অবিন্তার স্বপ্ন বাস্তবায়নে চলছে ফাউন্ডেশন

অবিন্তা কবির ফাউন্ডেশন স্কুলে পড়ছে শিশুরা। সম্প্রতি রাজধানীর পূর্ব ভাটারায়।  ছবি: সংগৃহীত
অবিন্তা কবির ফাউন্ডেশন স্কুলে পড়ছে শিশুরা। সম্প্রতি রাজধানীর পূর্ব ভাটারায়। ছবি: সংগৃহীত

দরিদ্র পরিবারের ৩২ শিশুকে নিয়ে ২০১৭ সালের জুলাই মাসে যাত্রা শুরু করেছিল অবিন্তা কবির ফাউন্ডেশন স্কুল। দুই বছরের মাথায় স্কুলটির শিক্ষার্থীর সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ৮০। এরা সবাই বিনা বেতনে পড়ার সুযোগ পাচ্ছে। শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার প্রয়োজনীয় সবকিছু স্কুল থেকে সরবরাহ করা হয়।

রাজধানীর পূর্ব ভাটারায় অবিন্তা কবির ফাউন্ডেশনের বিদ্যালয়। শিশুশ্রেণি থেকে তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত দরিদ্র পরিবারের মেয়েশিশুরা এখানে পড়াশোনা করছে। শিক্ষক আছেন ছয়জন। আছে তিন হাজার শিশুতোষ বইয়ের একটি গ্রন্থাগার।

ছোটবেলা থেকেই সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের জন্য কিছু করার স্বপ্ন ছিল অবিন্তা কবিরের। যুক্তরাষ্ট্রের ইমোরি ইউনিভার্সিটির অক্সফোর্ড কলেজের শিক্ষার্থী ছিলেন বাঙালি এই তরুণী। ২০১৬ সালের ১ জুলাই ঢাকায় ফেরার তিন দিন পর গুলশানে হোলি আর্টিজান বেকারিতে জঙ্গি হামলায় নিহত হন অবিন্তা কবির। তাঁর স্মৃতি ধরে রাখতে ২০১৭ সালের ৪ মার্চ প্রতিষ্ঠা করা হয় ‘অবিন্তা কবির ফাউন্ডেশন’। স্কুলটি এই ফাউন্ডেশনের নানা কার্যক্রমের একটি।

ঢাকার শাহজাদপুরে ফাউন্ডেশনের প্রধান কার্যালয়ে বসে গতকাল রোববার কথা হচ্ছিল অবিন্তা কবির ফাউন্ডেশনের চেয়ারপারসন ও তাঁর নানি নীলু রওশন মুর্শেদের সঙ্গে। অবিন্তার নানা স্মৃতি মনে করে বারবার চোখ মুছছিলেন তিনি। তবে বারবার একটা কথাই তিনি বলছিলেন, ‘হারানোর বেদনা তারাই বোঝে, যারা হারায়। ওকে না দেখার কষ্টটাই যেন আমাদের শক্তি দেয়। আর সেই শক্তি দিয়েই যেন আমরা চলতে পারি। ফাউন্ডেশনকে কেন্দ্র করে যা হচ্ছে, তার সবই অবিন্তার ইচ্ছা ও স্বপ্নের প্রতিফলন।’

অবিন্তা কবির ফাউন্ডেশনের কার্যক্রম কেবল শিশুদের পাঠদানেই সীমাবদ্ধ নেই। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইনস্টিটিউটে ২০১৭ সালের মে মাসে চালু হয়েছে ‘অবিন্তা সাইবার সেন্টার অ্যান্ড আর্কাইভ’। ১৩টি কম্পিউটার,২টি প্রিন্টার আর ১টি ফটোকপি মেশিন রয়েছে এখানে। ফাউন্ডেশন থেকে একজন বেতনভুক্ত কর্মী রয়েছেন সার্বক্ষণিক দেখভালের জন্য।

অবিন্তার নামে বৃত্তি চালু করা হয়েছে ইমোরি ইউনিভার্সিটির অক্সফোর্ড কলেজেও। এই বৃত্তির আওতায় অক্সফোর্ড কলেজের টিউশন ফি, বাসস্থানসহ আনুষঙ্গিক খরচ বহন করবে অবিন্তা কবির ফাউন্ডেশন। এই বৃত্তিতে বাংলাদেশি মেধাবী শিক্ষার্থীরাই অগ্রাধিকার পাবেন। যোগ্য প্রার্থী না পাওয়া গেলে তখন সুযোগ দেওয়া হবে দক্ষিণ এশিয়ার কোনো দেশের শিক্ষার্থীকে। ২০১৭ সালে ভারতের হায়দরাবাদের মেধাবী ছাত্র মোহাম্মদ সায়েদ এই বৃত্তি পেয়েছেন। ২০১৮ সালে পেয়েছেন দিশা শিক্ষালাভ নামের আরেক ভারতীয় তরুণী।

অবিন্তা গ্যালারি অব ফাইন আর্টসের কিউরেটর সুলতান এম মাইনুদ্দীন জানান, ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে রাজধানীতে একটি বৃদ্ধাশ্রম নির্মাণের কাজও চলছে। এখানে এতিম শিশুদের থাকার ব্যবস্থাও করা হবে। অবহেলিত বৃদ্ধারা যাতে শিশুদের সঙ্গ পান, এমনটাই ইচ্ছা ছিল অবিন্তার। তিনি জানান, অবিন্তার স্বপ্ন বাস্তবায়নে গাজীপুরের কালিয়াকৈরে ১২ জন গৃহহীন মানুষকে বাড়ি তৈরি করে দেওয়া হয়েছে। অ্যাসিড সারভাইভারস ফাউন্ডেশনকে কিনে দেওয়া হয়েছে বিশেষ পোশাক ‘প্রেশার গার্মেন্টস’। পুড়ে গিয়ে শরীরের চামড়া যাতে ফুলে না যায় অথবা ফুলে গেলেও পরবর্তী সময়ে চামড়া যাতে মসৃণ হয়, সে জন্য এই পোশাক ব্যবহার করা হয়।

ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে এ বছর শুরু হয়েছে ‘অবিন্তা ইয়াং চেঞ্জ লিডার’ নামে একটি কর্মসূচি। কর্মসূচির উদ্যোক্তা জাওয়াদ ইউসুফ বলেন, শিক্ষার্থীদের মেধা বিকাশের কার্যক্রমে যুক্ত ক্যাসপার ফাউন্ডেশনের সঙ্গে যৌথভাবে তাঁরা এই কর্মসূচি পালন করছেন। এর আওতায় ১২টি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে ‘সোশ্যাল বিজনেস কম্পিটিশনের’ মাধ্যমে তাঁরা বিভিন্ন ধরনের ‘আইডিয়া’ সংগ্রহ করবেন। সেখানে থেকে তিনটি আইডিয়াকে চূড়ান্তভাবে পুরস্কৃত করা হবে।

অবিন্তার নানি নীলু রওশন মুর্শেদ বলছিলেন, ‘এগুলো সবই অবিন্তা চেয়েছিল। এ বছরই পড়াশোনা শেষ করে তার দেশে ফিরে আসার কথা ছিল। তার সঙ্গে যারা পড়ত, তাদের অনেকেই ফিরে এসেছে। কিন্তু অবিন্তা আসবে কীভাবে?’