ক্যামেরার জীবন

তিনি তখন স্নাতক দ্বিতীয় বর্ষে পড়তেন। একদিন কুষ্টিয়ার শিলাইদহে ঘুরতে গিয়েছিলেন। মেঘলা আকাশ। কাশবনের ঝোপে সন্ধ্যা নামবে নামবে করছে। টকটকে লাল সূর্যটা অর্ধেক দিগন্তে ঢাকা পড়েছে। এমন সময় সেখান দিয়ে সাইকেল চালিয়ে যাচ্ছিল দুই কিশোর। কী মনে করে সেই মুহূর্তটা মোবাইল ফোনের ক্যামেরায় স্থিরচিত্র বানিয়ে ঘরে ফিরলেন। ছবিটা আপলোড করলেন ফেসবুকে। আর সবাই মন্তব্য করলেন, ‘বাহ, চমৎকার’! অনেকেই ছবিটা শেয়ার করলেন। কিন্তু তখনই প্রথম ক্যাম্পাসের এক বড় আপু ছবিটা শেয়ার করে ব্যক্তিগতভাবে তাঁকে ছবি তুলে যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছিলেন। জীবন মালাকারের গল্পের শুরুটা সেখানেই। 

কুষ্টিয়ার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা বিভাগের স্নাতকোত্তরের ছাত্র জীবন তাঁর আশপাশের জীবনকে দেখেন ক্যামেরার চোখ দিয়ে। আর শৈল্পিকভাবে ধরে রাখেন একেকটা ক্লিকে। ২০১৭ সালের জুলাই মাসের এক চমৎকার দিনে তিনি টিউশনির সব টাকা জড়ো করে তার সঙ্গে ক্যাম্পাসের বন্ধুদের কাছ থেকে ধার করা টাকা যোগ করে কিনে ফেলেন স্বপ্নবন্দী করার যন্ত্র—ক্যামেরা আর কিট লেন্সসহ আরও দুটো লেন্স। 

ছবি তোলা ছাড়াও জীবন বাঁশি বাজাতে পারদর্শী। বাঁশির প্রতি আগ্রহী হওয়ার গল্পটাও বেশ মজার। জীবন বলেন, ‘মিঠুন বৈরাগী নামে আমাদের ক্যাম্পাসের এক বড় ভাই একদিন ফেসবুকে পোস্ট দিলেন, “আমি তো কদিন পরে ক্যাম্পাস থেকে চলেই যাব। আমি চাই আমি চলে যাওয়ার পরও এই ক্যাম্পাসে বাজুক আমার বাঁশির সুর। কেউ বাঁশি শিখতে চাইলে বলিস।” আর আমিও গিয়ে বললাম।’ 

যাঁর ক্যামেরা আছে, সঙ্গে বাঁশিও বাজান—ক্যাম্পাসে তাঁর জনপ্রিয়তা কে ঠেকায়! কিন্তু এসবের সঙ্গে আরেকটি কারণেও অনেক মানুষ তাঁকে চিনত। সেটি সামাজিক কর্মকাণ্ড। জীবনের জবানিতেই শোনা যাক, ‘আমরা তিন বন্ধু মিলে কোথাও আবর্জনা থাকলে নিজেরাই তা পরিষ্কার করি, রক্ত দিই। কেউ যেখানে–সেখানে মূত্র ত্যাগ করতে গেলে তাঁকে উঠিয়ে নিয়ে টয়লেটে ঢোকাই। এভাবে জনসচেতনতা বাড়াতে কাজ করি।’ 

এমনিতে তো বন্ধুদের ছবি তুলে দেনই। তাঁর তোলা ছবি স্থান পেয়েছে ক্যাম্পাসের বার্ষিক ক্যালেন্ডারে। সপ্তম এশিয়ান ইউনিভার্সিটি অব উইমেন ফটো কার্নিভ্যালে তাঁর তোলা ছবি চার হাজার ছবির মধ্যে দ্বিতীয় হয়েছে। তাঁর ছবি দেখে দেশের বড় বড় নির্মাতা, আলোকচিত্রী তাঁকে সাধুবাদ জানিয়েছেন। ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় যে এত সুন্দর, জীবন যদি শখের আলোকচিত্রী না হতেন, তাহলে বোধ হয় অনেকেরই জানা হতো না!