ফারহাতের 'লীলাবতী'র জগৎ

ফারহাত আহমেদ
ফারহাত আহমেদ

কলেজে পড়া অবস্থায় ২০১২ সালে  ‘ওস্ট্রিয় সারকোমা’ নামের এক জটিল রোগ ধরা পড়ে ফারহাত আহমেদের শরীরে। কিছুদিন পরপরই ভারতের মুম্বাই শহরে ছুটতে হয় চিকিৎসকের কাছে। চলছে ‘কেমো’ থেকে শুরু করে নানা পর্যায়ের চিকিৎসা। তবে থমকে যাননি ফারহাত। চিকিৎসার ভেতরেই চলছে পড়াশোনা। মৌলভীবাজার সরকারি কলেজে প্রাণিবিদ্যায় (সম্মান) শেষ বর্ষের ছাত্রী তিনি।

অসুখের চোখরাঙানি, পড়াশোনার চাপ—সবকিছুকে মেনে নিয়েই ফারহাত আহমেদ নিজের হাতে গয়না তৈরি করেন। সহপাঠী সুবর্ণা আক্তারকে সঙ্গে নিয়ে সেই গয়নার ছবি নিজের ‘লীলাবতী’ নামে ফেসবুক পেজে আপলোড করেন। তারপর বিক্রি হয়ে যাচ্ছে সেসব গয়না। মৌলভীবাজার শহরের মেয়ে ফারহাত তিন বোনের মধ্যে দ্বিতীয়। বাবা ব্যাংকার জহির উদ্দিন আহমেদ অবসর নিয়েছেন।

 ফারহাত আহমেদ বললেন, ফেসবুকে অন্যান্য পেজ এবং অন্যদের তৈরি পণ্য দেখে আগ্রহ জাগে। গয়না বানানোর অভ্যাস আগে থেকেই ছিল। ২০১৬ সালে ‘লীলাবতী’ নামের পেজ খুলে ব্যবসা শুরু । সাতরং নামে একটি প্রতিষ্ঠানের হস্তশিল্প প্রদর্শনীতে অংশ নিয়ে প্রথম স্থান অর্জনের পর আগ্রহ আর আত্মবিশ্বাস বাড়ে।

 গায়েহলুদের গয়না, বিভিন্ন উৎসবে ক্রেতারা শাড়ির সঙ্গে মিল রেখেও গয়নার অর্ডার দেন। বর্তমানে ফারহাতের বানানো গয়না দেশের বাইরে যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডার ক্রেতাদের কাছেও বিক্রি হচ্ছে। সাজসজ্জা করিয়ে দেওয়ার জন্যও ডাক পড়ে ফারহাত ও  সুবর্ণা আক্তারের। কাজের চাপ বাড়লে দুজন সহকর্মী তাঁদের সহযোগিতা করেন। বিভিন্ন মেলা বা প্রদর্শনীতে ফারহাতের তৈরি চটপটির স্বাদে সবাই মুগ্ধ হন।

ফারহাত বললেন, ‘অসুখ আমার কাজে কোনো বাধা সৃষ্টি করতে পারেনি।  চিকিৎসা চলছে। আমি আমার কাজ করে যাচ্ছি। কিছুদিন আগে মুম্বাই গিয়েছিলাম। আবারও কিছুদিনের মধ্যে যাব। কেমো নিলে একটু কষ্ট হয়। আবার সব ঠিকঠাক হয়ে যায়। এইতো আছি।’

ফারহাত যা আয় করছেন, তা জমা রাখছেন।  তবে নিজের আয় করা টাকা দিয়ে আপনজনকে উপহার দিতে পছন্দ করেন। 

অনলাইনে মৌলভীবাজারের আরেক নারী উদ্যোক্তা সোনিয়া মান্নান বললেন, ‘ফারহাতের শারীরিক সমস্যার কথা জানি। অনেক জটিল একটা সময় সে পার করছে। তার এই কাজ আমাকে শক্তি জোগায়। প্রেরণা জোগায়। সাহস দেয়। ওর কাছ থেকে শেখার আছে অনেক কিছু।’