জনপ্রিয় 'কসাই' জমিলা

চাপাতি দিয়ে ‘মায়ের দোয়া মাংস ভান্ডার’ দোকানে মাংস কাটছেন কসাই জমিলা বেগম (৪৭)। ডিজিটাল পাল্লায় মাংস মেপে টাকা গুনে মাংস তুলে দিচ্ছেন দোকানের বাইরে লাইনে দাঁড়ানো ক্রেতাদের হাতে।

দিনাজপুরের বীরগঞ্জ উপজেলার শেষ সীমান্তে ঝাড়বাড়ি গ্রামের জমিলা প্রায় ২০ বছর ধরে কসাইয়ের তকমা গায়ে লাগিয়ে মাংস বিক্রি করছেন। হাটে গিয়ে গরু কেনা, গরু জবাই করা, মাংস কাটা, ওজন দেওয়াসহ প্রায় সব কাজই করেন তিনি। সপ্তাহের সোমবার বাদে অন্য দিনগুলোতে মাংস বিক্রি করেন। তবে শুক্রবারে মাংস বিক্রি ২০ থেকে ২৫ মণে গিয়ে ঠেকে।  প্রতিদিন গড়ে ৪ থেকে ৫টি গরু জবাই করেন। ক্রেতারা দূরদূরান্ত এমনকি ঠাকুরগাঁও ও নীলফামারী থেকেও আসেন জমিলার দোকানে। জমিলা বললেন, ‘আমি বাজারে না গেলে ক্রেতারা অপেক্ষা করতেই থাকেন।’

খানসামা উপজেলা থেকে মাংস কিনতে আসা আফজাল হোসেন বললেন, প্রায় ১০ বছর ধরে সঠিক ওজন এবং ভালো মাংস পাওয়া যায় বলে জমিলার দোকান থেকে মাংস কেনেন।

জমিলা যেখানে মাংস বিক্রি করেন, সেই  বাজারের মাংস বিক্রেতা আয়নাল হক বললেন, ‘জমিলা ভাবির কারণে এই বাজারটিকে অনেকেই চিনছে। আমাদের ব্যবসাও ভালো হয়। ’

জমিলার কাজে ছেলে জহুরুল ইসলাম (২৮) সহায়তা করেন। ৫ জন কর্মচারীও আছেন।

জমিলা বললেন, হয়তো গরু কিনতে হাঁটে গেছেন, গরু পছন্দও হয়েছে, কিন্তু হাতে টাকা নেই। ব্যবসায়ীরা বাকিতে তিন থেকে চার লাখ টাকার গরু দিয়ে দেন অনেক সময়।

বীরগঞ্জ উপজেলার গড়েয়া বাজারের গরু ব্যবসায়ী হযরত আলী বললেন, ‘ জানি টাকা মাইর যাবে না।’

নিজের দোকানে বসে মাংস কাটছেন জমিলা বেগম।
নিজের দোকানে বসে মাংস কাটছেন জমিলা বেগম।

স্কুলের পড়াশোনা নেই জমিলার। মাত্র ১৫ বছর বয়সে বাবা জাকির হোসেন মেয়েকে বিয়ে দেন বগুড়ার রফিকুল ইসলাম ভান্ডারীর সঙ্গে। তিনিও পেশায় একজন কসাই। প্রথম সন্তানের জন্ম পর্যন্ত ভালোই ছিলেন। কিন্তু পরে স্বামী মাদকাসক্ত হয়ে  ব্যবসাটা লাটে তোলেন। ২০০০ সালের শেষ দিকে স্বামী-সন্তানসহ বীরগঞ্জে বাবার বাড়িতে ফেরত আসেন জমিলা। বাবার সামান্য জমি বিক্রি করে বাজারে একটি দোকানে মাংসের দোকান দেন। ছেলে জহুরুল তখন নবম শ্রেণির ছাত্র। জমিলা আবার যখন অন্তঃসত্ত্বা, তখন স্বামী প্রায় আড়াই লাখ টাকা নিয়ে উধাও হয়ে গেলেন। তালাক হয়ে যায় জমিলার। পাশে দাঁড়ান জমিলার বাবা এবং ছেলে।

বর্তমানে এক ছেলে, ছেলের বউ আর মেয়ে সোহাগীকে (১৪) নিয়ে সুখেই আছেন জমিলা।  ১০ শতক জমিসহ আবাদি জমি কিনেছেন। ৩ রুমের পাকা বাড়ি করেছেন।

জমিলা বললেন, ‘স্বামী চলে গেছে। প্রথম যখন দোকানে বসি, তখন অনেকেই বিরোধিতা করছিল। এলাকার কিছু লোক থানায়, ইউনিয়ন পরিষদে আমার নামে অভিযোগও দিছিল। কয়েকজন আবার পাশেও দাঁড়ায়। এখন মানুষ উৎসাহই বেশি দেয়। ৪০-৫০ টাকা কেজি দরে মাংস বিক্রি করছি, সেই মাংস এখন বিক্রি করি ৫০০ টাকা কেজি দরে।

বীরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইয়ামিন হোসেন বললেন, ‘জমিলাকে সরকারের পক্ষ থেকে জয়িতা পুরস্কারে ভূষিত করা যায় কি না, তা বিবেচনা করব।’