খামে ভরা ৫০০০ ভালোবাসা!

চিঠি পড়ছেন খালেদ মাহমুদ, শহিদুল আলম ও আকরাম খান
চিঠি পড়ছেন খালেদ মাহমুদ, শহিদুল আলম ও আকরাম খান

‘যোগ্য নায়ক মাশরাফির ওই দক্ষ দারুণ হাতে

ইতিহাস হোক, নতুন অধ্যায় লেখা হয়ে যাক তাতে।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র–শিক্ষক কেন্দ্রের (টিএসসি) সড়কদ্বীপের পাশে বসে খসখস করে সাদা কাগজে কবিতার মতো পঙ্‌ক্তি দুটো লিখে এগিয়ে দেন বিশ্ববিদ্যালয় এক শিক্ষার্থী। খামে মুড়ে ফের তাঁর হাতে দিলে তরুণ শিক্ষার্থী খামের গায়ে লিখে দেন নিজের নাম–ঠিকানা। চিঠিটি সংগ্রহ করে পাশের জনের দিকে আরেকটি সাদা কাগজ বাড়িয়ে ধরতেই সাগ্রহে তিনিও লিখে দেন শুভকামনার বার্তা। এভাবে একটি–দুটি করে করে চিঠির সংগ্রহ গিয়ে দাঁড়ায় পাঁচ হাজারে। স্কুলপড়ুয়া কিশোর–কিশোরী, বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী কিংবা অবসরপ্রাপ্ত বয়সী ক্রিকেটপ্রেমী—এমনই সর্বস্তরের ক্রিকেট অন্তঃপ্রাণ বাঙালির হৃদয় নিংড়ানো আবেগের বার্তা বহন করছে প্রতিটি খাম। ভালোবাসায় মোড়ানো কাগজগুলো খামে মোড়ানো চিঠি হয়ে ইতিমধ্যে পৌঁছে গেছে বিলেতে। যেখানে বিশ্বকাপের মহারণে আমাদের টাইগার দল।

এক ভক্তের পাঠানো শুভেচ্ছাবার্তা
এক ভক্তের পাঠানো শুভেচ্ছাবার্তা

লন্ডনে অবস্থানরত বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের সাবেক ক্রিকেটার শহিদুল আলম পাঁচ হাজার চিঠিসমৃদ্ধ বাক্সটি যখন গ্রহণ করেন, কিছুটা আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েছিলেন কি! দূর প্রবাসে বসে এই পাঁচ হাজার চিঠির মধ্য দিয়ে যেন ষোলো কোটি বাঙালির হৃদয়ের স্পর্শ পাচ্ছিলেন তিনি। হ্যাঁ, একই আবেগ ছুঁয়ে গেছে বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের প্রত্যেক সদস্যকেও। শহিদুল আলম যখন বাক্সটি পৌঁছে দেন টিম ম্যানেজমেন্টের কাছে, ভীষণ উচ্ছ্বসিত হয়ে ওঠেন খালেদ মাহমুদ সুজন কিংবা আকরাম খান। দু-একটি চিঠি খুলে মেলে ধরেন সামনে। কারও কাঁচা হাতে লেখা, কারও–বা মুক্তোর দানার মতো ঝকঝকে অক্ষর। না, অক্ষরের সৌন্দর্য এখানে মুখ্য নয় মোটেও। বরং প্রতিটি লেখায় লেগে আছে প্রেরকের স্বীয় হাতের স্পর্শ, হৃদয়ের ছোঁয়া।

শুভেচ্ছাবার্তা লিখছেন ক্রিকেট অনুরাগীরা। ছবি: সংগৃহীত
শুভেচ্ছাবার্তা লিখছেন ক্রিকেট অনুরাগীরা। ছবি: সংগৃহীত

তথ্যপ্রযুক্তি যখন আমাদের এই স্পর্শগুলো কেড়ে নিচ্ছে, ঠিক এমন একটি সময়ে হাতে লেখা চিঠির সেই নস্টালজিয়া উপহার দেওয়ার উদ্যোগটি নেন একজন ক্রিকেট–মুগ্ধ বাঙালি, রাবেত খান। এবারের বিশ্বকাপে বাংলাদেশ যখন ভালো খেলতে শুরু করে, তখনই চিন্তাটা মাথায় আসে রাবেত খানের। কোনো পৃষ্ঠপোষকের অপেক্ষা নয়, নিজ উদ্যোগেই ভাবনা বাস্তবায়নের ছক কষা শুরু করে দিলেন। নিজের প্রতিষ্ঠান ম্যাকম থেকে সহায়তা পেলেন বটে, তবে বড় সহায়তাটা পেলেন বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে। স্বেচ্ছাসেবার মানসিকতা নিয়ে এগিয়ে এলেন ১৫ থেকে ২০ জন উচ্ছল তরুণ–তরুণী। পরিকল্পনা অনুযায়ী ছোট ছোট দলে ভাগ হয়ে রাজধানীর পাঁচটি গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় ছড়িয়ে পড়লেন তাঁরা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ধানমন্ডি, কলাবাগান কিংবা আবাহনী মাঠ; ক্রিকেটপ্রিয় বিভিন্ন বয়সী মানুষের কাছে গিয়ে পাঁচ হাজার চিঠি সংগ্রহের ডাক হরকরার কাজটি করলেন অত্যন্ত আন্তরিকতায়। রাবেত খান বলেন, ‘ক্রিকেট এবং ক্রিকেটারদের প্রতি বাঙালির আবেগ আর শুভকামনার বার্তাগুলো জড়ো করে চিঠির মাধ্যমে পৌঁছে দেওয়ার ইচ্ছা ছিল। অনেক সময় দেখা যায়, খেলায় হেরে গেলে ক্রিকেটারদের আমরা গালাগালি করি। আমরা মানুষের আবেগকে নাড়া দিয়ে জাগিয়ে দিতে চেয়েছি, যেন এমনটি আর না হয়। জয় কিংবা পরাজয় দুটোই যেন গ্রহণ করতে পারি ভালোবাসার শক্তিতে।’