কম্পিউটার প্রশিক্ষণ নিয়ে সফল তাঁরা

সাদেকা বেগম। ছবি: জাতীয় মহিলা সংস্থার সৌজন্যে
সাদেকা বেগম। ছবি: জাতীয় মহিলা সংস্থার সৌজন্যে

‘অষ্টম শ্রেণিতে পড়ার সময় একজনের বাসায় গিয়েছিলাম। কম্পিউটার-বিষয়ক লেখা নিয়ে একটি খাতা পড়ছিলাম। সেদিন ওই খাতাটা বাসায় নিয়ে আসতে চেয়েছিলাম, কিন্তু খাতাটি চেয়েও পেলাম না। সেই দিন থেকে প্রতিজ্ঞা করলাম, আমাকে কম্পিউটার সম্পর্কে জানতেই হবে।’

সুনামগঞ্জে ‘আমার ইন্টারনেট আমার আয়’ কর্মসূচির অধীনে প্রশিক্ষণ নেওয়া সাদেকা বেগম বলছিলেন কম্পিউটার শিখতে তাঁর জেদের কথা। প্রশিক্ষণ নিয়ে সাদেকা বর্তমানে সুনামগঞ্জের হাওর-কন্যা ডিজিটাল কম্পিউটার ট্রেনিং সেন্টারের উদ্যোক্তা।

উপার্জন করে স্বাবলম্বী হওয়ার প্রচেষ্টা থেকেই অনলাইনভিত্তিক প্রশিক্ষণ নিয়ে সফল হয়েছেন অনেক নারী। তাঁদের মধ্যে সুনামগঞ্জ এলাকার সাদেকা বেগম, ঝালকাঠির শারমীন আক্তার ও সালমা আক্তার, লালমনিরহাটের ফাতেমা পারভিন ও টাঙ্গাইলের তাসলিমা খাতুন অন্যতম। নিজেরা প্রশিক্ষণ নিয়ে সফল হয়ে তাঁরা এখন স্বপ্ন দেখছেন বড় উদ্যোক্তা হওয়ার। মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের জাতীয় মহিলা সংস্থা ও কমজগৎ টেকনোলজিস মিলে নারীদের তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ে প্রশিক্ষণ ও আয়ের জন্য এ প্রশিক্ষণ দিচ্ছে। এখন পর্যন্ত ৬৪টি জেলার ২ হাজার ৩০৪ জন নারী এ প্রকল্পে প্রশিক্ষণ পেয়েছেন।

সাদেকা নবম শ্রেণিতে প্রায় জেদ করেই কম্পিউটার বিষয়টি নিয়েছিলেন। নিজ চেষ্টায় জামালগঞ্জে একটি প্রাইভেট ট্রেনিং সেন্টার থেকে বেসিক কম্পিউটার সম্পর্কে শেখেন। গত বছরের জানুয়ারিতে নিজেই একটি ট্রেনিং সেন্টার খুলেছেন।

 সাদেকা বললেন, ‘আমি আমার ট্রেনিং সেন্টারে ফ্রিল্যান্সিংয়ের কোর্সগুলো অন্তর্ভুক্ত করেছি। এই বিষয়ে সুনামগঞ্জে আগে কখনো প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়নি। আমি আমার প্রশিক্ষণ সেন্টারের জন্য নিজেই ওয়েবসাইট বানিয়েছি। পাশাপাশি স্থানীয়ভাবে ওয়েবসাইট-সংক্রান্ত অনেক কাজ করছি।’

ঝালকাঠি শারমীন আক্তার এখন অনলাইনে কাজের বাজার ‘ফাইভার’ লেভেল ওয়ান পর্যায়ে কাজ করছেন। প্রতি মাসে তাঁর আয় ৩০০ থেকে ৪০০ ডলার। বরিশাল বিভাগের শ্রেষ্ঠ নারী ফ্রিল্যান্সার পুরস্কার পেয়েছেন তিনি। সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং নিয়ে পুরোদমে ফ্রিল্যান্স করছেন শারমীন।

ঝালকাঠির সালমা আক্তার প্রশিক্ষণ শেষে শুধু ফাইভার মার্কেটপ্লেসে কাজ করেই প্রতি মাসে গড়ে ৩০০ থেকে ৪০০ ডলার আয় করছেন। তিনি সরকারের তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগ থেকে ঝালকাঠির ‘ব্র্যান্ডিং গার্ল’ হিসেবে খেতাব পান। সরকারি বিএম কলেজ থেকে সমাজকর্মে পাস করে জেলা প্রশাসক অফিসে খণ্ডকালীন ডেটা এন্ট্রি অপারেটর হিসেবে কাজ নিয়েছিলেন। ডিজিটাল মার্কেটিং নিয়ে কাজ করে এগিয়ে যাচ্ছেন তিনি।

লালমনিরহাটের ফাতেমার শখ ছিল তাঁর বই প্রকাশ হবে। তাই তিনি শিখেছিলেন কম্পিউটার। উচ্চমাধ্যমিকে পড়ার সময় বই প্রকাশ করতে গিয়ে জানতে পারেন টাকার প্রয়োজন। কিন্তু পরিবারের কাছ থেকে সাহায্য না পেয়ে স্বাবলম্বী হয়ে বই প্রকাশের ইচ্ছা পুষে রাখেন। যোগ দেন ফ্রিল্যান্সিং প্রশিক্ষণে। শিখে ফেলেন গ্রাফিকস ডিজাইনের কাজ। এখন প্রতি মাসে ১০০ ডলারের মতো আয় করছেন তিনি। এখন ফ্রিল্যান্সের পাশাপাশি পোলট্রি খামার নিয়ে এগিয়ে যেতে চান ফাতেমা।

টাঙ্গাইলের তাসলিমা খাতুন ময়মনসিংহ আনন্দ মোহন কলেজ থেকে প্রাণিবিদ্যায় পাস করে চাকরির জন্য বসে না থেকে শুরু করেন গ্রাফিকস ডিজাইনের ওপর প্রশিক্ষণ। ছয় মাসের সেই প্রশিক্ষণ থেকে শিখেছিলেন অনেক কিছু। এই প্রশিক্ষণ শেষে তাসলিমা আপ ওয়ার্ক আর ফাইভারে কাজ শুরু করেন। মাসে ৩০ হাজার টাকার বেশি আয় করেন তিনি। বর্তমানে জাতীয় মহিলা সংস্থার ‘তথ্য আপা’ প্রকল্পে তথ্যসেবা দিচ্ছেন তাসলিমা।