ক্যামেরার পেছনের চার কন্যা

অনামিকা পাল, নুসরাত নাহার, সুরাইয়া আক্তার, জেরিন সেতু
অনামিকা পাল, নুসরাত নাহার, সুরাইয়া আক্তার, জেরিন সেতু

অনামিকা পাল, নুসরাত নাহার, সুরাইয়া আক্তার, জেরিন সেতু—এই চার কন্যা কাজ করেন ভিডিও জার্নালিস্ট হিসেবে দেশের বিভিন্ন টেলিভিশন চ্যানেলে।

‘আমার বাবার স্বপ্ন ছিল আমি ভিডিও জার্নালিস্ট হই। বাবা জোর করে আমাকে স্ট্যামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিল্ম অ্যান্ড মিডিয়া স্টাডিজে ভর্তি করেন। ২০১৩ সালে বাবা যখন মারা যান, তখন আমি পুরাদস্তুর ভিডিও জার্নালিস্ট,’ বলছিলেন সময় টিভির ভিডিও জার্নালিস্ট নুসরাত নাহার। প্রায় ১০ বছর ধরে দেশের বিভিন্ন সংবাদ চ্যানেলে কাজ করছেন তিনি।

অনামিকা পাল ও সুরাইয়া আক্তারও পড়েছেন স্ট্যামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিল্ম অ্যান্ড মিডিয়া স্টাডিজে। তবে নুসরাতের মতো স্বপ্নময় যাত্রা ছিল না তাঁদের। বাড়ির লোক বা অন্য কেউও বুঝতেন না। প্রশ্ন করতেন, কী হবে এই বিষয়ে পড়াশোনা করে? নাগরিক টিভিতে কর্মরত জেরিন সেতু এই বিষয়ে কাজ করতে এসেছেন একটি ওয়ার্কশপের মাধ্যমে। ক্যারিয়ার বাছাই পরিকল্পনায় তিনি এতই অটল ছিলেন যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিল্ম অ্যান্ড ফটোগ্রাফিতে দুই বছরের মাস্টার্সের কোর্সও করে ফেলেছেন।

সময় টিভিতে কাজ করা সুরাইয়া আক্তার বললেন, ‘ ২০১১ সালে যখন আমি এই ইন্ডাস্ট্রিতে আসি, তখন প্রায় ১০ জন নারী ভিডিও জার্নালিস্ট ছিলেন। কিন্তু কাজ করতে গিয়ে বুঝি, নারী হয়ে এখানে টিকে থাকা খুব কষ্টকর। তাই টিকে আছি শুধু আমরা কয়েকজন।’

ক্যামেরার পেছনে কাজ করা এই নারীরা জানালেন, তাঁরা এমন একটা সময়ে এ কাজে যুক্ত হন, যখন কাজটা ছিল পুরুষদের একার দখলে। তাই নানান কথাও শোনাতেন। তবে সবাই যে বিরোধিতা করেছেন, এমন না; সহযোগিতা পাওয়া গেছে বলেই নারীরা কাজ করতে পারছেন।

যমুনা টিভিতে কাজ করা অনামিকা বললেন, ‘আমাদের সঙ্গে এমন অনেক পুরুষ আছেন, যাঁদের উচ্চতা পাঁচ ফুটের বেশি নয়। একই উচ্চতায় আমাকে এখনো শুনতে হয়—এত বেঁটে মানুষ ক্যামেরা কীভাবে চালাবে?’

‘ক্যামেরা এখনো নারীর হাতে বেমানান ঠেকে সমাজের কাছে, আমরা প্রায়ই সাইড কমেন্ট শুনি—মেয়ে মানুষ আবার ক্যামেরা চালায়?’ বললেন জেরিন।

অনামিকা বললেন, ‘একটা প্রতিবেদন তখনই ভালো হবে, যখন আমরা মানে ক্যামেরার পেছনে যাঁরা থাকি, তাঁরা ভালো কাজ করি। এমনও হয়, কোনো কোনো প্রতিবেদনের মোড় ঘুরে যায় ভিডিও ফুটেজের কারণে।’

নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানে এই নারীরা নিজেদের দক্ষতা দেখাতে পেরেছেন বলেই কাজের ক্ষেত্রে সংঘর্ষপূর্ণ ও দুর্গম জায়গায় সংবাদ কভারের জন্য পাঠাচ্ছে, এমনকি বিভিন্ন প্রশিক্ষণেও অংশ নিতে পারছেন। এই ভিডিওকে ঘিরেই আছে এই চার কন্যার নানান গল্প।