যিনি অমর হতে চান

ফেসবুকে তাঁর কভার ফটোতে লেখা, ‘মুহীউদ্দীন ফাহাদ, যিনি সংগ্রাম করতে জন্মেছেন।’ আসলেই সংগ্রাম করতে জন্মেছেন কি না, সেই গল্পে পরে আসছি। আগে বলে নিই, তিনি রংপুরের কারমাইকেল কলেজ থেকে ফিন্যান্সে স্নাতকের পাট চুকিয়ে স্নাতকোত্তর করছেন। সেই সঙ্গে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে মার্কেটিং বিভাগে আরেকটি স্নাতকোত্তর করছেন। নিজে ছাত্র হওয়া সত্ত্বেও এই দুই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অনেক ছাত্রের শিক্ষক তিনি! 

বুঝিয়ে বলি। ফাহাদের এই যাত্রা শুরু ২০১৬ সাল থেকে। সেবার তিনি বাংলাদেশ সরকারের ‘স্কিলস ফর এমপ্লয়মেন্ট ইনভেস্টমেন্ট’ প্রকল্পের আওতায় গ্রাফিক ডিজাইনের ওপর ছয় মাসের একটা কোর্স করেন। ২০১৭ সালের শুরুর দিকে আরও একটা কোর্স করেন। আর হাতের মুঠোয় ‘বড় গুরু’ ইউটিউব তো ছিলই। ব্যস, নিজেই শুরু করেন ফ্রিল্যান্সিং। ভালো আয় হচ্ছিল, না বললেই নয়। তাই ভাবলেন, তিনি যেমন সফল হয়েছেন, অন্যদেরও তিনি একই রকম সফল দেখতে চান। যেই ভাবা সেই কাজ। ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বরে ‘ইন্সপায়ার্ড আইটি’ নামে নিজের একটা প্রতিষ্ঠান গড়েন। শুরুতে রংপুরের কামারপাড়ায় একটা ছোট্ট কামরা নিয়ে হাঁটি হাঁটি পা পা করে শুরু হয়েছিল এই প্রতিষ্ঠানের পথচলা। আর এখন ইন্সপায়ার্ড আইটিকে ছোটখাটো অফিসই বলা যায়। ছয়জন কর্মচারী আছেন। আর আছেন শতাধিক শিক্ষার্থী। তাঁদের অনেকেই তাঁর কাছ থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে কাজ করছেন। সফলতার মুখও দেখছেন। আর যাঁদের মুখে এখন সফলতার হাসি, তাঁদের অনেকেই এসএসসি, এইচএসসি বা স্নাতক পাস করতে না পেরে হতাশায় ভুগছিলেন। তাঁদের কাছে ‘ফাহাদ ভাই’ বড় অনুপ্রেরণা। 

সম্প্রতি বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ব্যাচকে ইন্টার্নি করার সুযোগ দিয়েছিল তাঁর প্রতিষ্ঠান। সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, প্রতিবছর চালু থাকবে এই কার্যক্রম। অর্থাৎ, প্রতিবছর দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা, অর্থনীতি, ইতিহাস ও সমাজবিজ্ঞানের শিক্ষার্থীরা ডিজিটাল মার্কেটিং ও গ্রাফিকস ডিজাইনের ওপর প্রশিক্ষণ নিতে পারবেন। তা ছাড়া নারী শিক্ষার্থীরা তাঁর প্রতিষ্ঠান থেকে অর্ধেক ফি দিয়ে সম্পূর্ণ কোর্স করতে পারবেন। আর প্রতিবন্ধীদের জন্য ‘ইন্সপায়ার্ড আইটি’র দরজায় সব সময় খোলা। একদম বিনা মূল্যে। 

এভাবেই দিন–রাত এক করে ফাহাদ তাঁর স্বপ্নকে একটু একটু করে পূরণ করছেন আর একটু একটু করে সেই স্বপ্ন ডালপালা মেলছে। সম্প্রতি সেই স্বপ্নে যোগ হয়েছে রংপুর উদ্যোক্তা নেটওয়ার্কের সম্মাননা। কিন্তু সেসব পাশে রেখে কেবল মানুষের ভালোবাসা সঙ্গে নিয়ে অনেকটা পথ যেতে চান। বলেছিলেন, ‘একদিন আমি হয়তো থাকব না। কিন্তু আমার ইন্সপায়ার্ড আইটি থাকবে। আমি যাদের গড়েছি, তারা থাকবে। তারা আবার যাদের প্রতিষ্ঠা করবে, তাদের ভেতরেও আমি বেঁচে থাকব।’