেলেছেন তিনি। নিজের দেশের মাঠে, গ্যালারিতে বসা পরিবারের সদস্যদের সামনে এমন একটা কিছু করার স্বপ্ন তিনি দেখেছেন বহুদিন ধরে। ২০২ রানে সেদিন অপরাজিত ছিলেন জেসন। সমালোচকদের জবাব দেওয়ার জন্য তিনি খেলেননি, খেলাটা উপভোগ করাই ছিল তাঁর একমাত্র উদ্দেশ্য। মাঠ ছেড়ে বেরিয়ে যাওয়ার সময় ব্যাটটা উঁচু করে ধরেছিলেন অনেকটা ট্রফির মতো করে। জেসন বলেন, ‘ট্রফিই তো। এই ইনিংস আমি অর্জন করেছি।’

গুলবদিন নাইব
গুলবদিন নাইব

গুলবদিন নাইব আফগানিস্তান
অধিনায়কত্বে নতুন

বিশ্বকাপের আগে গুলবদিন নাইবকে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অধিনায়ক হিসেবে দেখা যায়নি। সেই হিসেবে তিনি এবারের বিশ্বকাপের সবচেয়ে অনভিজ্ঞ অধিনায়ক। ক্রিকেট মাঠে অধিনায়কত্বের লড়াইয়ে নবীন হতে পারেন, জীবনের লড়াইয়ে সম্ভবত এই গুলবদিনই অন্য অধিনায়কদের চেয়ে সবচেয়ে অভিজ্ঞ। ছোটবেলা থেকে আশপাশের সবাইকে ক্রিকেট খেলতে দেখেছেন। পেশোয়ারের একটি শরণার্থী শিবিরে থাকতেন গুলবদিন আর তাঁর পরিবার। একসময় বডিবিল্ডার হওয়ার ইচ্ছে ছিল তাঁর, আর্নল্ড শোয়ার্জেনেগার ছিল তাঁর আদর্শ। তবে গুলবদিন বুঝতে পেরেছিলেন, ক্রিকেটই হতে পারে তাঁর জন্য শরণার্থী শিবিরের জীবন থেকে বেরোনোর টিকিট। তিনি বলেন, ‘খেলা শুরু করার পর বুঝতে পারলাম, মানুষ আমাদের ভয় পায়। অন্য দলের ক্রিকেটাররাও মুখ ফিরিয়ে নেয়, বলে ওরা সন্ত্রাসী জাতি। কিন্তু কাছাকাছি এলে তাদের ধারণা বদলে যায়।’ এত সংগ্রামী জীবন হওয়া সত্ত্বেও দলে ‘জোকার’ হিসেবে পরিচিতি আছে গুলবদিন নাইবের।

গ্রন্থনা: মো. সাইফুল্লাহ, সূত্র: ইএসপিএনক্রিকইনফো, ক্রিকেটটাইমস, টাইমস অব ইন্ডিয়া