দক্ষিণ ছাত্রাবাসের ২০৬ নম্বর কক্ষ

ঢাকা কলেজের দক্ষিণ ছাত্রাবাসের এই কক্ষেই এক সময় থাকতেন হুমায়ূন আহমেদ।
ঢাকা কলেজের দক্ষিণ ছাত্রাবাসের এই কক্ষেই এক সময় থাকতেন হুমায়ূন আহমেদ।

১৯৬৫ সাল। বগুড়া জিলা স্কুল থেকে ম্যাট্রিক (এসএসসি) পাস করে হুমায়ূন আহমেদ ভর্তি হলেন ঢাকা কলেজে। থাকার জায়গা হলো দক্ষিণ ছাত্রাবাসের (সাউথ হোস্টেল) ২০৬ নম্বর কক্ষে।

আমার আপন আঁধার বইয়ে হুমায়ূন লিখেছেন, ‘১৯৬৫ সাল—একটা স্যুটকেস এবং “হোল্ডঅল” নামক বস্তুতে লেপ-তোশক ভরে ঢাকা কলেজের সাউথ হোস্টেলের বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছি। আজ আমাকে সিট দেওয়া হবে। একটু ভয় ভয় লাগছে। সুপারের রুমে ডাক পড়ল। সুপার একবারও আমার দিকে না তাকিয়ে বললেন, ২০৬ নম্বর রুম। জানালার কাছের সিট। আমি ৪৮ টাকা দিয়ে ঢাকা কলেজের সাউথ হোস্টেলে ভর্তি হয়ে গেলাম। আতঙ্কে বুক কাঁপছে। মনে হচ্ছে জেলখানা। এর আগে কখনো বাবা, মা, ভাইবোন ছেড়ে এত দূরে থাকিনি।’

ঢাকায় তখন হুমায়ূন আহমেদের কোনো আত্মীয়স্বজন নেই। তাঁর ভাষায়, ‘অর্ধেক দামে সিনেমার টিকিট কেনার মতো পয়সাও নেই।’ ফলে সময় কাটানোর জন্য রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে বেড়াতে শুরু করলেন। ঘুরতে ঘুরতেই পরিচয় হলো মুখলেসুর রহমান নামের এক জাদুকরের সঙ্গে। লোকটা জাদু দেখান আর টাকার বিনিময়ে জাদুর কৌশল বলে দেন। বিজ্ঞানের মেধাবী শিক্ষার্থী হুমায়ূন গুরু মানলেন মুখলেসুরকে। গুরুকে ২০ টাকা দক্ষিণা দিয়ে শিখে ফেললেন জাদুর কয়েকটি কৌশল। তবে পকেটে টান পড়ে গেল তাতে। হুমায়ূন আহমেদ লিখেছেন, ‘হোস্টেলে থাকার জন্য বাসা থেকে সামান্যই টাকা পাই। সেই সামান্য টাকার বড় অংশ চলে যাচ্ছে ম্যাজিকে। আমাকে মিথ্যা করে চিঠি লিখতে হয়, “বই কিনতে হবে, টাকা দরকার। কলম হারিয়ে গেছে, নতুন কলম দরকার।”’

মুশকিলে পড়লেও বন্ধুমহলে ‘ম্যাজিশিয়ান’ হিসেবে নামডাক হয়ে গেল। সেটা অব্যাহত ছিল পুরো বিশ্ববিদ্যালয়জীবনেও। আর তারপর? লেখক হুমায়ূন আহমেদকেও তো ‘ম্যাজিশিয়ান’ বলে চেনেন তাঁর ভক্তরা। যেমনটা চেনেন ঢাকা কলেজের দক্ষিণ ছাত্রাবাসের ২০৬ নম্বর কক্ষের বর্তমান বাসিন্দা ইতিহাস বিভাগের শিক্ষার্থী কামরুল হাসান, ‘হুমায়ূন আহমেদের মতো ম্যাজিশিয়ান এই কক্ষে থাকতেন, এটা আমাদের জন্য খুব গর্বের ব্যাপার। আগে অবশ্য এ তথ্যটা জানতাম না!’