ভয়ংকর অভিজ্ঞতা নিয়ে বাড়ি ফেরা

বাল্যবিবাহ । প্রতীকী ছবি
বাল্যবিবাহ । প্রতীকী ছবি

বাল্যবিবাহের শিকার দুই মাদ্রাসাছাত্রী ভয়ংকর অভিজ্ঞতা নিয়ে স্বামীর বাড়ি থেকে বাবার বাড়ি ফিরেছে। এদের একজন ষষ্ঠ এবং অন্যজন অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী। ময়মনসিংহের নান্দাইল উপজেলার এই দুই শিক্ষার্থী তাদের ভয়ংকর অভিজ্ঞতা ভুলতে পারছে না। তালাক না হলেও দুজনই জানিয়ে দিয়েছে, তারা আর স্বামীর বাড়ি ফিরবে না।

ষষ্ঠ শ্রেণির শিক্ষার্থীর বাড়ি নান্দাইল ইউনিয়নের একটি গ্রামে। তার বিয়ে হয় ১৬ জুন, পাশের ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার আঠারোবাড়ি ইউনিয়নের একটি গ্রামে। সিংরইল ইউনিয়নের অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থীর বিয়ে হয়েছিল গত বছরের ৩০ ডিসেম্বর, পাশের বাড়ির এক তরুণের সঙ্গে।

নান্দাইল উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ষষ্ঠ শ্রেণির শিক্ষার্থীর বিয়ের খবর পেয়ে ইউএনও মোসাদ্দেক মেহদী ইমাম নান্দাইল ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সচিবকে শিক্ষার্থীর বাড়িতে পাঠালে শিক্ষার্থীর বাবা বিয়ের বয়স না হওয়া পর্যন্ত মেয়ের বিয়ে দেবেন না বলে লিখিত অঙ্গীকারনামাও দিয়েছিলেন। তবে বয়স বেশি দেখানো একটি হলফনামার বদৌলতে মেয়েটিকে গভীর রাতে শ্বশুরবাড়িতে পাঠিয়ে দেয় পরিবার।

এই শিক্ষার্থীর দাদি জানালেন, বিয়ের রাতের (বাসর) ভয়ংকর অভিজ্ঞতায় অসুস্থ হয়ে পড়ে তাঁর নাতনি। এ খবরে পরদিন লোক পাঠিয়ে মেয়েকে বাবার বাড়িতে ফিরিয়ে আনা হয়। পরে চিকিৎসার পর সে কিছুটা সুস্থ হয়। পরে সে মাদ্রাসায় যাওয়া শুরু করে। স্বাভাবিক জীবনে ফেরার চেষ্টা করছে সে।

অন্যদিকে অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী সম্প্রতি নিজেই নিজের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করে কান্নায় ভেঙে পড়ে। সেও স্বামীর সঙ্গে যৌন আচরণে অভ্যস্ত হতে পারেনি। সে স্বামীর বাড়ি থেকে পালিয়ে প্রথমে মামার বাড়ি, পরে নানির বাড়িতে চলে যায়। বর্তমানে সে সেখান থেকেই মাদ্রাসায় যাচ্ছে।

এই শিক্ষার্থী জানাল, তার বাবা একাধিক বিয়ে করেছেন। তার মা একটি পোশাক কারখানায় চাকরি করেন। সে মামার বাড়িতে থেকেই পড়াশোনা করত। হঠাৎ করেই তার বাবা বিয়ে ঠিক করেন। সে কান্নাকাটি করে। মাকেও জানায়। মা-ও চাননি মেয়ের বিয়ে দিতে। কিন্তু বাবা তালাকের হুমকি দিলে মা বিপাকে পড়েন। বাবা চালাকি করে বলেছিলেন, বিয়ে নয়, শুধু বিয়ের আলাপ সেরে রাখা হবে।

এই শিক্ষার্থীর নানি জানালেন, নাতনির বাবা গত ৩০ ডিসেম্বর কৌশলে মেয়েকে বাড়িতে আটকে ফেলেন। এলাকার কয়েকজনের সহায়তায় মসজিদের এক ইমামকে ডেকে বিয়ে পড়ানো হয়। বিয়ের পর নাতনিকে কিছু খাওয়ানো হলে সে কিছুক্ষণের মধ্যে ঘুমিয়ে পড়ে। পরদিন ঘুম ভাঙলে নাতনি নিজেকে স্বামীর বিছানায় দেখতে পায়। কিছুদিন পরই নাতনি পালিয়ে চলে আসে।

 নান্দাইল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোসাদ্দেক মেহদী ইমাম মুঠোফোনে বলেন, বাল্যবিবাহের খবরে প্রশাসন থেকে কর্মকর্তাদের পাঠিয়ে বিয়ে বন্ধ করা হচ্ছে। পরে দেখা যায়, অন্য জায়গায় নিয়ে বিয়ে দিয়ে দিচ্ছে।

নোটারি পাবলিকের হলফনামার মাধ্যমে ইচ্ছামতো বয়স বাড়িয়ে বিয়ে দেওয়াকে অবৈধ বলে উল্লেখ করে ইউএনও মোসাদ্দেক মেহদী ইমাম জানালেন, নিকাহ নিবন্ধকদের ডেকে এনে ১৮ বছরের কম বয়সী মেয়েদের বিয়ে নিবন্ধন করতে নিষেধ করা হয়েছে। তবে অনেকেই তা মানছেন না।