বিয়ে নয়, পড়বে কিশোরী তৃষা

রওশন আরা বেগম ও  তৃষা পারভীন
রওশন আরা বেগম ও তৃষা পারভীন

বিয়ের আসরে মা-বাবার বকুনিতেও কবুল বলেনি স্কুলছাত্রী তৃষা পারভীন (১৩)। নিরুপায় হয়ে বরসহ স্বজনেরা বিয়ের আসর ছেড়ে চলে যান। সেই তৃষার আর বিয়ের ভয় নেই, তার পড়াশোনার দায়িত্ব নিয়ে নিয়েছেন বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রওশন আরা বেগম। সম্প্রতি তৃষাকে তার মা দুর্গাপুরে রওশন আরার বাড়িতে রেখে যান।

তৃষাদের বাড়ি কুষ্টিয়ার কুমারখালীর নন্দলালপুর ইউনিয়নের এলঙ্গী রেলপাড়া (রেললাইনের ধারে) এলাকায়। তৃষার বাবা আবদুস সালাম বাদাম বিক্রি করেন। মা নাগরী খাতুন গৃহিণী। মা-বাবা তৃষাকে অল্প বয়সে বিয়ে দিতে চাইলেও সে পড়াশোনা করতে চায়।  কুমারখালী শহরের জেএন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী তৃষা দুই বোন ও এক ভাইয়ের মধ্যে সবার বড়। 

গত ১৬ জুন বাড়ি থেকে তৃষাকে নন্দলালপুর ইউনিয়নের ভবানীপুর গ্রামে চাচার বাড়িতে নিয়ে রাতেই জোর করে বিয়ের আয়োজন করা হয়। তখন তৃষা কবুল বলেনি। জোর করে বিয়ে দেওয়ার বিষয়টি তৃষার নানি গোপনে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সদস্যদের জানান। পরে রওশন আরা বেগমসহ কয়েকজন তৃষাদের বাড়ি যান।  

তৃষার মা নাগরী খাতুন বললেন, এলাকায় খারাপ স্বভাবের লোকদের ভয়ে দা-বঁটি হাতে নিয়ে বসে থাকতে হয়। তৃষা বড় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ভয়ও বেড়েছে। ছেলেমেয়েদের পড়াশোনাসহ সংসার চালাতে সমস্যা হওয়ায় তৃষাকে বিয়ে দিতে চেয়েছিলেন তাঁরা।

রওশন আরা বেগম বললেন, বাল্যবিবাহের নানান প্রতিবন্ধকতার কথা তুলে ধরলেও তৃষার মা মেয়েকে পড়াশোনা করাতে রাজি হননি। তখন তৃষার পড়াশোনার খরচসহ অন্যান্য খরচ দিতে চাইলেও কাজ হয়নি। একপর্যায়ে তিনি তৃষাকে নিজের বাড়িতে রেখে পড়াশোনা করাতে চাইলে তাতে রাজি হন তৃষার মা। 

রওশন আরা বেগম বললেন, ‘মেয়েটি বিয়ে করতে চায়নি বলে ওর মা-বাবা অনেক মারধর করেছেন। তবুও মেয়েটি কবুল বলেনি। ছাত্রী হিসেবে তৃষা খুব একটা খারাপ না। তাই এ সিদ্ধান্ত নিলাম। ওর একটি নিরাপদ আশ্রয়ও হলো।’