দেশের রেকর্ড ছাড়িয়ে গেলেন অস্ট্রেলিয়ায়

মুহ্‌তাসিম আল ফারাবী। ছবি: ওয়ার্ল্ড কিউবিং অ্যাসোসিয়েশন
মুহ্‌তাসিম আল ফারাবী। ছবি: ওয়ার্ল্ড কিউবিং অ্যাসোসিয়েশন

অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্ন কনভেনশন অ্যান্ড এক্সিবিশন সেন্টারে তখন শুরু হয়েছে ডব্লিউসিএ (ওয়ার্ল্ড কিউব অ্যাসোসিয়েশন) ওয়ার্ল্ড চ্যাম্পিয়নশিপ ২০১৯। টাইমার ক্লক ও রুবিক’স কিউব নিয়ে প্রতিযোগিতার টেবিলে বসে গেছেন বাংলাদেশের মুহ্তাসিম আল ফারাবী। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে কিউবিং প্রতিযোগিতায় এই নিয়ে তিনি পঞ্চমবার অংশ নিলেন, প্রতিবারই রোমাঞ্চ ঘিরে ধরে তাঁকে। নির্ধারিত সময়ে আয়োজকদের প্রতিনিধি এসে কম্পিউটারের পর্দায় ভাসা নিয়ম মেনে ঘুরিয়ে দেন কিউবটি। এভাবে একে একে পাঁচবার কিউব মেলানো হলো। হিসাব-নিকাশ শেষে ফলাফল বের হতেই আনন্দে উচ্ছ্বসিত হয়ে ওঠেন ফারাবী। বাংলাদেশের হয়ে কিউবিংয়ে নতুন দুটি জাতীয় রেকর্ড যুক্ত হয় তাঁর ঝুলিতে। 

১১ থেকে ১৪ জুলাই স্পিডকিউবিং অস্ট্রেলিয়ার উদ্যোগে আয়োজন করা হয় ডব্লিউসিএ ওয়ার্ল্ড চ্যাম্পিয়নশিপ ২০১৯। আয়োজনটির সার্বিক সহায়তায় ছিল রুবিক’স। সারা বিশ্বের ৫২টি দেশ থেকে ৯০৫ জন কিউবার অংশ নেয় এই আয়োজনে। বিশ্বের সব বিখ্যাত কিউবারের পাশাপাশি বাংলাদেশের হয়ে প্রথমবারের মতো এই আয়োজনে অংশ নেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নিউক্লিয়ার প্রকৌশল বিভাগের প্রথম বর্ষের ছাত্র মুহ্তাসিম আল ফারাবী। প্রথমবারে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে তেমন কোনো অর্জন না পেলেও জাতীয় পর্যায়ের দুটি নতুন রেকর্ড গড়েন তিনি। ফারাবী ৬ x ৬ কিউবের (৬টি ব্লকের কিউব) সিঙ্গেল সমাধান করেন ৩ মিনিট ২ সেকেন্ডে, আর স্কয়ার ওয়ান কিউবের সিঙ্গেল সমাধান করেন ২২.৭০ সেকেন্ডে। জাতীয় পর্যায়ে অন্যান্য কিউবারের তুলনায় এটিই সবচেয়ে কম সময়ের রেকর্ড।

২০১৪ সালে কিশোর ম্যাগাজিন কিশোর আলোর পাতায় রুবিক’স কিউব নিয়ে একটি লেখা চোখে পড়ে ফারাবীর। সেখানে সাকিব ইবনে রশিদ নামের আরেক তরুণের ১২ সেকেন্ডে কিউব মেলানোর কথা জানতে পেরে বেশ অবাক হন তিনি। পরদিনই কিউব কিনে ইউটিউব দেখে মেলানো শুরু করেন। শুরুতে অনেক সময় লাগলেও নিয়মিত চর্চার মাধ্যমে দ্রুত সলভ করতে শিখে ফেলেন। নিজের আগ্রহ থেকে যুক্ত হন ফেসবুক ভিত্তিক গ্রুপ কিউবিস্ট বিডি (www.fb.com/groups/cubingbangladesh/) –এর সঙ্গে। সেই সময় থেকেই কাজ করতে শুরু করেন কিউবিং বাংলাদেশ নামের একটি সংগঠনের সঙ্গে। সারা দেশের কিশোর-কিশোরীদের মধ্যে কিউবিং ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য কাজ করে কিউবিং বাংলাদেশ। কিউবিং বাংলাদেশ আয়োজিত মাসিক কিউব আড্ডার মধ্য দিয়ে দেশের বিভিন্ন প্রান্তের কিউবারদের সঙ্গে সখ্য তৈরি হয় ফারাবীর। 

তখন থেকেই দেশের বিভিন্ন কিউব প্রতিযোগিতায় অংশ নিতেন ফারাবী। ২০১৪ সালে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে কিউবিং বাংলাদেশ আয়োজিত কর্মশালা ও প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়া থেকে শুরু হয় তাঁর প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের যাত্রা। এরপর একে একে তাঁর পুরস্কারের ঝুলিতে যুক্ত হতে থাকে নানা অর্জন। ফারাবী বলেন, ‘পড়াশোনার চাপ সামলেই যতটা সম্ভব, ছোট ছোট প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করেছি। পরিবার আর কিউবিং কমিউনিটির মানুষ সব সময় আমাকে অনুপ্রাণিত করেছেন।’ এরই মধ্যে বাংলাদেশ ও ভারতে আয়োজিত চারটি আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়েছেন তিনি। 

ফারাবীর কাছে কিউবিং মানে আনন্দ, মাথা খাটানো, মস্তিষ্কটাকে সচল রাখার খেলা। বন্ধুত্বপূর্ণ এই আয়োজনের মধ্যে সারা বিশ্বের কিউবাররা এক হওয়ার সুযোগ পান। আন্তর্জাতিক মানের এমন আয়োজনে শুধু জাতীয় রেকর্ড নয়, বরং আন্তর্জাতিক রেকর্ডেও বাংলাদেশের কিউবারদের তুলে ধরার স্বপ্ন দেখেন ফারাবী। তাই এখন ২০২০ সালে অনুষ্ঠেয় এশিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপের প্রস্তুতি নিচ্ছেন তিনি।