বিজমায়েস্ট্রোস ২০১৯ চ্যাম্পিয়ন বিইউপি

চ্যাম্পিয়ন দলের সঙ্গে অতিথিরা । ছবি: খালেদ সরকার
চ্যাম্পিয়ন দলের সঙ্গে অতিথিরা । ছবি: খালেদ সরকার

উপস্থাপক নাম ঘোষণা করলেন আর বাজনার তালে তালে মঞ্চে প্রবেশ করল বিজমায়েস্ট্রোস ২০১৯-এ শেষ পর্যন্ত টিকে থাকা পাঁচটি দল। চাপা রোমাঞ্চটা প্রতিযোগীদের চোখমুখ দেখেই টের পাওয়া যাচ্ছিল। কেউ তখনো জানে না, শেষ পর্যন্ত বিজয়ীর হাসি হাসবেন বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালসের (বিইউপি) শিক্ষার্থীরা। 

পড়ালেখা শেষ করে পেশাজীবনে প্রবেশের আগেই শিক্ষার্থীরা যেন ব্যবসা পরিচালনার অভিজ্ঞতা অর্জন করতে পারেন, সে লক্ষ্যে ইউনিলিভার আয়োজন করে বিজমায়েস্ট্রোস। এ বছর ছিল প্রতিযোগিতাটির দশম আয়োজন। ৩১ অক্টোবর রাজধানীর রেডিসন ব্লু ঢাকা ওয়াটার গার্ডেনে বিজমায়েস্ট্রোস ২০১৯-এর গ্র্যান্ড ফিনালে অনুষ্ঠিত হয়। এবারের মূল প্রতিপাদ্য ছিল ‘পারপাস লেড, ফিউচার ফিট’। ইউনিলিভারের নামী ব্র্যান্ডগুলোকে কীভাবে সময় ও সমাজের পরিবর্তনের সঙ্গে তাল মিলিয়ে ভবিষ্যতের জন্য তৈরি করা যায়, সেই চ্যালেঞ্জ নিয়ে কাজ করতে হয়েছে অংশগ্রহণকারী দলগুলোকে। 

চূড়ান্ত পর্বে প্রতিযোগীরা বিভিন্ন ক্ষুদ্র খুচরা ব্যবসায়ীর কাছ থেকে সরাসরি বাজারের সার্বিক পরিস্থিতি সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করেন এবং পরবর্তী সময়ে ইউনিলিভার বাংলাদেশের জ্যেষ্ঠ ব্যবস্থাপকদের সাহায্য নিয়ে তাঁদের আইডিয়া বা ভাবনা উপস্থাপন করেন। বিজয়ী যে-ই হোক, অংশগ্রহণকারী তরুণদের আত্মবিশ্বাস যে সবাইকে মুগ্ধ করেছে, তা বোঝা যায় প্রতিযোগিতার অন্যতম বিচারক ইউনিলিভার বাংলাদেশ লিমিটেডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা কেদার লেলের কথায়। তিনি বলেন, ‘আমি অভিভূত। ছেলেমেয়েদের প্রেজেন্টেশন দেখে মনে হলো বাংলাদেশ ওদের হাতে নিরাপদেই আছে।’

গ্র্যান্ড ফিনালের আগে

এ বছর সারা দেশের ১৬টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে ৯৫টি দল প্রতিযোগিতার জন্য নিবন্ধন করেছিল। যাচাই–বাছাইয়ের পর ২০টি দল চলে যায় দ্বিতীয় পর্বে। 

নারীদের অগ্রগতির ক্ষেত্রে বাঁধাধরা মানসিকতা কীভাবে পরিবর্তন করা যায় এবং ইউনিলিভারের বিখ্যাত ব্র্যান্ড লাক্স ও ফেয়ার অ্যান্ড লাভলী কীভাবে এই সামাজিক সমস্যার সমাধান করতে পারে, দ্বিতীয় পর্বে তা নিয়ে কাজ করেছেন প্রতিযোগীরা। তৃতীয় পর্ব ও সেমিফাইনালের বিষয় ছিল আরও চমকপ্রদ। একটি স্বাধীন শৈশব উপভোগের ক্ষেত্রে শিশুদের প্রধান অন্তরায়গুলো কী কী, ইউনিলিভারের ব্র্যান্ড সার্ফ এক্সেল কীভাবে এই সমস্যাগুলো নিয়ে কাজ করতে পারে, সেটাই ছিল মাথা খাটানোর বিষয়। মস্তিষ্কে ঝড় তুলে শেষ পর্যন্ত সমস্যাগুলোর বিভিন্ন সমাধান উপস্থাপন করেন প্রতিযোগীরা।

বিজয়ীর মঞ্চ

গ্র্যান্ড ফিনালের দিনে পাঁচটি দলের প্রেজেন্টেশন শেষে অধীর হয়ে অপেক্ষা করছিলেন সবাই। দর্শকদের মধ্যে চাপা গুঞ্জন। শুধু যে বিজয়ী নির্ধারণ হবে তা নয়, বিজমায়েস্ট্রোস ২০১৯–এর চ্যাম্পিয়ন দল অংশ নেবে আগামী বছর যুক্তরাজ্যের লন্ডনে অনুষ্ঠেয় ইউনিলিভার ফিউচার লিডারস লিগ ২০২০-এ। অতএব বিশ্বমঞ্চে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করবে কোন দল, সেটিও চূড়ান্ত হলো এই প্রতিযোগিতার মাধ্যমে। 

চ্যাম্পিয়ন দল হিসেবে যখন ঘোষণা করা হলো বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালসের টিম নক্সের নাম, দলের তিন সদস্য শোয়েব হোসেন, লাবিব আহসান ও আনিকা রহমানের উল্লাস দেখেই তাঁদের চিনে নিতে কষ্ট হয়নি কারও। আইবিএ-ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সালওয়া ইসলাম, সৈয়দা সিলভানা জাহির ও ফাতেমা নাশরাহের দল উই গট দিস এবং এফবিএস-ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী জিয়াদ আল নোমান, ফারাহ হক ও ফাহমিদ চৌধুরীর দল গোল ডিগারস যথাক্রমে প্রথম রানার্সআপ এবং দ্বিতীয় রানার্সআপের খেতাব অর্জন করে। 

অনুষ্ঠানের এক ফাঁকে কথা হলো বিজমায়েস্ট্রোস ২০১৯–এর অন্যতম বিচারক গ্রামীণফোনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মাইকেল প্যাট্রিক ফলির সঙ্গে। ‘ছেলেমেয়েদের আইডিয়া কি আপনাদের প্রত্যাশা পূরণ করতে পেরেছে?’ প্রশ্নের জবাবে তিনি পাল্টা প্রশ্ন ছুড়ে দিলেন, ‘আপনি তাদের প্রেজেন্টেশন দেখেননি? চমৎকার সব আইডিয়া ছিল! কঠিন সমস্যা কীভাবে সহজভাবে ভেবে সরল-সুন্দর সমাধান করা যায়, সেটাই তারা দেখাতে পেরেছে। আমার প্রত্যাশাকে ছাড়িয়ে গেছে।’ বিচারক প্যানেলে আরও ছিলেন ইউনিলিভার বাংলাদেশ লিমিটেডের কাস্টমার ডেভেলপমেন্ট ডিরেক্টর কে এস এম মিনহাজ এবং এসবিকে টেক ভেঞ্চারস অ্যান্ড এসবিকে ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান সোনিয়া বশির কবির।

এবার গন্তব্য যুক্তরাজ্য

কথা হলো চ্যাম্পিয়ন দলের সঙ্গে। আগামী বছর যারা এই প্রতিযোগিতায় অংশ নেবে, তাদের জন্য এবারের বিজয়ীদের পরামর্শ কী? শোয়েব হোসেন কেন বিজয়ী দলের সদস্য, বোঝা গেল তাঁর কথায়, ‘দেখুন, মানুষের জন্য, মানুষকে নিয়েই তো একটা ব্যবসা দাঁড় করানো হয়। সুতরাং মানুষের সঙ্গে মিশতে হবে। কথা বলতে হবে। তাহলে এমনিতেই মাথায় আইডিয়া আসবে।’ শোয়েবের সঙ্গে লাবিব আহসান যোগ করলেন, ‘আমরা কিন্তু কোনো রুদ্ধদ্বার বৈঠকে বসে আইডিয়া পাইনি। ফিল্ড ওয়ার্ক করতে হয়েছে। ঘুরে ঘুরে দোকানিদের সঙ্গে কথা বলেছি। দেখতাম ক্ষুদ্র দোকানিরাও ভীষণ ব্যস্ত। তাঁদের কথা বলার সময় নেই। এই দিক বিবেচনা করেই আমরা আমাদের আইডিয়া উপস্থাপন করলাম আর চ্যাম্পিয়ন হলাম।’ 

শেষ প্রশ্ন সম্ভবত আনিকা রহমান আঁচ করতে পেরেছিলেন। নিজে থেকেই বললেন, ‘ফিউচার লিডারস লিগে বাংলাদেশের রেকর্ড খুব ভালো। বাংলাদেশ একাধিকবার রানার্সআপ হয়েছে। ২০১৬ সালে আয়মান ভাইয়াদের দল চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল। আমাদের ওপর সবার অনেক প্রত্যাশা। আমরা প্রত্যাশা পূরণের চেষ্টা করব।’