শিক্ষার্থীদের সাফল্যই তাঁর আনন্দ

লুৎফুন্নিছা খানম
লুৎফুন্নিছা খানম

আইপিডিসি-প্রথম আলো প্রিয় শিক্ষক সম্মাননা নিয়ে চট্টগ্রামে ফিরছেন ৬ অক্টোবর। সেই অনুষ্ঠানে উপস্থিত হওয়া আর সম্মাননা পাওয়ার অনুভূতিটা লুৎফুন্নিছা খানমের কাছে বিশেষ কিছু। তাই বললেন, ‘প্রিয় শিক্ষক সম্মাননা আমার জন্য অন্য রকম এক প্রাপ্তি। কারণ, এই সম্মাননা পেয়েছি আমার এক ছাত্রীর আবেদনের ফলে। তাই শিক্ষার্থীদের প্রতি আমার দায়িত্ববোধ আরও বেড়ে গেল।’

লুৎফুন্নিছার শিক্ষক হওয়ার স্বপ্নটা ছিল ছোটবেলার। বাবা প্রকৌশলী এ টি এম নাজির আর মা তাহেরা খানমের মুখে শুনতেন দাদা-দাদির গল্প। দাদা মাওলানা আর দাদি ছিলেন শিক্ষক। সেই থেকে স্বপ্ন দেখতেন দাদির মতো শিক্ষক হওয়ার।

লুৎফুন্নিছা খানমের বেড়ে ওঠা চট্টগ্রাম শহরে। ১৯৮৭ সালে বলুয়ারদিঘী সিটি করপোরেশন বালিকা উচ্চবিদ্যালয় থেকে এসএসসিতে উত্তীর্ণ হন। সে বছরই বিয়ে হয়ে যায় তাঁর। স্বামী মো. শাহাবউল্লাহ উচ্চপদস্থ বেসরকারি চাকুরে। পড়াশোনা শেষ করার ইচ্ছা থাকলেও হঠাৎ থমকে যায়। তবে স্বামীসহ পরিবারের প্রেরণায় আবারও শুরু করেন পড়াশোনা। ১৯৯৪ সালে চট্টগ্রাম কলেজ থেকে উচ্চমাধ্যমিকের গণ্ডি পেরোন। ১৯৯৬ সালে স্নাতক শেষ করেন একই কলেজ থেকে। ১৯৯৮ সালে বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্জন করেন সিইএলপি প্রোগ্রামের সনদ। ১৯৯৯ সালে বিএড ও ২০০১ সালে এমএড শেষে স্বপ্নপূরণের পথে এক ধাপ এগিয়ে যান লুৎফুন্নিছা। অংশ নেন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন পরিচালিত বিদ্যালয়ের শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায়। সব পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে ২০০৪ সালে যোগ দেন শিক্ষকতা পেশায়। বর্তমানে লুৎফুন্নিছা খানম সহকারী শিক্ষক হিসেবে আছেন জামালখান কুসুমকুমারী সিটি করপোরেশন বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ে। ক্লাস নেন ইংরেজি ও আইসিটি বিষয়ের। এই দুটি বিষয়ের মাস্টার ট্রেইনারও তিনি।

চাকরিজীবনের শুরুর দিকে কিছুদিন আলাদা করে ক্লাসের বাইরে শিক্ষার্থীদের পড়াতেন লুৎফুন্নিছা। হঠাৎ তাঁর মনে হয়, এভাবে আলাদা পড়ালে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বৈষম্য করা হয়। সেই ভাবনা থেকে আর কখনোই কোচিং করাননি। যা জানেন, তার সবই ক্লাসে দিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেন। এই চেষ্টাই তাঁকে শিক্ষার্থীদের কাছে জনপ্রিয় করে তোলে।

ছাত্রীদের পড়াশোনার পাশাপাশি বিভিন্ন সহশিক্ষা কার্যক্রমে যুক্ত রাখেন এই শিক্ষক। বিদ্যালয়ের বিতর্কচর্চার দায়িত্ব তাঁর কাঁধে। তিনি ছাত্রীদের নিয়ে নিয়মিত ইংরেজি চর্চার জন্যও কাজ করেন। কুসুমকুমারী বিদ্যালয়ে ছয়জন প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীর দায়িত্ব নিয়েছেন নিজের কাঁধে।

গত ১৫ বছরের শিক্ষকতা জীবনে অর্জনও কম নেই মানুষ গড়ার এই কারিগরের। ২০১৭ সালে কমনওয়েলথ সায়েন্স ক্লাস কমপিটিশন শিরোনামের প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে কুসুমকুমারী বিদ্যালয়ের জন্য এনে দিয়েছিলেন প্রথম হওয়ার গৌরব। নেতৃত্ব দিয়ে বিদ্যালয়কে প্রথম করার সুবাদে যোগ দেন সিঙ্গাপুরে অনুষ্ঠিত রয়েল কমনওয়েলথ বিজ্ঞান কনফারেন্সে।

লুৎফুন্নিছা খানমের দুই মেয়ে, দুই ছেলে। তাঁদের মধ্যে বড় মেয়ে চিকিৎসক আর মেজ ছেলে প্রকৌশলী। ছোট মেয়ে আর ছেলে এখনো পড়াশোনা করছেন। তবে পরিবারের বাইরেও শিক্ষার্থীরা তাঁর পরিবারের সদস্য। সে কারণেই কোনো শিক্ষার্থীর ঝরে পড়া তাঁকে কষ্ট দেয়। আনন্দ পান শিক্ষার্থীদের সাফল্য দেখে।