মেখলার হেঁসেলে পরিবারের সবাই কাজ করেন

রুমানা ফেরদৌস মেখলার পরিবার।  ছবি: প্রথম আলো
রুমানা ফেরদৌস মেখলার পরিবার। ছবি: প্রথম আলো

রুমানা ফেরদৌস মেখলার পৃথিবীতে শব্দ খুব ক্ষীণ। তিনি কানে শুনতে পান না। কথা বলতে পারেন। তবে কথা বলার জন্য মানুষের ঠোঁট নাড়ানো দেখতে হয় বা লেখা পড়তে হয়। কথা বলার এ পদ্ধতি তিনি নিজে নিজেই শিখে নিয়েছেন। যোগাযোগের এ প্রতিবন্ধকতায় মেখলা থেমে যাননি। অনলাইন রান্নার উদ্যোগ ‘মেখলার হেঁসেল’ নিয়ে এগিয়ে চলেছেন। 

মেখলার হেঁসেলখ্যাত রুটি, পরোটা আর লুচির জন্য। অন্য খাবারও বিক্রি করেন। খুব অল্প দামে ফ্রোজেন রুটি–পরোটা তৈরি করে ঢাকার নানা এলাকায় ডেলিভারি দেয় মেখলার হেঁশেল।

 রাজধানীর উত্তরায় বাসায় চলে রান্নার আয়োজন। মেখলার ব্যাংকার স্বামী মাহাদী মাহমুদ, স্কুলপড়ুয়া পুত্র স্পর্শ ও স্পন্দন এগিয়ে এসেছেন। ছোট ছেলেকে নিয়ে মেখলা কাজ করেন খাবার বানানোর। খাবার পরিবহনের কাজ করেন স্বামী। আর হিসাবরক্ষকের দায়িত্ব বড় ছেলে স্পর্শের। 

 মেখলা শিক্ষাগত যোগ্যতায় গ্রাফিকস ডিজাইনার। লেখাপড়া করেছেন যুক্তরাষ্ট্রে। দেশে কিছু করতে চান বলে পড়াশোনা শেষে দেশে ফিরে আসেন। তবে ব্যবসার শুরুতে কাঠখড় তো পোড়াতেই হয়েছে। 

মেখলার প্রথম উদ্যোগ ‘বেনিয়াসহকলা’। ছেলেদের নিয়ে মেখলা হাতে বা কম্পিউটার গ্রাফিকসের মাধ্যমে বাচ্চাদের টি-শার্টে ছবি এঁকে তা বিক্রি করতেন মেলায়। মেখলা বলেন, এখান থেকেই ছেলেদের পড়ার খরচ কিছুটা উঠে আসে।

টি-শার্ট বিক্রি হলেও এর পাশাপাশি মেখলা চাচ্ছিলেন ক্যাটারিংয়ের ব্যবসা করতে। কিন্তু কীভাবে শুরু করবেন ঠিক বুঝে উঠতে পারছিলেন না। এক রমজানে বাড়িতে কোনো কাজের লোক ছিল না। নিজে হাতে রুটি বানাতে বানাতে মেখলা ভাবলেন, আচ্ছা, রুটি তো সবার লাগে, আর গৃহকর্মী বা কাজের লোকের সমস্যা তো আছেই। তাহলে এটাই তো একটা ভালো উদ্যোগ হতে পারে! সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে একটি পোস্ট দিলেন। পোস্টের সাড়া মিলল অবিশ্বাস্য! 

মেখলা বললেন, রমজানে এমনও গেছে সপ্তাহে আড়াই হাজার টাকারও রুটি ডেলিভারি দিতে হয়েছে। এমনকি ঈদে যখন সব রেস্টুরেন্ট বন্ধ ছিল তখন অনেকেই অর্ডার দিয়ে খাবার নিয়েছেন। ছোট উদ্যোগ, স্বল্প পরিসরে অনেক কাজ, এগুলো সমস্যা কোনোটাই মেখলাকে একদম ভোগায় না। কারণ, মেখলার পুরো পরিবার নিয়েই এগিয়ে চলছে তাঁর উদ্যোগ। 

মেখলা স্বপ্ন দেখছেন, তাঁর ব্যবসাটা হাঁটি হাঁটি পা পা করে একদিন বড় ব্যবসায় দাঁড়াবে। বললেন, ‘আমরা প্রতিদিন চেষ্টা করছি নতুন কিছু করার। আস্তে আস্তে হয়তো আমাদেরও বড় একটা রান্নাঘর হবে আর আমরাও অনেক বড় করে ব্যবসা করতে পারব।’